Saturday, October 31, 2015

ভয়াবহ গুনাহ “শির্ক”

বিসমিল্লাহীর রহমানির রহীম
ভয়াবহ গুনাহ “শির্ক”
                                      --------আব্দুল্লাহ


প্রথমেই আলোচনা শুনার আদব ও কুরআন মানার গুরুত্বঃ- ৭:২০৪ + ৩৯:১৮ + ৭:৩ + ২:৩৮-৩৯ #

এবং পূবের আলোচনার ধারাবাহীকতা রক্ষা করা এবং আজকের বিষয়ের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে।  এবং আজকে আলোচনার বিষয় কি ?
 
এক জন মানুষের জান্নাতে যাবার জন্য যেই যোগ্যতা গুলি থাকতে হবে তার মধ্যে প্রধান যোগ্যতা দুটি - ২:৮২ +৮৫:১১ ইত্যাদি এই রকম বহু আয়াত রয়েছে। অর্থাৎ (ইমান + আমাল = জান্নাত) এখানে প্রথম শর্তটি হচ্ছে  ইমান আর দ্বিতীয় শর্তটি  হচ্ছে আমাল ( সলাহ,সিয়াম,হাজ্জ,যাকাত ইত্যাদি) + যত নবী রাসূলের আগমন ঘটেছে  মানব জাতীর জন্য তারা সর্ব প্রথমেই ইমানের দাওয়াত দিয়াছে, কারন এই ইমান এতই গুরুত্ত পূর্ণ যে, আমাদের নবীর সা: এর নবূয়তী হায়াত হচ্ছে ২৩ বছর, তিনি এই ২৩ বছরে ১২ বছর যেই বিষয়টির উপরে মেহনত করেছিলেন তা ছিল ইমানের। কেন এই ইমানের গুরুত্ত এত বেশি? এর উত্তর হচ্ছে সমগ্র আমাল নির্ভর করে এই ইমানের উপর, যেমন অংকের এক (১) ও শূণ্য ০০০ এর মত। যেমনী ভাবে হাজার হাজার শূণ্য এক বিহীন মূল্যহীন ঠিক তেমনী ভাবে ইমান বিহীন শত শত আমালও মূল্যহীন। ইমান দার ব্যাক্তির যত বেশি আমাল থাকবে সেই অনুপাতে তত বেশি মর্যাদা ৪৬:১৯ + কিন্তু আমল কবুলের পূর্ব  শর্ত তাকে ইমানদার হতে হবে। এই ইমানদার হওয়াটা কোন বংশ গত বিষয় নয় যে, কোন মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করলেই সে ইমানদার হয়ে যাবে........। বা কেই দ্বাবি করলেই ইমানদার হয়ে যায় না। ২:৮ + এই ইমান যেমনি ভাবে আনা হয় ঠিক তেমনী ভাবে আবার ইহা নষ্টও হয়ে যায় + আমাদের সবাই জানে কি করলে ওযু, সিয়াম, সলাত ইত্যাদি ন্ষ্ট হয়ে যায়, কিšতু অতি দঃখ্যের সাথে বলতে হয় অধিকাংশ মানুষই জানে না
how to break  Eman  কিভাবে তার ইমান ভেঙ্গে যায়। মনে রাখতে হবে যদি কেই জান্নাতে যেতে চায় তার অবশ্যই ইমান থাকতে হবে। আর এই ইমান যত গুলি কারনে নষ্ট হয়ে যায় তার প্রধান কারন হচ্ছে একটি ভয়াবহ গুনাহ “শির্ক”। 
 
# এই শির্ক করলে কেই আর ইমানদার থাকেনা। সে যতই আল্লাহতে বিশ্বাসী হোকনা কেন। উদাহারন (সাহাবা রা: ও আবুজাহেলের ইমান) + ৬:৮২ + এই কারনেই আল্লাহ শির্ক করতে নিষেধ করেছেন ৪:৩৬ + হা: নবী সা: ও একইভাবে উনার সাহাবীদেরকেও নিষেধ করেছেন + হা মুয়াজ রা: + কারন হচ্ছে ইহা সব চাইতে বড় গুনাহ ৩১:১৩ । 
 
# ক্ষমা নেই ৪:৪৮ + হা: ক্ষমার দরজা (মুসনাদী আহমাদ)+ হা: নবী সা: বলেন আল্লাহ বলেন ‘হে বান্ধা তুমি যদি আমার সাথে পাহাড় পরিমান গুনাহ নিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত্য কর আমি তোমার সাথে অনুরূপ ক্ষমা নিয়ে সাক্ষাত্য করব, (মিশকাত)।    
  
# ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়: :১১৬ + ৪:১৩৬ + ১:৭ + হা: আটার খামির থেকে যেভাবে চুল বের করা হয়......
( নাসাই বা ইবনে মাজাহ) + ২২:৩১। 
 
  #  মুশরিকরা হচ্ছে নাপাক, আর জান্নাত তাদের  জন্য নয় আর যারা শির্ক করে, ৯:২৮ + ৯১: ৯-১০ + ৯৮: ৬ ।    
 
#  জান্নাত হারাম হয়ে যায়: ৪: ৩৬ যেই জান্নাতের জন্য এত আমল করছি সেই জান্নাত: ৫:৭২ + হা:আরবী..... যদি কেই শির্ক করে মৃত্যু বরন করে হবে সে জাহান্নামী (বুখারী) ।      
 
 #  আমল নষ্ট হয়ে যাবে: ৬:৮৩-৮৮ + উদাহারন পরীক্ষার খাতায় + ৩৯:৬৫ + এই আয়াতের দিকে লক্ষ করুন এবং ভাবুন আমাদের অবস্খান কোথায়! + আজকে সবখানেই শুধু আমলের বয়ান + কিন্তু যেই গুনাহটির দ্বরা সব আমল বাতিল হয়ে যাবে তার বেপারে জাতি আজ বরই উদাশীন + কেয়ামতের দিন আমল নামাকে দুলিকনায় পরিনত করে  দিবেন ২৫:২৩ +       
 
 # হাসরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা + হা : আল্লাহ বান্ধাকে ডেকে বলবেন আজ যদি এই পৃথিবী বর্তী সম্পদ তোমাকে দিয়ে দেয়া হয় তমি কি এই জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চাও......(মিশকাত) + সাহাবাগণ রা: প্রশ্ন করলেন হে আল্লাহর রাসূল কেয়ামতের দিন কে সব চাইতে বেশি খুশি বা লাভ বান হবে আপনার সুপারিশ দ্বারা,? উত্তর যে শির্ক মুক্ত মৃত্যু বরণ করেছে। 
 
# জানাজা বা দুয়া’ হারাম: ৯:১১৩ + হা: যদি কোন ব্যক্তির জানাজায় এমন ৪০ জন ব্যক্তি জানাজার সলাত যারা..(মিশকাত)        # বিবাহ হারাম ২: ২২১ + ৬০: ১০ ।
আমাদের অনেকেই মনে করে যে, আমরাতো শির্ক করিনা বা আমাদের দ্বারা শির্কের  কোন গুনাহ হবেনা এটা কাফের বা অন্য ধর্মে লোকদেও জন্য। তার জন্য বলি এই কুরআন কাদের পঠ্য বই? যদি ইহা আমাদের জন্য হয়ে থাকে তবে কেন এর মধ্যে শির্কের এত ভয়াবহতার আলোচনা করা হল?
 
     সর্ব শেষে দুটি হাদীস বলতে চাই,যে শির্ক মুক্ত থাকার ব্যপারে ১) হা: যদি সে চুরি করে, যেনা করে , মদও খায়, (বুখারী) + মুয়াজ রা: বান্ধা ও আল্লাহর হাক্ক কি (বু)
 
    এটাই হচ্ছে জান্নাতে যাওয়ার নূন্য তম যোগ্যতা । যদি এই আলোচনা থেকে কারও শির্ক সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরী হয় হবে তার প্রতি অনুরোধ থাকবে শির্ক ( আরবাব , আলিহা ,আংদাদ , তাগুদ)
 
    হাসরের মাঠে মানুষ আফসোচ করবে হা! যদি শুনতাম ও বিবেক প্রয়োগ করতাম! ৬৭: ৭-১২ + ২৩:১০৫-১০৮।
 
    শেষে আহ্বান ও দুয়া : অতএব সম্মানিত পাঠক মহোদয়ের প্রতি বিনীত আবেদন যে, এই ভয়াবহ গুনাহ থেকে বাচার চেষ্টা করুন। আর এই গুনাহ থেকে বাচতে হলে উপরোক্ত চার প্রকার শিরক অর্থাৎ(আরবার, আলিহা, আংদাদ, তাগুত) সম্পর্কে জানতে হবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।

 


Wednesday, October 21, 2015

মুহাররম ও আশুরার ফজীরত

সূত্র
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

লেখক : মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ | অনুবাদক : ইকবাল হোছাইন মাছুম

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبينا محمد خاتم الأنبياء وسيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين وبعد

মুহররম, একটি মহান বরকতময় মাস। হিজরি সনের প্রথম মাস । এটি ‘আশহুরে হুরুম’ তথা হারামকৃত মাস চতুষ্টয়ের অন্যতম। আশহুরে হুরুম সম্বদ্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ ﴿36﴾[التوبة:36].

নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন জুলুম করো না।{সূরা তাওবা:৩৬}
সাহাবি আবু বাকরাহ রা. নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবীজী বলেন,

{السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ: ثَلاثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ } [رواه البخاري 2958]

বছর হলো বারোটি মাসের সমষ্টি, তার মধ্যে চারটি অতি সম্মানিত। তিনটি পর পর লাগোয়া জিলকদ, জিলহজ ও মুহররম আর (চতুর্থটি হলো) জুমাদাস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী রজব। {বোখারি:২৯৫৮}
মুহররমকে মুহররম বলে অভিহিত করা হয়েছে কারণ এটি অতি সম্মানিত।
আল্লাহর বাণী

فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ

“তোমরা এতে নিজেদের উপর কোনো জুলুম করো না।”
অর্থাৎ, এই সম্মানিত মাস সমূহে তোমরা কোনো অন্যায় করো না। কারণ এ সময়ে সংঘটিত অন্যায় ও অপরাধের পাপ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ও মারাত্মক।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা:) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এই বারো মাসের কোনোটিতেই তোমরা অন্যায় অপরাধে জড়িত হয়ো না। অত:পর তাহতে চারটি মাসকে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করেছেন। তাদেরকে মহা সম্মানে সম্মানিত করেছেন। এসবের মাঝে সংঘটিত অপরাধকে অতি মারাত্মক অপরাধ বলে গণ্য করেছেন। আর তাতে সম্পাদিত নেক আমলকে বেশি সাওয়াব যোগ্য নেক আমল বলে সাব্যস্ত করেছেন।
কাতাদাহ  (রা:) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, যদিও জুলম সব সময়ের জন্য বড় অন্যায় তবে হারাম মাস চতুষ্টয়ে সম্পাদিত জুলুম অন্যান্য সময়ে সম্পাদিত জুলুম হতে অপরাধ ও পাপের দিক থেকে আরও বেশি মারাত্মক অন্যায়। আল্লাহ তাআলা নিজ ইচ্ছা মাফিক যাকে ইচ্ছা বড় করতে পারেন।
তিনি বলেন, মহান আল্লাহ নিজ সৃষ্টি হতে খাঁটি ও উৎকৃষ্টগুলোকে বাছাই করেছেন; ফেরেশতাকুল হতে কতককে রাসূল হিসাবে বাছাই করেছেন অনুরূপ মানুষ থেকেও। কথা হতে বাছাই করেছেন তাঁর জিকিরকে। আর জমিন হতে বাছাই করেছেন মসজিদ সমূহকে। মাসসমূহ থেকে বাছাই করেছেন রমজান ও সম্মানিত মাস চতুষ্টয়কে। দিনসমূহ হতে বাছাই করেছেন জুমুআর দিনকে আর রাত্রসমূহ থেকে লাইলাতুল কদরকে। সুতরাং আল্লাহ যাদের সম্মানিত করেছেন তোমরা তাদের সম্মান প্রদর্শন কর। আর বুদ্ধিমান লোকদের মতে, প্রতিটি বস্তুকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয় মূলত: সেসব জিনিসের মাধ্যমেই যেসব দ্বারা আল্লাহ তাদেরকে সম্মানিত করেছেন। {সার সংক্ষেপ, তাফসির ইবন কাসির, সূরা তাওবা, আয়াত ৩৬}
মুহররম মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজার ফজিলত
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

{ أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ }

অর্থাৎ, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহররম (মাসের রোজা)। { সহিহ মুসলিম,১৯৮২}
شَهْرُ اللَّهِ বাক্যে شَهْر কে اللَّهِ -এর দিকে যে إضافة করা হয়েছে এটি إضافة تعظيم। অর্থাৎ, সম্মানের ইযাফত। আল্লামা ক্বারী রহ. বলেন, হাদিসের বাহ্যিক শব্দমালা থেকে পূর্ণ মাসের রোজা বুঝে আসে। তবে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান ব্যতীত আর কোনো মাসে পূর্ণ মাস রোজা রাখেননি, এটি প্রমাণিত। তাই হাদিসকে এ মাসে বেশি পরিমাণে রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে বলে ধরা হবে।
শা’বান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক রোজা রেখেছেন বলে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হতে পারে মুহররম মাসের ফজিলত সম্বন্ধে তাঁকে একেবারে জীবনের শেষ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে আর তিনি তা বাস্তবায়ন করে যাবার সময় পাননি। {ইমাম নববি, শারহু সহিহ মুসলিম}
আল্লাহ তাআলা স্থান ও কাল যাকে ইচ্ছা মর্যাদা দিয়ে থাকেন
আল্লামা ইজ্জ বিন আব্দুস সালাম রহ. বলেন, স্থান ও কালের একের উপর অপরের মর্যাদা দান দুই প্রকার। এক. পার্থিব। দুই. দ্বীনী, যা আল্লাহর দয়া ও করুণার উপর নির্ভরশীল। তিনি সেসব স্থান বা কালে ইবাদত সম্পন্নকারীদের সাওয়াব বৃদ্ধি করে দিয়ে তাদের উপর করুণা করেন। যেমন, অন্যান্য মাসের রোজার তুলনায় রমজানের রোজার মর্যাদা অনুরূপ আশুরার দিন..। এগুলোর মর্যাদা আল্লাহর দান ও ইহসানের উপর নির্ভরশীল। {কাওয়ায়েদুল আহকাম:১/৩৮}
ইতিহাসে আশুরা
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قال: قدم النبي – صلى الله عليه وسلم – المدينة فرأى اليهود تصوم يوم عاشوراء فقال: { مَا هَذَا قَالُوا هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ، هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ فَصَامَهُ مُوسَى، قال: فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ } [رواه البخاري 1865].

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে। নবীজী বললেন, এটি কি? তারা বলল, এটি একটি ভাল দিন। এ দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে তাদের দুশমনের কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা আ. রোজা পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ বললেন, মুসাকে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অত:পর তিনি রোজা রেখেছেন এবং রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।{বোখারি:১৮৬৫}
বোখারির বর্ণনা,
{ هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ } এটি একটি ভাল দিন।
মুসলিমের বর্ণনায় আছে,

{ هذا يوم عظيم أنجى الله فيه موسى وقومه وغرّق فرعون وقومه }

এটি একটি মহান দিন, আল্লাহ তাআলা তাতে মুসা আ. ও তাঁর কওমকে রক্ষা করেছেন আর ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়কে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন।
বোখারির বর্ণনা,

{ فصامه موسى }

মুসা আ. রোজা পালন করেছেন।
ইমাম মুসলিম তার রেওয়ায়াতে সামান্য বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন,

{ شكراً لله تعالى فنحن نصومه }

আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় স্বরূপ তাই আমরাও রোজা পালন করি।
বোখারির অন্য রেওয়ায়াতে আছে,

{ ونحن نصومه تعظيماً له }

আর আমরা রোজা পালন করি তার সম্মানার্থে।
ইমাম আহমাদ সামান্য বর্ধিতাকারে বর্ণনা করেছেন,

{ وهو اليوم الذي استوت فيه السفينة على الجودي فصامه نوح شكراً }.

এটি সেই দিন যাতে নূহ আ.-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল, তাই নূহ আ. আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ার্থে সেদিন রোজা রেখেছিলেন।
বোখারির বর্ণনা,
{ وأمر بصيامه } এবং রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বোখারির অন্য বর্ণনায় এসেছে,

{ فقال لأصحابه: أنتم أحق بموسى منهم فصوموا }.

তিনি তাঁর সাহাবিদের বললেন, মুসা আ.-কে অনুসরণের ক্ষেত্রে তোমরা তাদের চেয়ে অধিক হকদার। সুতরাং তোমরা রোজা রাখ।
আশুরার রোজা পূর্ব হতেই প্রসিদ্ধ ছিল এমনকি রাসূলুল্লাহর নবুওয়ত প্রাপ্তির পূর্বে জাহেলি যুগেও আরব সমাজে তার প্রচলন ছিল।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, জাহেলি যুগের লোকেরা আশুরাতে রোজা রাখত।..

{ إن أهل الجاهلية كانوا يصومونه }..

জাহেলি যুগের লোকেরা আশুরাতে রোজা রাখত।..
ইমাম কুরতুবি রহ. বলেন, ]
কোরাইশরা আশুরার রোজা প্রসঙ্গে সম্ভবত বিগত শরিয়ত যেমন ইবরাহীম আ.-এর উপর নির্ভর করত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরাত করার পূর্বেই মক্কাতে আশুরার রোজা রাখতেন। হিজরতের পর দেখতে পেলেন মদিনার ইহুদিরা এদিনকে উদযাপন করছে। তিনি কারণ সম্বন্ধে তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা উপরোল্লেখিত উত্তর দিল। তখন নবীজী সাহাবাদেরকে ঈদ-উৎসব উদযাপন প্রসঙ্গে ইহুদিদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দিলেন। যেমন আবু মুসা রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন,

{ كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَعُدُّهُ الْيَهُودُ عِيدًا }

অর্থাৎ, আশুরার দিনকে ইহুদিরা ঈদ হিসাবে গ্রগণ করেছিল।
মুসলিমের রেওয়ায়াতে এসেছে,

{ كان يوم عاشوراء تعظمه اليهود تتخذه عيدا }

আশুরার দিনকে ইহুদিরা বড় করে দেখত (সম্মান করত), একে তারা ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেছিল।
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে,

{ كان أهل خيبر ( اليهود ) يتخذونه عيدا، ويلبسون نساءهم فيه حليهم وشارتهم }.

খায়বর অধিবাসীরা (ইহুদিরা) আশুরার দিনকে ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেছিল। তারা এদিন নিজ স্ত্রীদেরকে নিজস্ব অলঙ্কারাদি ও ব্যাজ পরিধান করাত।
তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বললেন,
{ فَصُومُوهُ أَنْتُمْ }তাহলে তোমরাও রোজা রাখ। {বোখারি}
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে এদিনে রোজা রাখার নির্দেশ দানের আপাত কারণ হচ্ছে, ইহুদিদের বিরোধিতা করা। যেদিন তারা ঈদ উদযাপন করে ইফতার করবে সেদিন মুসলমানগণ রোজা রাখবে। কারণ ঈদের দিন রোজা রাখা হয় না। { সার-সংক্ষেপ, ফাতহুল বারি শারহুল বোখারি, আল্লামা ইবন হাজার আসকালানি}
আশুরার রোজার ফজিলত
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

{ مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلّا هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ }

আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রোজা রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই আশুরার দিন এবং এই মাস অর্থাৎ রমজান মাসের রোজার প্রতি। {বোখারি:১৮৬৭}
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

{ صيام يوم عاشوراء، إني أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله }

আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। {সহিহ মুসলিম:১৯৭৬}
এটি আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর অপার করুণা। তিনি একটি মাত্র দিনের রোজার মাধ্যমে পূর্ণ এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সত্যই মহান আল্লাহ পরম দাতা।
বছরের কোন দিনটি আশুরার দিন
আল্লামা নববি রহ. বলেন, তাসুআ, আশুরা দু’টি মদ্দযুক্ত নাম। অভিধানের গ্রন্থাবলীতে এটিই প্রসিদ্ধ। আমাদের সাথীরা বলেছেন, আশুরা হচ্ছে মুহররম মাসের দশম দিন। আর তাসুআ সে মাসের নবম দিন। জমহুর ওলামারাও তা-ই বলেছেন। হাদিসের আপাতরূপ ও শব্দের প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক চাহিদাও তাই। ভাষাবিদদের নিকট এটিই প্রসিদ্ধ। {আল-মজমূ}
এটি একটি ইসলামি নাম, জাহেলি যুগে পরিচিত ছিল না। {কাশ্শাফুল কান্না’ ২য় খন্ড, সওমুল মুহররম}
ইবনু কোদামাহ রহ. বলেন, আশুরা মুহররম মাসের দশম দিন। এটি সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব ও হাসান বসরি রহ.-এর মত। কারণ আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণনা করেন,

{ أمر رسول الله – صلى الله عليه وسلم – بصوم يوم عاشوراء العاشر من المحرم }.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরা-মুহররমের দশম দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। {বর্ণনায় তিরমিজি, তিনি বলেছেন, হাদিসটি হাসান সহিহ}
আশুরার সাথে তাসুআর রোজাও মুস্তাহাব
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণনা করেন,

{ حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ”. قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ }.

অর্থাৎ, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোজা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও রোজা রাখব ইনশাল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে। {সহিহ মুসলিম:১৯১৪৬}
ইমাম শাফেয়ি ও তাঁর সাথীবৃন্দ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, আশুরার রোজার ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের রোজাই মুস্তাহাব। কেননা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ তারিখ রোজা রেখেছেন এবং নয় তারিখ রোজা রাখার নিয়ত করেছেন।
এরই উপর ভিত্তি করে বলা যায়, আশুরার রোজার কয়েকটি স্তর রয়েছে: সর্ব নিম্ন হচ্ছে কেবল দশ তারিখের রোজা রাখা। এরচে উচ্চ  পর্যায় হচ্ছে তার সাথে নয় তারিখের রোজা রাখা। এমনিভাবে মুহররম মাসে রোজার সংখ্যা যত বেশি হবে মর্যাদা ও ফজিলতও ততই বাড়তে থাকবে।
তাসুআর রোজা মুস্তাহাব হবার হিকমত
ইমাম নববি রহ. বলেন, তাসুআ তথা মুহররমের নয় তারিখ রোজা মুস্তাহাব হবার হিকমত ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে প্রাজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন,
এক. এর উদ্দেশ্য হল, ইহুদিদের বিরোধিতা করা। কারণ তারা কেবল একটি অর্থাৎ দশ তারিখ রোজা রাখত।
দুই. আশুরার দিনে কেবলমাত্র একটি রোজা পালনের অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে তার সাথে অন্য একটি রোজার মাধ্যমে সংযোগ সৃষ্টি করা। যেমনিকরে এককভাবে জুমুআরা দিন রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। এটি আল্লামা খাত্তাবি ও অন্যান্যদের মত।
তিন. দশ তারিখের রোজার ক্ষেত্রে চন্দ্র গণনায় ত্রুটি হয়ে ভুলে পতিত হবার আশংকা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে। হতে পারে গণনায় নয় তারিখ কিন্তু বাস্তবে তা দশ তারিখ।
এর মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী তাৎপর্য হচ্ছে, আহলে কিতাবের বিরোধিতা করা। শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু হাদিসে আহলে কিতাবদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে নিষেধ করেছেন। যেমন আশুরা প্রসঙ্গে নবীজী বলেছেন, { لَئِنْ عِشْتُ إلَى قَابِلٍ لاَصُومَنَّ التَّاسِعَ }আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই নয় তারিখ রোজা রাখব। { আল-ফতোয়াল কোবরা, খন্ড:৬}
আল্লামা ইবন হাজার রহ.

{ لئن بقيت إلى قابل لأصومن التاسع }

আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই নয় তারিখ রোজা রাখব। হাদিসের তালিকে বলেছেন,
নবীজীর নয় তারিখে রোজা রাখার সংকল্প ব্যক্ত করার উদ্দেশ্য কিন্তু এই নয় যে, তিনি কেবল নয় তারিখে রোজার রাখার সংকল্প করেছেন বরং তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে, দশ তারিখের রোজার সাথে নয় তারিখের রোজাকে সংযুক্ত করা। সাবধানতা বশত: কিংবা ইহুদি খ্রিষ্টানদের বিরোধিতার জন্য। এটিই অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মত। সহিহ মুসলিমের কতিপয় বর্ণনা এদিকেই ইংগিত করে। {ফাতহুল বারি:৪/২৪৫}
শুধু দশ তারিখ রোজা রাখার বিধান
শায়খুল ইসলাম বলেন, আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা আর আশুরার একটিমাত্র রোজা মাকরূহ হবে না। {আল-ফাতাওয়াল কোবরা: ৫ম খন্ড}
ইবনু হাজার হায়সামী রচিত তুহফাতুল মুহতাজ গ্রন্থে আছে, আশুরা উপলক্ষে দশ তারিখ কেবল একটি রোজা রাখাতে কোনো দোষ নেই। {তয় খন্ড, বাবু সওমিত তাতাব্বু’}
নির্ধারিত দিনটি শনি কিংবা জুমুআ বার হলেও আশুরার রোজা রাখা হবে
কেবলমাত্র জুমুআর দিনকে নফল রোজার জন্য নির্ধারণ করা মাকরূহ, অনুরূপভাবে ফরজ রোজা ব্যতীত শনিবার রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে নিম্নের যে কোনো পদ্ধতির অনুকূলে রাখা হলে আর মাকরূহ হবে না। যেমন ঐ দুই দিনের সাথে মিলিয়ে আরো একদিন করে  রোজা রাখা। দিনটি অনুমোদিত অভ্যাসের অনুকূলে পড়ে যাওয়া যেমন একদিন রোজা রাখা একদিন ইফতার করা। মান্নত কিংবা কাজার রোজা হওয়া। অথবা শরিয়ত রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছে এমন তারিখে ঐ দিনদ্বয় পড়ে যাওয়া যেমন আরাফা কিংবা আশুরার দিন…।{তুহফাতুল মুহতাজ, ৩য় খন্ড, বাবু সওমিত তাতাব্বু’, মুশকিলুল আছার, ২য় খন্ড, বাবু সওমি য়াওমিস সাবতি}
আল্লামা বাহুতি রহ. বলেন, শুধুমাত্র শনিবারকে রোজা রাখার জন্য নির্ধারণ করা মাকরূহ। কারণ এ প্রসঙ্গে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

{ لا تَصُومُوا يَوْمَ السَّبْتِ إلّا فِيمَا اُفْتُرِضَ عَلَيْكُمْ }

ফরজ রোজা ব্যতীত তোমরা কেবল শনিবার রোজা রাখবে না।{বর্ণনায় আহমাদ ও হাকেম}
তাছাড়া শনিবারকে ইহুদিরা খুব সম্মান করে, অনেক বড় করে দেখে, তাই সেদিন রোজা রাখলে তাদের তাশাব্বুহ তথা সাদৃশ্যাবলম্বন হয়ে যাবে…। তবে শুক্র বা শনিবার যদি কোনো ব্যক্তির অনুস্মৃত অভ্যাসের আওতায় পড়ে যায় তাহলে আর মাকরূহ হবে না। যেমন   এক ব্যক্তি নিয়মিত আরাফা ও আশুরার রোজা পালন করে আর সেই আরাফা কিংবা আশুরার দিন শনি কিংবা শুক্রবার দিন সংঘটিত হল তাহলে সে ব্যক্তির জন্য উক্ত শুক্র কিংবা শনিবার রোজা রাখা মাকরূহ হবে না। কেননা এসব ক্ষেত্রে অভ্যাসকে বিবেচনায় রাখা হয়…। {কাশ্শাফুল কান্না’, ২য় খন্ড, বাবু সওমিত তাতাব্বু’}
মাসের শুরু অস্পষ্ট হয়ে গেলে করণীয় কি?
ইমাম আহমদ রহ. বলেন, মাসের শুরু নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে কিংবা সেটি অস্পষ্ট হয়ে গেলে সে মাসে আশুরার রোজা তিনদিন রাখা হবে। আর এমনটি করা হবে কেবল নয় ও দশ তারিখের রোজাকে নিশ্চিত করার জন্য। {আল-মুগনি লি ইবনে কোদামাহ, ৩য় খন্ড, সিয়ামু আশুরা}
সুতরাং যে ব্যক্তি মুহররম মাসের আগমণ সম্বন্ধে বুঝতে পারেনি এবং সে দশ তারিখের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে ইচ্ছুক তাহলে সে নিয়মমত জিল হজ্জকে ত্রিশ দিন গণনা করবে। অত:পর নয় ও দশ তারিখ রোজা রাখবে। আর যে ব্যক্তি নয় তারিখের ব্যাপারেও সাবধানতা অবলম্বন করতে চাইবে সে আট, নয় ও দশ তারিখ মোট তিন দিন রোজা রাখবে। ( এখন যদি জিল হজ্জ মাস নাকেস অর্থাৎ ত্রিশ দিন থেকে কম হয় তাহলে সে নিশ্চিত তাসুআ ও আশুরার রোজা রাখতে সক্ষম হবে) তবে এখানে মনে রাখা দরকার, আশুরার রোজা কিন্তু মুস্তাহাব ফরজ নয়। তাই লোকদেরকে রমজান ও শাওয়াল মাসের মত মুহররম মাসের চাঁদ তালাশ করার নির্দেশ দেয়া হবে না।
আশুরার রোজা কোন ধরনের পাপের জন্য কাফ্ফারা?
ইমাম নববি রহ. বলেন, আশুরার রোজা সকল সগিরা গুনাহের কাফ্ফারা। অর্থাৎ এ রোজার কারণে মহান আল্লাহ কবিরা নয় বরং (পূর্ববর্তী একবছরের) যাবতীয় সগিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
এর পর তিনি বলেন, আরাফার রোজা দুই বছরের (গুনাহের জন্য) কাফ্ফারা, আশুরার রোজা এক বছরের জন্য কাফ্ফারা, যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে… হাদিসে বর্ণিত এসব গুনাহ মাফের অর্থ হচ্ছে, ব্যক্তির আমলনামায় যদি সগিরা গুনাহ থেকে থাকে তাহলে এসব আমল তার গুনাহের কাফ্ফারা হবে অর্থাৎ আল্লাহ তার সগিরা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর যদি সগিরা-কবিরা কোনো গুনাহই না থাকে তাহলে এসব আমলের কারণে তাকে সাওয়াব দান করা হবে, তার দরজাত বুলন্দ করা হবে। আর আমলনামায় যদি শুধু কবিরা গুনাহ থাকে সগিরা নয় তাহলে আমরা আশা করতে পারি, এসব আমলের কারণে তার কবিরা গুনাহসমূহ হালকা করা হবে। {আল-মাজমূ শারহুল মুহাযযাব, ষষ্ঠ খন্ড, সওমু য়াওমি আরাফা}
শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন, পবিত্রতা অর্জন, সালাত, রমজান, আরাফা ও আশুরার রোজা ইত্যাদি কেবল সগিরা গুনাহসমূহের কাফ্ফারা অর্থাৎ এসব আমলের কারণে কেবল সগিরা গুনাহ ক্ষমা করা হয়। {আল-ফাতাওয়াল কোবরা, ৫ম খন্ড}
রোজার সাওয়াব দেখে প্রতারিত হওয়া চলবে না
আরাফা কিংবা আশুরার রোজার উপর নির্ভর করে অনেক বিভ্রান্ত লোক ধোঁকায় পড়ে যায়। আত্ম প্রতারিত হয়। এমনকি অনেককে বলতে শোনা যায়, আশুরার রোজার কারণে পূর্ণ এক বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে গিয়েছে। বাকি থাকল আরাফার রোজা, তো সেটি সাওয়াবের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করবে।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন, এ আত্ম প্রবঞ্চিত-বিভ্রান্ত লোকটি বুঝল না যে, রমজানের রোজা ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আরাফা ও আশুরার রোজার চেয়ে বহু গুণে বড় ও অধিক সাওয়াব যোগ্য ইবাদত। আর এগুলো মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের জন্য কাফ্ফারা তখনই হয় যদি কবিরা গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। সুতরাং এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান এবং এক জুমুআ থেকে পরবর্তী জুমুআ, মধ্যবর্তী সময়ে কৃত পাপের জন্য কাফ্ফারা তখনই হবে যখন কবিরা গুনাহ ত্যাগ করা হবে। উভয়বিধ কার্য সম্পাদনের মাধ্যমেই কেবল সগিরা গুনাহ মাফ হবে।
আবার কিছু বিভ্রান্ত লোক আছে, যারা ধারণা করে, তাদের নেক আমল বদ আমল থেকে বেশি। কারণ তারা গুনাহের ভিত্তিতে নিজেদের হিসাব নেয় না। এবং পাপাচার গণনায় আনে না। যদি কখনো কোনো নেক আমল সম্পাদন করে তখন কেবল তাই সংরক্ষণ করে। এরা সেসব লোকদের ন্যায় যারা মুখে মুখে ইস্তেগফার করে অথবা দিনে একশত বার তাসবিহ পাঠ করে অত:পর মুসলমানদের গিবত ও সম্মান বিনষ্টের কাজে লেগে যায়। সারা দিন আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কাজে অতিবাহিত করে। এসব লোক তাসবিহ তাহলিলের ফজিলত সম্বন্ধে খুব ফিকির করে। কিন্তু তার মাধ্যমে সংঘটিত অন্যায় ও পাপকর্মের প্রতি মোটেই দৃষ্টিপাত করে না। এটিতো কেবলই ধোঁকা ও আত্ম প্রতারণা। {আল-মওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, খন্ড ১৩, গুরুর}
রমজানের কাজা অনাদায়ি থাকা অবস্থায় আশুরার রোজার হুকুম কি?
রমজানের কাজা আদায় না করে নফল রোজা রাখা যাবে কিনা এ ব্যাপারে ওলামাদের মাঝে এখতেলাফ আছে। হানাফিদের নিকট জায়েয। কেননা রমজানের কাজা  সম্পন্ন করা তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াজিব নয়। বিলম্বে সম্পন্ন করার অবকাশ আছে। শাফেয়ি ও মালেকিদের নিকটও জায়েয তবে মাকরূহ হবে। কারণ এতে ওয়াজিব আদায় বিলম্বিত হয়।
আল্লামা দুসূকি রহ. বলেন, মান্নত, কাজা ও কাফ্ফারা জাতীয় ওয়াজিব রোজা অনাদায়ি রেখে নফল রোজা পালন করা মাকরূহ। সে নফল রোজাটি গাইরে মুআক্কাদাহ হোক কিংবা মুআক্কাদাহ যেমন আশুরা, জিল হজ্জের নয় তারিখের রোজা ইত্যাদি।
হাম্বলি ইমামগণের মতে রমজানের কাজা আদায় করার পূর্বে নফল রোজা পালন করা হারাম। এমতাবস্থায় কেউ নফল রোজা রাখলে সহিহ হবে না এমনকি পরবর্তীতে কাজা আদায় করার মত পর্যাপ্ত সময় থাকলেও। বরং আগে ফরজ আদায় করতে হবে। { আল-মওসুআ আল-ফিকহিয়্যাহ, খন্ড ২৮, সওমুত তাতাব্বু’}
সুতরাং প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে, রমজানের পরপরই বিলম্ব না করে কাজা সম্পন্ন করে নেওয়া। যাতে কোনোরূপ সমস্যা ছাড়াই আরাফা ও আশুরার রোজা পালনের সুযোগ পাওয়া যায়। কেউ যদি আরাফা ও আশুরার রোজায় কাজা আদায়ের নিয়ত করে -এবং এ নিয়ত রাত্র হতেই করে- তাহলে সেটি তার জন্য যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ তার কাজা আদায় হয়ে যাবে। আল্লাহর করুণা অনেক বিশাল।
আশুরায় উদযাপিত কিছু বেদআত
আশুরার দিন লোকেরা সুরমা লাগানো, গোসল করা, মেহেদি লাগানো, মুসাফাহা করা, খিচুড়ি রান্না করা, আনন্দ উৎসবসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে থাকে এ সম্বন্ধে শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. কে প্রশ্ন করা হল, এর কোনো ভিত্তি আছে কি না?
জবাবে তিনি বললেন, এসব অনুষ্ঠানাদি উদযাপন প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ কোনো হাদিস বর্ণিত হয়নি এবং সাহাবাদের থেকেও না। চার ইমামসহ নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমও এসব কাজকে সমর্থন করেননি। কোনো মুহাদ্দিস এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ও সাহাবাদের থেকে কোনো সহিহ কিংবা জয়িফ হাদিসও বর্ণনা করেননি। তাবিয়ীদের থেকেও কোনো আছর পাওয়া যায়নি। পরবর্তী যুগে কেউ কেউ কিছু বানোয়াট ও জাল হাদিস বর্ণনা করেছে যেমন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিন সুরমা লাগাবে সে ব্যক্তি সে বছর থেকে চক্ষুপ্রদাহ রোগে আক্রান্ত হবে না’। ‘ যে ব্যক্তি আশুরার দিন গোসল করবে সে সেই বছর থেকে আর রোগাক্রান্ত হবে না। এরূপ অনেক হাদিস। এরই ধারাবাহিকতায় তারা একটি মওজু হাদিস বর্ণনা করেছে। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালল্লামের প্রতি মিথ্যারোপ ব্যতীত আর কিছুই নয়। হাদিসটি হচ্ছে,
{ أَنَّهُ مَنْ وَسَّعَ عَلَى أَهْلِهِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ سَائِرَ السَّنَةِ }
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আশুরার দিন নিজ পরিবারের উপর উদার হাতে খরচ করবে আল্লাহ তাআলা সারা বছরের জন্য তাকে সচ্ছলতা দান করবেন।
এ ধরণের সবগুলো বর্ণনা মিথ্যা ও জাল।
অত:পর শায়খ উল্লেখ করেছেন, -যার সার সংক্ষেপ হচ্ছে- এ উম্মতের অগ্রজদের উপর যখন সর্ব প্রথম ফেতনা আপতিত হল ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু’র শাহাদাত সঙ্ঘটিত হল। এর কারণে বিভিন্ন দলের লোকেরা কি করল? তিনি বলেন,
তারা জালেম ও জাহেলদের দলে রাপান্তরিত হল। হয়ত মুনাফিক বেদ্বীন নয়ত বিভ্রান্ত বিপথগামী। তাঁর বন্ধুত্ব ও আহলে বাইতের বন্ধুত্ব প্রকাশ করতে লাগল। আশুরার দিনকে রোলবিল, কান্নাকাটি ও শোক দিবস হিসাবে গ্রহণ করল। তাতে তারা বুক ও চেহারা চাপড়ানো, আস্তিন ছেড়াসহ জাহেলি যুগের বিভিন্ন প্রথা প্রকাশ করতে লাগল। বিভিন্ন শোকগাথা যার অধিকাংশই বানোয়াট ও মিথ্যায় পরিপূর্ণ ও গীত আবৃত্তি করতে লাগল। এর ভেতর সত্যের কিছুই নেই আছে শুধু স্বজনপ্রীতি ও মনোকষ্টের নবায়ন। মুসলমানদের পরস্পরে যুদ্ধ ও দুশমনি সৃষ্টির পায়তারা। পূর্ববর্তী পূন্যাত্মা সাহাবিদের গালমন্দ করার উপাদান। মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের অনিষ্টি ও ক্ষতির পরিসংখ্যান কেউ লিখে শেষ করতে পারবে না। তাদের মোকাবেলা করেছে হয়ত আহলে বাইত ও হোসাইন রা. -এর ব্যাপারে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত নাসেবি সম্প্রদায় অথবা একদল জাহেল সম্প্রদায়। যারা ফাসেদের মোকাবেলা করেছে ফাসেদ দিয়ে। মিথ্যার মোকাবেলা মিথ্যার মাধ্যমে, খারাপের জবাব দিয়েছে খারাপ দিয়ে এবং বেদআতের জবাব বেদআতের মাধ্যমে।
ইবনুল হাজ্জ রহ. বলেন, আশুরার বেদআতের আরো একটি হচ্ছে, তাতে জাকাত আদায় করা। বিলম্বিত কিংবা অগ্রীম। মুরগি জবাইর জন্য একে নির্ধারণ করা। নারীদের মেহেদি ব্যবহার করা। {আল-মাদখাল, ১ম খন্ড, য়াওমু আশুরা}
আল্লাহ তাআলা আশুরাসহ যাবতীয় কর্মে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহর আদর্শের পূর্ণ অনুবর্তনের তাওফিক দান করুন।