Sunday, November 22, 2015

আল্লাহ কি নিরাকার?

আল্লাহ কি নিরাকার?
আল্লাহ তাআলার আকার আছে, তিনি নিরাকার নন। নিরাকার অর্থ যা দেখে না, শুনে না। কিন্তু আল্লাহ সবকিছু দেখেন, শোনেন। তিনি এ বিশ্বজাহান ও সমস্ত সৃষ্টির একমাত্র স্রষ্টা, নিয়ন্তা ও পরিচালক। তিনি মানুষকে রিযিক দান করেন, রোগাক্রান্ত করেন ও আরোগ্য দান করেন। সুতরাং তাঁর আকার নেই, একথা স্বীকার করা তাঁর অস্তিত্বকে অস্বীকার করারই নামান্তর।
আল্লাহ শুনেন, দেখেন, উপকার-ক্ষতি, কল্যাণ-অকল্যাণ বিধান করেন। তিনি জীবন-মৃত্যুর মালিক, সকল সমস্যার একমাত্র সমাধানদাতা। সুতরাং মহান আল্লাহ নিরাকার নন; বরং তাঁর আকার আছে।
(১) আল্লাহ বলেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيْعُ البَصِيْرُ. কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা (শূরা ৪২/১১)
(২) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, إِنَّ اللهَ كَانَ سَمِيْعاً بَصِيْراً. নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা (নিসা ৪/৫৮)
(৩) অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘ওটা এজন্য যে, আল্লাহ রাত্রিকে প্রবিষ্ট করেন দিবসের মধ্যে এবং দিবসকে প্রবিষ্ট করেন রাত্রির মধ্যে এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা (হজ্জ ২২/৬১)
(৪) হে নবী! তুমি বল, তারা কত কাল ছিল, আল্লাহই তা ভাল জানেন, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা (কাহফ ১৮/২৬)ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন, ‘সমস্ত সৃষ্টজীবকে আল্লাহ তাআলা দেখেন ও তাদের সকল কথা শুনেন। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না[13]
ক্বাতাদা (রহঃ) বলেন, ‘আল্লাহর থেকে কেউ বেশী দেখেন না ও শুনেন না[14] ইবনু যায়েদ (রহঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা সৃষ্টজীবের সকল কাজকর্ম দেখেন এবং তাদের সকল কথা শুনেন। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা[15]
বাগাবী (রহঃ) বলেন, ‘সমস্ত সৃষ্টজীব যেখানেই থাকুক না কেন আল্লাহ তাআলা তাদের দেখেন এবং তাদের সর্বপ্রকার কথা শ্রবণ করেন। তাঁর দেখার ও শুনার বাইরে কোন কিছুই নেই[16]
(৫) আল্লাহ তাআলা মূসা ও হারূণ (আঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন,  لاَ تَخَافَا إِنَّنِيْ مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَى তোমরা ভয় করো না, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শুনি ও আমি দেখি (ত্ব-হা ২০/৪৬)এখানে আল্লাহ মূসা ও হারূণের সাথে থাকার অর্থ হচ্ছে- তিনি আরশের উপর সমাসীন। আর মূসা ও হারূণ (আঃ)-এর উভয়ের সাথে আল্লাহর সাহায্য রয়েছে এবং তিনি তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করছেন।
(৬) আল্লাহ আরো বলেন, ‘কখনই নয়, অতএব তোমরা উভয়ে আমার নিদর্শন সহ যাও, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শ্রবণকারী (শুআরা ২৬/১৫)পূর্বোক্ত ব্যাখ্যাই এখানে প্রযোজ্য।
(৭) আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও গোপন পরামর্শের খবর রাখি না? অবশ্যই রাখি। আমার ফেরেশতারা তো তাদের নিকট অবস্থান করে সবকিছু লিপিবদ্ধ করেন (যুখরুফ ৪৩/৮০)
(৮) আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! তুমি বলে দাও, তোমরা কাজ করতে থাক, আল্লাহ তো তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করবেন (তওবা ৯/১০৫)
(৯) আল্লাহ বলেন, ‘সে কি অবগত নয় যে, আল্লাহ দেখেন’? (আলাক্ব ৯৬/১৪)
(১০) আল্লাহ বলেন, ‘যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (ছালাতের জন্য) দন্ডায়মান হও এবং দেখেন সিজদাকারীদের সাথে তোমার উঠাবসা। তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ (শুআরা ২৬/২১৮-২২০)
(১১) আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তাদের কথা শ্রবণ করেছেন, যারা বলে যে, আল্লাহ দরিদ্র আর আমরা ধনী। তারা যা বলেছে তা এবং অন্যায়ভাবে তাদের নবীদের হত্যা করার বিষয় আমি লিপিবদ্ধ করব এবং বলব, তোমরা দহন যন্ত্রণা ভোগ কর (আলে ইমরান ৩/১৮১)
(১২) আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ অবশ্যই শুনেছেন সেই নারীর কথা, যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর নিকটও ফরিয়াদ করছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শুনেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা (মুজাদালাহ ৫৮/১)
(১৩) আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছাহাবাদেরকে বলেছিলেন, فَإِنَّكُمْ لاَ تَدْعُوْنَ أَصَمَّ وَلاَ غَائِبًا ، تَدْعُوْنَ سَمِيْعًا بَصِيْرًا قَرِيْبًا. তোমরা বধির কিংবা অনুপস্থিতকে ডাকছ না; বরং তোমরা ডাকছ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা ও নিকটতমকে[17]
(১৪) আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
اِجْتَمَعَ عِنْدَ الْبَيْتِ ثَقَفِيَّانِ وَقُرَشِيٌّ أَوْ قُرَشِيَّانِ وَثَقَفِيٌّ كَثِيْرَةٌ شَحْمُ بُطُوْنِهِمْ قَلِيْلَةٌ فِقْهُ قُلُوْبِهِمْ فَقَالَ أَحَدُهُمْ أَتَرَوْنَ أَنَّ اللهَ يَسْمَعُ مَا نَقُوْلُ قَالَ الْآخَرُ يَسْمَعُ إِنْ جَهَرْنَا وَلاَ يَسْمَعُ إِنْ أَخْفَيْنَا وَقَالَ الْآخَرُ إِنْ كَانَ يَسْمَعُ إِذَا جَهَرْنَا فَإِنَّهُ يَسْمَعُ إِذَا أَخْفَيْنَا فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى : وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ أَنْ يَشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلاَ أَبْصَارُكُمْ وَلاَ جُلُوْدُكُمْ وَنَجَّيْنَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ.
একদিন বায়তুল্লাহর নিকট একত্রিত হল দুজন ছাকাফী ও একজন কুরাইশী অথবা দুজন কুরাইশী ও একজন ছাকাফী। তাদের পেটে চর্বি ছিল বেশি, কিন্তু তাদের অন্তরে বুঝার ক্ষমতা ছিল কম। তাদের একজন বলল, আমরা যা বলছি আল্লাহ তা শুনেন- এ ব্যাপারে তোমার অভিমত কি? দ্বিতীয়জন বলল, আমরা জোরে বললে শুনেন, কিন্তু চুপি চুপি বললে শুনেন না। তৃতীয়জন বলল, যদি তিনি জোরে বললে শুনেন, তাহলে গোপনে বললেও শুনেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করেন, ‘তোমরা কিছু গোপন করতে না এই বিশ্বাসে যে, তোমাদের কর্ণ, চক্ষু এবং ত্বক তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে না- উপরন্তু তোমরা মনে করতে যে, তোমরা যা করতে তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না[18]
(১৫) আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা (হজ্জ ২২/৭৫)
আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘এ আয়াতটিই হচ্ছে জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায়ের বাতিল কথার প্রত্যুত্তর। কেননা জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায় আল্লাহর নাম ও গুণবাচক নাম কোনটাই সাব্যস্ত করে না। সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা যে দেখেন-শুনেন এটাও সাব্যস্ত করে না এ ধারণায় যে, সৃষ্টির সাথে আল্লাহর সাদৃশ্য হবে। তাদের এ ধারণা বাতিল। এজন্য যে, তারা আল্লাহকে মূর্তির সাথে সাদৃশ্য করে দিল। কারণ মূর্তি শুনে না এবং দেখেও না (মাআরিজুল কবূল, ১/৩০০-৩০৪)
মুতাযিলা সম্প্রদায় বলে, আল্লাহর কর্ণ আছে কিন্তু শুনেন না, চক্ষু আছে কিন্তু দেখেন না। এভাবে তারা আল্লাহর সমস্ত গুণকে অস্বীকার করে। অর্থা কোন গুণ-বৈশিষ্ট্য ছাড়া তারা শুধু নামগুলো সাব্যস্ত করে। প্রকৃতপক্ষে তাদের মতবাদ জাহমিয়্যাদের মতবাদের ন্যায়। তাদের উভয় মতবাদই কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। পক্ষান্তরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত কোন কিছুর সাথে তুলনা ব্যতিরেকে আল্লাহর ছিফাত সাব্যস্ত করে ঠিক সেভাবেই, যেভাবে কুরআন-হাদীছ সাব্যস্ত করে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা (শূরা ৪২/১১)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোন সাদৃশ্য স্থির করো না (নাহল ১৬/৭৪)আল্লাহ তাআলা যে শুনেন, দেখেন, এটা কোন সৃষ্টির শুনা, দেখার সাথে তুলনা করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহর দেখা-শুনা তেমন, যেমন তাঁর জন্য শোভা পায়। এ দেখা-শুনা সৃষ্টির দেখা-শুনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়[19]
আল্লাহর সাথে সৃষ্টজীবের সাদৃশ্য করা হারাম। কারণ (১)  আল্লাহর যাত-ছিফাত তথা আল্লাহ তাআলার সত্তা ও গুণ-বৈশিষ্ট্য এবং সৃষ্টজীবের গুণ-বৈশিষ্ট্য এক নয়। প্রত্যেকের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে, সেটা তার জন্যই প্রযোজ্য। আল্লাহ তাআলা সর্বদা জীবিত আছেন ও থাকবেন। কিন্তু সৃষ্টিকুলকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে। তাহলে কি করে আল্লাহর সাথে সৃষ্টজীবের তুলনা করা যায়?
(২) সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য করায় সৃষ্টিকর্তার মান-ইয্যত নষ্ট হয়। ত্রুটিযুক্ত সৃষ্টজীবের সঙ্গে ত্রুটিপূর্ণ মহান আল্লাহকে তুলনা করা হলে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ত্রুটিযুক্ত করা হয়।
(৩) স্রষ্টা ও সৃষ্টজীবের নাম-গুণ আছে। কিন্তু উভয়ের প্রকৃতি এক নয়।
আল্লাহ তাআলার আকার আছে, তিনি নিরাকার নন। তিনি শুনেন, দেখেন এবং তাঁর হাত, পা, চেহারা, চোখ ইত্যাদি আছে।
আল্লাহর হাত :
আল্লাহর আকার আছে, এর অন্যতম প্রমাণ হল তাঁর হাত আছে। এ সম্পর্কে নিম্নে দলীল পেশ করা হল-
(১) মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইহুদীদের একটি বক্তব্য এভাবে তুলে ধরেছেন, وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ يَدُ اللهِ مَغْلُوْلَةٌ غُلَّتْ أَيْدِيْهِمْ وَلُعِنُوْا بِمَا قَالُوْا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتَانِ- আর ইহুদীরা বলে, আল্লাহর হাত রুদ্ধ; তাদের হাতই বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের এ উক্তির দরুণ তাদের প্রতি অভিশাপ করা হয়েছে; বরং তাঁর (আল্লাহর) উভয় হাত প্রসারিত (মায়েদাহ ৬৪)
(২) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ– বরকতময় তিনি, যাঁর হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব, তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান (মুলক ১)
(৩) তিনি আরো বলেন, بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ– আপনারই হাতে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই আপনি সব বিষয়ে ক্ষমতাবান (আলে ইমরান ২৬)
(৪) আল্লাহ তাআলা বলেন, يَدُ اللهِ فَوْقَ أَيْدِيْهِمْ আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর (ফাতহ ১০)
(৫) আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর যথোচিত সম্মান করে না। ক্বিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আকাশ সমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে (যুমার ৬৭)
এ আয়াতের তাফসীরে ছহীহ বুখারীতে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ইহুদীদের একজন বড় আলেম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, يَا مُحَمَّدُ إِنَّا نَجِدُ أَنَّ اللهَ يَجْعَلُ السَّمَوَاتِ عَلَى إِصْبَعٍ وَالْأَرَضِيْنَ عَلَى إِصْبَعٍ وَالشَّجَرَ عَلَى إِصْبَعٍ وَالْمَاءَ وَالثَّرَى عَلَى إِصْبَعٍ وَسَائِرَ الْخَلَائِقِ عَلَى إِصْبَعٍ فَيَقُوْلُ أَنَا الْمَلِكُ، فَضَحِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ تَصْدِيْقًا لِقَوْلِ الْحَبْرِ. হে মুহাম্মাদ! আমরা (তাওরাতে) এটা লিখিত পাচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা সপ্ত আকাশ রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর এবং
* এম.এ (শেষ বর্ষ), দাওয়াহ ও উছূলুদ্দীন অনুষদ, আক্বীদা বিভাগ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।
যমীনগুলো রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর, বৃক্ষরাজিকে রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর এবং পানি ও মাটি রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর, আর সমস্ত মাখলূককে রাখবেন এক আঙ্গুলের উপর। অতঃপর তিনি বলবেন, আমিই সবকিছুর মালিক ও বাদশা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইহুদী আলেমের কথার সত্যতায় হেসে ফেলেন, এমনকি তার মাড়ির দাঁত প্রকাশিত হয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করেন।[20]
(৬) ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ اللهَ يَقْبِضُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْأَرْضَ وَتَكُوْنُ السَّمَاوَاتُ بِيَمِيْنِهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا الْمَلِكُ. আল্লাহ তাআলা ক্বিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবীকে তাঁর মুঠোতে ধারণ করবেন এবং সমস্ত আকাশকে স্বীয় ডান হাতে গুটিয়ে নিয়ে বলবেন, আমিই একমাত্র বাদশাহ[21]
(৭) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ اللهَ تَعَالَى يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لَيِتُوْبَ مُسِئُ النَّهَارِ، وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوْبَ مُسِئُ اللَّيْلِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا-
আল্লাহ তাআলা পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত (ক্বিয়ামত পর্যন্ত) প্রতি রাতে তাঁর হাত প্রসারিত করতে থাকবেন, যাতে করে দিনের গুনাহগার তওবা করে। আর তিনি দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করতে থাকবেন, যাতে করে রাতের গুনাহগার তওবা করে[22]
(৮) শাফাআত সংক্রান্ত হাদীছে আছে, হাশরবাসী আদম (আঃ)-এর কাছে এসে বলবে, يَا أَدَمُ أَنْتَ أَبُو الْبَشَرِ، خَلَقَكَ اللهُ بِيَدِهِ، হে আদম! আপনি মানুষের পিতা। আল্লাহ আপনাকে তাঁর নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন[23]
(৯) আল্লাহ তাআলা বলেন, يَا إِبْلِيْسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ- হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি, তার প্রতি সিজদাবনত হতে তোমাকে কিসে বাধা দিল?’ (ছোয়াদ ৭৫)
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সবাই ঐক্যমত যে, আল্লাহ তাআলার উভয় হাতই প্রকৃত। এখানে সঠিক অর্থ বাদ দিয়ে কুদরতী হাত, অনুগ্রহ, শক্তি এসব অর্থ গ্রহণ করা যাবে না কয়েকটি কারণে। যেমন-
(ক) প্রমাণ ছাড়া প্রকৃত অর্থকে পরিবর্তন করে রূপকার্থ নেয়া বাতিল।
(খ) সূরা ছোয়াদের ৭৫নং আয়াতে হাতের সম্বন্ধ করা হয়েছে আল্লাহর দিকে দ্বিবচনের শব্দ দ্বারা (بصيغة الةثنية)পক্ষান্তরে কুরআন এবং সুন্নাহর কোথাও নেমত ও শক্তির সম্বন্ধ আল্লাহর দিকে দ্বিবচন দ্বারা করা হয়নি। সুতরাং প্রকৃত হাতকে নেমত ও কুদরতী অর্থে ব্যাখ্যা করা শুদ্ধ ও সঠিক নয়।
(১০) আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ قُلُوْبَ بَنِيْ آدَمَ كُلَّهَا بَيْنَ إِصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ الرَّحْمَنِ كَقَلْبٍ وَاحِدٍ يُصَرِّفُهُ حَيْثُ يَشَاءُ.  নিশ্চয়ই  সকল  আদম  সন্তানের  অন্তর সমূহ একটি অন্তরের ন্যায় আল্লাহ তাআলার আঙ্গুল সমূহের দুটি আঙ্গুলের মাঝে অবস্থিত। তিনি যেমন ইচ্ছা তা পরিচালনা করেন[24]
(১১) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
 مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِّنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ وَلاَيَقْبَلُ اللهُ إِلاَّ الطَّيِّبَ، وَإِنَّ اللهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِيْنِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيْهَا لِصَاحِبِهِ كَمَا يُرَبِّيْ أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُوْنَ مِثْلَ الْجَبَلِ-
যে তার হালাল রোযগার থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করবে (আল্লাহ তা কবুল করবেন) এবং আল্লাহ হালাল বস্ত্ত ছাড়া কিছুই গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করবেন। অতঃপর তার দানকারীর জন্য তা প্রতিপালন করতে থাকেন যেরূপ তোমাদের কেউ তার অশ্ব-শাবককে লালন-পালন করতে থাকে। অবশেষে একদিন তা পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়[25]
(১২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, يَقُوْلُ اللهُ يَا آدَمُ فَيَقُوْلُ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ فِيْ يَدَيْكَ قَالَ يَقُوْلُ أَخْرِجْ بَعْثَ النَّارِ- আল্লাহ তাআলা আদম (আঃ)-কে বলবেন, হে আদম! উত্তরে তিনি বলবেন, হাযির হে প্রতিপালক! আমি সৌভাগ্যবান এবং সমস্ত কল্যাণ আপনার হাতে। তিনি বলবেন, জাহান্নামীদেরকে বের করে দাও[26]
আল্লাহর পা :
আল্লাহ তাআলার পা মোবারক সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَيَزَالُ يُلْقَى فِيْهَا وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَّزِيْدٍ حَتَّى يَضَعَ فِيْهَا رَبُّ الْعَالَمِيْنَ قَدَمَهُ فَيَنْزَوِىْ بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ ثُمَّ تَقُوْلُ قَدْ قَدْ بِعِزَّتِكَ وَكَرَمِكَ- জাহান্নামে (জাহান্নামীদের) নিক্ষেপ করা হতে থাকবে আর সে (জাহান্নাম) বলবে, আরো আছে কি? শেষ পর্যন্ত বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক তাতে পা রাখবেন। তাতে জাহান্নামের একাংশের সাথে আরেকাংশ মিশে যাবে। অতঃপর জাহান্নাম বলবে, তোমার প্রতিপত্তি ও মর্যাদার শপথ! যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে[27]
এতদ্ব্যতীত আল্লাহর পদনালীর বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন, يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُوْدِ فَلاَيَسْتَطِيْعُوْنَ- সেদিন পায়ের নলা উন্মোচিত করা হবে এবং তাদেরকে (কাফিরদেরকে) আহবান করা হবে সিজদা করার জন্য কিন্তু তারা তা করতে পারবে না (কলম ৪২)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
يَكْشِفُ رَبُّنَا عَنْ سَاقٍ فَيَسْجُدُ لَهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ وَّمُؤْمِنَةٍ فَيَبْقَى كُلُّ مَنْ كَانَ يَسْجُدُ فِى الدُّنْيَا رِيَاءً وَّسُمْعَةً فَيَذْهَبُ لِيَسْجُدَ فَيَعُوْدُ ظَهْرُهُ طَبَقًا وَّاحِدًا-
‘(ক্বিয়ামতের দিন) আমাদের প্রভু পায়ের নলা উন্মুক্ত করে দিবেন। অতঃপর সকল মুমিন পুরুষ ও নারী তাকে সিজদা করবে। কিন্তু বাকী থাকবে ঐসব লোক, যারা দুনিয়ায় সিজদা করত লোক দেখানো ও প্রচারের জন্য। তারা সিজদা করার জন্য যাবে, কিন্তু তাদের পৃষ্ঠদেশ একখন্ড তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে[28]
আল্লাহর চেহারা :
আল্লাহর চেহারা আছে, যা কুরআন ও হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।
১. আল্লাহ বলেন, فَأَيْنَمَا تُوَلُّوْا فَثَمَّ وَجْهُ اللهِ- তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাও সে দিকেই আল্লাহর মুখমন্ডল রয়েছে (বাক্বারাহ ১১৫)
২. অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ وَّيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُوا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ- ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালনকর্তার চেহারা ব্যতীত (আর-রহমান ২৬-২৭)
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তাআলার মুখমন্ডলের সাথে সৃষ্টির মুখমন্ডলের সাদৃশ্য স্থাপন করা যাবে না।
আল্লাহর চোখ :
আল্লাহ তাআলার আকারের অন্যতম দলীল হচ্ছে তাঁর চক্ষু আছে। এ সম্পর্কে কুরআন-হাদীছ থেকে কতিপয় দলীল পেশ করা হল-
(১) তিনি বলেন, تَجْرِيْ بِأَعْيُنِنَا جَزَاءً لِّمَنْ كَانَ كُفِرَ যা আমার চোখের সামনে চালিত, এটা পুরস্কার তার জন্য, যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল (ক্বামার ১৪)
(২) তিনি আরো বলেন, وَلِتُصْنَعَ عَلَى عَيْنِيْ যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও (ত্ব-হা ৩৯)
(৩) আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ، أَلاَ إِنَّ الْمَسِيْحَ الدَّجَّالَ أَعْوَرُ الْعَيْنِ الْيُمْنَى كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ- নিশ্চয়ই আল্লাহ অন্ধ নন। সাবধান! নিশ্চয়ই দাজ্জালের ডান চোখ কানা। তার চোখটা যে একটি ফুলে যাওয়া আঙ্গুরের মতো[29] সুতরাং কুরআন হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলার প্রকৃতই চোখ আছে। আর এটাকে সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য করা যাবে না।
আল্লাহর হাসি ও আনন্দ :
আল্লাহ তাআলার আনন্দ প্রকাশ ও হাসি সম্পর্কিত বর্ণনা হাদীছে এসেছে। আল্লাহর আনন্দ সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন,
لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحاً بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِيْنَ يَتُوْبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتهِ بِأَرْضٍ فَلاَةٍ، فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فأَيِسَ مِنْهَا، فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِيْ ظِلِّهَا وَقَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ، فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ، فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا، ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الفَرَحِ : اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِيْ وَأَنَا رَبُّكَ! أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الفَرَحِ-
আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার তওবার কারণে ঐ ব্যক্তির চেয়ে অধিক আনন্দিত হন, যে মরুভূমিতে রয়েছে, তার বাহনের উপরে তার খাদ্য-পানীয় রয়েছে, এসবসহ তার বাহনটি পালিয়ে গেল। সে নিরাশ হয়ে একটি গাছের ছায়ায় এসে শুয়ে পড়ল। এভাবে সময় কাটতে লাগল। এমন সময় সে তার পাশেই তাকে দন্ডায়মান দেখে তার লাগাম ধরে ফেলল। অতঃপর অত্যধিক আনন্দে বলে ফেলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার রব। সে আনন্দের আতিশয্যে ভুল করে ফেলে[30]
আল্লাহ তাআলার হাসি সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন,
يَضْحَكُ اللهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى إِلَى رَجُلَيْنِ يَقْتُلُ أَحَدُهُمَا الْآخَرَ يَدْخُلاَنِ الْجَنَّةَ، يُقَاتِلُ هَذَا فِيْ سَبيْلِ اللهِ فَيُقْتَلُ، ثُمَّ يَتُوْبُ اللهُ عَلَى القَاتِلِ فَيُسْتَشْهَدُ–
আল্লাহ তাআলা দুব্যক্তির কর্ম দেখে হাসেন। এদের একজন অপর জনকে হত্যা করে। অবশেষে তারা উভয়ে জান্নাতে প্রবেশ করে। একজন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে নিহত হয়। অতঃপর হত্যাকারী আল্লাহর নিকট তওবা করে। এরপর সে শাহাদতবরণ করে[31]
মুমিনগণের আল্লাহ্কে দেখা :
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা হল- আল্লাহর আকার আছে এবং প্রত্যেক জান্নাতবাসী ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ্কে স্বীয় আকৃতিতে দেখতে পাবে। মহান আল্লাহ বলেন, وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ، إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ، সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে (ক্বিয়ামাহ ২২, ২৩)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফিয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, ঐ দিন এমন হবে যাদের মুখমন্ডলে উজ্জ্বলতা প্রকাশ পাবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে।[32] যেমন ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ عِيَانًا শীঘ্রই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা চাক্ষুসভাবে দেখতে পাবে[33] অন্য হাদীছে এসেছে, লোকেরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ক্বিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উত্তরে বললেন, পূর্ণিমা রাতে চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোন কষ্ট হয়? তারা বলল, না, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি আরো বললেন, যখন আকাশ মেঘশূন্য ও সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকে তখন সূর্য দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হয় কি? উত্তরে তাঁরা বললেন, জ্বী না। তখন তিনি বললেন, এভাবেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে।[34]
ছহীহ মুসলিমে ছুহায়েব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের জন্য আমি আরো কিছু বৃদ্ধি করে দিই তা তোমরা চাও কি? তারা উত্তরে বলবে, আপনি কি আমাদের মুখমন্ডল উজ্জ্বল করেননি, আমাদেরকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করেননি এবং আমাদেরকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করেননি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর পর্দা সরে যাবে। তখন ঐ জান্নাতীদের দৃষ্টি তাদের প্রতিপালকের প্রতি পতিত হবে এবং তাতে তারা যে আনন্দ পাবে তা অন্য কিছুতেই পাবে না। এই দীদারে বারী তাআলাই হবে তাদের নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এটাকেই অতিরিক্ত বলা হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেন, لِلَّذِيْنَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ،  কর্মশীলদের জন্য রয়েছে জান্নাত এবং তার চেয়েও বেশী (ইউনুস ২৬)[35]
যারা আল্লাহ্কে দেখার বিষয়টি অস্বীকার করে তাদের দলীল হল নিম্নোক্ত আয়াত, وَلَمَّا جَاءَ مُوْسَى لِمِيْقَاتِنَا وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ قَالَ رَبِّ أَرِنِىْ أَنْظُرْ إِلَيْكَ، قَالَ لَنْ تَرَاِنِىْ، মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হ, তখন তাঁর প্রতিপালক তাঁর সাথে কথা বললেন, তিনি তখন বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখব, তখন আল্লাহ বললেন, তুমি আমাকে আদৌ দেখতে পাবে না (রাফ ১৪৩)
এখানে আল্লাহ لَنْ تَرَانِىْ দ্বারা না দেখার কথা বলেছেন। আর আরবী ব্যাকরণে لَنْ শব্দটি চিরস্থায়ী অস্বীকৃতি বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। এই আয়াতকে দলীল হিসাবে নিয়ে মুতাযিলা সম্প্রদায় বলে থাকে যে, দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই আল্লাহকে দেখা অসম্ভব। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত মুতাযিলাদের জবাবে বলে থাকেন, এখানে আল্লাহ لَنْ تَرَانِىْ দ্বারা দুনিয়াতে না দেখার কথা বলেছেন, আখিরাতে নয়। কারণ কুরআন-হাদীছের দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ক্বিয়ামতের দিন মুমিন বান্দাগণ আল্লাহকে দেখতে পাবে। মূসা (আঃ) আল্লাহকে দুনিয়াতে দেখতে চেয়েছিলেন। অথচ দুনিয়ার এই চোখ দ্বারা আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়।
আল্লাহ তাআলার আকার সম্পর্কে ইমামগণের মতামত :
(১) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলার ছিফাত-এর সাথে সৃষ্টজীবের ছিফাতকে যেন সাদৃশ্য করা না হয় এবং আল্লাহ তাআলার ছিফাতের মধ্যে দুটি ছিফাত হচ্ছে- তাঁর রাগ ও সন্তুষ্টি। রাগ ও সন্তুষ্টি কেমন একথা যেন না বলা হয়। এটাই হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কথা। তাঁর রাগকে শাস্তি এবং সন্তুষ্টিকে যেন নেকী না বলা হয়। আমরা তাঁর ছিফাত সাব্যস্ত করব। যেমনভাবে তিনি নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন। তিনি একক ও অদ্বিতীয়, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি ও তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি এবং কেউই তাঁর সমকক্ষ নয়। তিনি জীবিত, সবার উপর ক্ষমতাবান। তিনি শুনেন, দেখেন, সব বিষয় তাঁর জানা। আল্লাহর হাত তাদের সবার হাতের উপর। আল্লাহর হাত সৃষ্টির হাতের মত নয় এবং তাঁর মুখমন্ডল সৃষ্টির মুখমন্ডলের মত নয়।[36]
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) আরো বলেন, وله يد ووجه ونفس كما ذكره الله تعالى في القرآن فما ذكره الله تعالى في القرآن من ذكر الوجه واليد والنفس فهو له صفات بلا كيف ولا يقال إن يده قدرته أو نعمته لأن فيه إبطال الصفة وهو قول أهل القدر والاعتزال ولكن يده صفته بلا كيف وغضبه ورضاه صفتان من صفات الله تعالى بلا كيف. তাঁর (আল্লাহর) হাত, মুখমন্ডল এবং নফস রয়েছে। যেমনভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন। কুরআনে আল্লাহ তাঁর মুখমন্ডল, হাত ও নফসের যে কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলো তাঁর গুণ। কিন্তু কারো সাথে সেগুলোর সাদৃশ্য নেই। আর একথা বলা যাবে না যে, তাঁর হাত অর্থ তাঁর কুদরত বা নেমত। কেননা এতে আল্লাহর গুণকে বাতিল সাব্যস্ত করা হয়। আর এটা ক্বাদারিয়া ও মুতাযিলাদের মত। বরং তাঁর হাত তাঁর গুণ কারো হাতের সাথে সাদৃশ্য ব্যতীত। আর তাঁর রাগ ও সন্তুষ্টি কারো রাগ ও সন্তুষ্টির সাথে সাদৃশ্য ব্ ব্্যতীত আল্লাহর দুটি ছিফাত বা গুণ।[37]
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-কে আল্লাহ তাআলার অবতরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা যে রাত্রের তৃতীয় অংশে সপ্ত আকাশে নেমে আসেন, এ নেমে আসাটা কেমন, কিভাবে নামেন, এটা বলার ক্ষমতা কাউকে দেওয়া হয়নি। কেমন করে নামেন এটা আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।[38]
আল্লাহ তাআলার ছিফাতের সাথে মানুষের অর্থা সৃষ্টির গুণের সাদৃশ্য হবে না। যেমন আল্লাহ তাআলা জানেন। কিন্তু সৃষ্টির জানা তাঁর মত নয়। তাঁর ক্ষমতা-শক্তি সৃষ্টির ক্ষমতার মত নয়। তাঁর দেখা-শুনা, কথা বলা, মানুষের বা সৃষ্টির দেখা-শুনা বা কথা বলার মত নয়।[39]
সুতরাং কুরআন-হাদীছে যেভাবে আল্লাহর গুণাবলী বর্ণিত আছে ঠিক সেভাবেই বলতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘তিনি আরশের উপর সমাসীন। সেটাই আমাদেরকে বলতে হবে।
ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, ইমাম মালেককে জিজ্ঞেস করা হয়, আল্লাহ তাআলাকে কি ক্বিয়ামতের দিন দেখা যাবে? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, হ্যাঁ! দেখা যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ، إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ কোন কোন মুখমন্ডল সেদিন উজ্জবল হবে, তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে (ক্বিয়ামাহ ২২-২৩)
সুতরাং আল্লাহ তাআলার আকার আছেন। তিনি নিরাকার নন। কারণ যার আকার আছে তাকেই দর্শন সম্ভব। কিন্তু নিরাকারকে নয়।


[1]. ইমাম আবু হানীফা, আল-ফিক্বহুল আবসাত, পৃঃ ৫১।
[2]. তাফসীর ইবনে কাছীর, ৩য় খন্ড, পৃঃ ২৭৪।
[3]. তাফসীর ইবনে কাছীর, ৮/১২-১৩; ইমাম আহমাদ, আর-রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহ, পৃঃ ৪৯-৫১।
[4]. মাজমূঊ ফাতাওয়া ৫/১৮৮-৮৯।
[5]. মাজমূঊ ফাতাওয়া ৫/১৯১-৯৩।
[6]. তাফসীর ইবনে কাছীর, ৭ম খন্ড, পৃঃ ৫৬০।
[7]. উছমান বিন সাঈদ আদ-দারেমী, আর-রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহ, তাহকীক : বদর বিন আব্দুল্লাহ বদর (কুয়েত : দারু ইবনিল আছীর, ২য় সংস্করণ, ১৯৯৫), পৃঃ ৪৩-৪৪।
[8]. মুসলিম, মিশকাত হা/৬৭ ঈমানঅধ্যায়।
[9]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮ ঈমানঅধ্যায়, ‘কুমন্ত্রণাঅনুচ্ছেদ।
[10]. ইনফিতার ৮২/১০-১২; তাফসীর ইবনে কাছীর, ৭ম খন্ড, পৃঃ ৪০৪।
[11]. আল-কাওয়াইদুল মুছলা ফী ছিফাতিল্লাহি ওয়া আসমায়িহিল হুসনা, পৃঃ ৭০-৭১।
[12]. ঐ।
[13]. তাফসীরে ত্বাবারী, ১৫/২৩২ পৃঃ।
[14]. তাফসীরে ত্বাবারী ১৫/২৩২ পৃঃ।
[15]. তাফসীরে ত্বাবারী ১৫/২৩২।
[16]. মাআলিমুত তানযীল, ৫/১৬৫।
[17]. বুখারী হা/৭৩৮৬ তাওহীদঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯।
[18]. হা-মীম সাজদাহ ৪১/২২; বুখারী হা/৭৫২১ তাওহীদঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪১।
[19].মাআরিজুল কবূল ১/৩০৪।
[20]. বুখারী হা/৪৮১১, ‘তাফসীরঅধ্যায়।
[21]. বুখারী হা/৭৪১২।
[22]. মুসলিম হা/২৭৫৯; ‘তওবাঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫।
[23]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৭২।
[24]. মুসলিম হা/২৬৫৪ ভাগ্যঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩।
[25]. বুখারী, হা/১৪১০ যাকাতঅধ্যায়।
[26]. বুখারী, হা/৩৩৪৮ তাফসীরঅধ্যায়।
[27]. বুখারী হা/৭৩৮৪ তাওহীদঅধ্যায়।
[28]. বুখারী হা/৪৯১৯ তাফসীরঅধ্যায়।
[29]. বুখারী, হা/৩৪৩৯ নবীদের কাহিনীঅধ্যায়।
[30]. মুসলিম, হা/২৭৪৭ তওবাঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১।
[31]. বুখারী, হা/২৮২৬ জিহাদ ও সিয়ারঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৮।
[32]. তাফসীর ইবনে কাছীর, ১৪শখন্ড, পৃঃ ২০০।
[33]. বুখারী হা/৭৪৩৫ তাওহীদঅধ্যায়।
[34]. বুখারী হা/৭৪৩৭ তাওহীদঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৪।
[35]. মুসলিম হা/১৮১ ঈমানঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮০।
[36]. আল-ফিক্বহুল আবসাত্ব, পৃঃ ৫৬।
[37]. আল-ফিক্বহুল আকবার, পৃঃ ৩০২।
[38]. আক্বীদাতুস সালাফ আছহাবুল হাদীছ, পৃঃ ৪২; শারহুল ফিক্বহুল আকবার, পৃঃ ৬০।
[39]. আল-ফিক্বহুল আকবার, পৃঃ ৩০২।



আল্লাহ কি নিরাকার ? ও সর্বত্র বিরাজমান ?? (২য় অংশ)

ইসলাম শিক্ষা
নবম-দশম শ্রেণী
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড, ঢাকা ।

প্রথম অধ্যায়- আকাইদ

প্রথম পরিচ্ছেদ (ক) তাওহীদ: পৃষ্ঠা ২

আল্লাহ-তিনি অদৃশ্য ও নিরাকার অথচ সর্বত্র বিরাজমান । 
উল্লেখিত বইটি ছাত্রদের কচি মনে আল্লাহ সম্পর্কে যে বিশ্বাস বদ্ধমূল করতে চেয়েছে তা হল আল্লাহ নিরাকার এবং তিনি সর্বত্র বিরাজমান । বইটির এই বক্তব্য যে ইসলামতা, প্রমাণ হয় বইটির নামে, আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান কথাটি ইসলামের শিক্ষা হিসাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে । কিন্তু ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা হল আল্লাহ সাকার ও আরশে সমাসীন, তিনি নিরাকার নন এবং সর্বত্র বিরাজমানও নন । 

আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান কথাটি হিন্দু ধর্ম হতে এনে ইসলাম শিক্ষার মধ্যে ঢুকানো হয়েছে । 

নিম্নে তার প্রমাণ দেয়া হল: 
মাধ্যমিক হিন্দু ধর্ম শিক্ষা 
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও টেকস্টবুক, ঢাকা । 
চতুর্থ পাঠ ঈশ্বরবাদ ২৩, ২৪, ২৫ পৃষ্ঠা । 
ব্রহ্ম ঈশ্বর । তিনি এক অদ্বিতীয় । তিনি নিরাকার ও সর্বব্যাপী । বইটিতে হিন্দু ছাত্রদিগকে হিন্দু ধর্ম থেকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, সেটা তাদের ব্যাপার । কিন্তু আমরা দেখছি ইসলাম শিক্ষা বইটিতে কোমলমতি মুসলিম ছাত্রদেরকে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা দেয়া হচ্ছে ইসলাম শিক্ষার নামে । 

ব্রহ্ম ঈশ্বর । তিনি এক অদ্ধিতীয় । তিনি নিরাকার, সর্বব্যাপী । 

এই বইটি হিন্দু ছাত্রদিগকে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা দিয়েছে । অবশ্য হিন্দু ধর্ম শিক্ষার লেখকগণ; ঐ কথাগুলির বরাত বেদ হতে দিয়েছে । কিন্তু ইসলাম শিক্ষার লেখকগণ আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান এই কথাটি কোথায় পেলেন তার কোন বরাত দেননি । এতে প্রমান হয় ইসলাম শিক্ষার লেখকগণ হিন্দু ধর্মের শিক্ষাকে ইসলামের শিক্ষা বলে চালিয়ে দেবার অপচেষ্ট করেছেন । এই অপচেষ্টার কারণ কি ? অন্যদিকে তথাকথিত একদল মুসলমান বলে থাকেন আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান, এ কথাটি একটি খাঁটি মিথ্যা কথা । এ কথার কোন দলিল কুরআন এ হাদীসে নেই । মানুষের আমল বিশুদ্ধ হবার পূর্বশর্ত হল বিশুদ্ধ ঈমান । সূরায়ে নাহল ৯৭, বনি ইসলাইল১৯ । ঈমান বিশুদ্ধ না হলে আমল যতই বিশুদ্ধ হোক তা কবুল হবে না । যেমন- নামাজ বিশুদ্ধ হবার পূর্বশর্ত হল অজু । অজু শুদ্ধ না হলে নামাজ হবে না । ঈমানের মধ্যে সর্বপ্রথম হলো আল্লাহর উপর ঈমান । সেই আল্লাহর উপর ঈমাণ যদি বিশুদ্ধ না হয়, তাহলে অন্যান্য আমল যত বিশুদ্ধ হোক, যেমন নামাজ, রোজা,হজ্জ, যাকাত কোনটাই কবুল হবে না । আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজান কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা । এই বিশ্বাস ঈমানকে কলূষিত করবে, সারাজীবনের আমলকে বরবাদ করবে । তাই আমরা আল্লাহর আকার ও আল্লাহর সম্পর্কে কুরআন ও সহীহ হাদীসের বরতে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম । পাঠক কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষন করলে আমাদিগকে জানালে উপকৃত হব । 

কিছু লোক আছেন যারা আল্লাহর আকার অবিশ্বাস করেন । আল্লাহর আকার আবিশ্বাস করার অর্থ আল্লাহকে অবিশ্বাস করা । সাথে সাথে মনে রাখতে হবে সৃষ্টি জগতে যতকিছু আছে তার কোনটির আকারের সাথে আল্লাহর আকারের সাদৃশ্য নেই । যেমন- আল্লাহ বলেছেন : 

قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنَ الْعَالِينَ

আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল ? তুমি আহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ? [সুরা ছোয়াদ] । 

এখানে আল্লাহ তাঁর হাতের কথা বললেন । মানুষেরও হাত আছে, তাই বলে আল্লাহর হাত মানুষের হাতের মত, এই বিশ্বাস করা যাবে না । এই বিশ্বাস যদি কেউ করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে । বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহর হাত আছে, সেই হাতের তুলনা সৃষ্টি জগতে নেই । যেমন আল্লাহ তেমনই হবে আল্লাহর হাত । তার হাতের সম্পূর্ণ বিবরণ আমাদের জানা নেই । শুধু বিশ্বাস করব যে, আল্লাহর হাত আছে । যদি বিশ্বাস করি আল্লাহর হাত নাই তাহলে কুরআনের ঐ আয়াত অবিশ্বাস করা হয় । আর কুরআনের আয়াত অবিশ্বাস করলে মানুষ কাফের হয়ে যায় । 

কিছু লোক বলে থাকেন আল্লাহ যে হাতের কথা বলেছেন, তা বাস্তব হাত নয়, তা হল কুদরতের হাত । এ কথাটিও মিথ্যা । তাতেও আল্লাহর কুরআন অবিশ্বাস করা হয় । কারণ কুদরতী হাত বললে বাস্তব হাতকে আবিশ্বাস করা হয়, আস্বীকার করা হয়, সুস্থ হাতেই ক্ষমতা বা শক্তি থাকে । যদি বাস্তব হাত বিশ্বাস করা হয় তাহলে হাতের সাথে ক্ষমতা [কুদরত] ও বিশ্বাস করা হয় । কিন্তু যদি কেবল কুদরত [ক্ষমতা ] বিশ্বাস করা হয় তাহলে হাতকে বিশ্বাস করা হয় না । তাই যারা আল্লাহর হাতের অর্থ কুদরাত করেন, তারা বাস্তব হাতকে বিশ্বাস করেন না । আর এটাই হল কুফরী । বিশুদ্ধ বিশ্বাস হল আল্লাহর বাস্তব হাত আছে এবং সে হাতর অসীম ক্ষমতা আছে । 

কুরআনের আয়াতের এরূপ খমখেয়ালী অর্থ সর্ব প্রথম চালু করে জাহাম বিন সাফওয়ান নামক এক ব্যক্তি । সে খোরাসনের তিরমিয অন্চলের অধিবাসী ছিল । এরূপ খামখেয়লী অর্থ করার জন্য ১২০ হিজরীতে আদালত কর্তৃক মৃত্যুদন্ডপ্রপ্ত হয়ে মৃত্যু বরন করেন । তারীখ-তাবারী ৭ম খন্ড, ৩৩০ পৃষ্ঠা ।

বর্তমানে বই পুস্তকে, কুরআনের ভিবিন্ন তাফসীরের এরূপ বহু অর্থ পাওয়া যাচ্ছে । তা সবই বিভ্রান্তিকর । 

আমরা আল্লাহর কিতাব ও রাসুল [সা:] বিশুদ্ধ হাদীস মুতাবেক আল্লাহর আকার সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করছি । আমাদের এই পুস্তকটি পড়ার পর ক্ষেপে যাবেন কেবল তারা, যারা হিন্দুদের ধারণা বিশ্বাস স্থাপন করে আছেন । যারা কুরআন ও হাদীসের মধ্যে নিজেদের বক্তব্য ঢুকিয়ে কুরআন ও হাদীসের বিকৃতি ঘটাতে চান, অথবা আল্লাহর আকার সম্পর্কে অজ্ঞ ও মুর্খ থাকতে চান । অন্যদিকে যারা সস্তা ওয়াজ ও নসীহাত করে মানুষকে হাসিয়ে, কাদিঁয়ে, মিথ্যা কাহিনীর মধ্যমে ওয়াজের ময়দানকে সরগরম করে ফেলে, সেই সকল মিথ্যুক প্রতারক ওয়ায়েজগণ । তবে কুরআন হাদীসের অভিজ্ঞ কোন আলেম যদি আমাদের বর্ণনার ব্যাপারে কোন ভুল ধরতে পেরে থাকেন, তাহলে দলিল প্রমাণ সহ লিখিতভাবে প্রেরণ করলে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনী সংযুক্ত করব ইনশাআল্লাহ । অনুরোধ রইল কেবল মাত্র ভাবাবেগের বশে, বিনা দলিলে, আপন খেয়ালে, কোন বুজুর্গের কথা কষ্ট করে পাঠাবেন না, যারা কুরআনের অর্থ অবগত নয় । কমপক্ষে মেশকাত শরীফও আগাগোড়া পড়েনি । এমনকি ইসলামী আকাইদ সর্ম্পকে একখানা কিতাবও পড়েনি এমন বহু মাদ্রাসার শিক্ষক পীর ও তাবলীগের মুবাল্লিগের সাথে সাক্ষাত করেছি, সাধারণের নিকট বুজুর্গ বলে খ্যাত, কিন্তু ইসলামী জ্ঞানে তারা শূণ্য । এ ধরণের কাট হুজুরদের দলিল বিহীন কোন কথা কষ্ট করে পাঠাবেন না । অতীতের তথাকথিত কোন বুজুর্গের কথাও আমাদের নিকট পাঠাবেন না । কোন আয়াতের অর্থ যদি দ্বিমত পোষন করেন তাহলে প্রথমে আরবী ব্যাকরণ [সারফ, নাহু, বালাগাতের] দৃষ্টে এবং বিশুদ্ধ হাদীসের বরাতে তুলে ধরে পাঠাতে অনুরোধ করছি । হাদীস যেন যয়ীফ না হয়, মউযু না হয় । কোন ব্যাখ্যার বরাত যদি পাঠান তা যেন কোন মুকাল্লিদ ও সুফীর কিতান না হয় । এটাই হল আনুরোধ । যারা আরবী বুঝেন তাদের নিকট অনুরোধ তার যেন ইমাম বায়হাকী [রা:] এর কিতাবখানি পড়েন ও তা প্রচার করেন এবং আমাদের বর্ণনা তাঁর কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখেন । 

শায়খ মুফতী মোহাম্মদ আবদুর রউফ সালাফী
এম, ৪৮, খালিশপুর হাউজিং এস্টেট, খুলনা
চলবে.........................

আল্লাহ কি নিরাকর ? ও সর্বত্র বিরাজমান ?? [৩য় অংশ]


আল্লাহ কি নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান ? 
শায়খ মুফতী মুহাম্মদ আবদুর রউফ সালাফী 
এম, ৪৮ খালিশপুর হাউজিং এস্টেট, খলনা 

আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান কথাটি অসংখ্য লোক বিশ্বাস করে থাকেন । কিন্তু কোরআন ও হাদীসে এমন অসংখ্য প্রমাণ আছে যে, আল্লাহ নিরাকার নন এবং তিনি সর্বত্র বিরাজমানও নন । নীচে সংক্ষেপে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হল:- 

কোরআনের বর্ণনায় আল্লাহর হাত: 
কোরআনের বর্ণনায় আল্লাহ তাঁর হাতের কথা উল্লেখ্য করেছেন । 

قُلْ إِنَّ الْفَضْلَ بِيَدِ اللّهِ 
হে রাসূল বলুন ! ধন-সম্পদ ও সম্মান আল্লাহর হাতে । [আল ইমরান ৭৩] 

فَسُبْحَانَ الَّذِي بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ 

সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর, যাঁর হাতে বিশ্বের সকল বিষয়ের ক্ষমতা । তাঁর নিকট তোমদের সকলকে ফিরে যেতে হবে । 

قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنَ الْعَالِينَ 

আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল ? তুমি আহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ? [সুরা ছোয়াদ] । 

এখানে আল্লাহ তাঁর হাতের কথা বললেন । মানুষেরও হাত আছে, তাই বলে আল্লাহর হাত মানুষের হাতের মত, এই বিশ্বাস করা যাবে না । এই বিশ্বাস যদি কেউ করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে । বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহর হাত আছে, সেই হাতের তুলনা সৃষ্টি জগতে নেই । যেমন আল্লাহ তেমনই হবে আল্লাহর হাত । তার হাতের সম্পূর্ণ বিবরণ আমাদের জানা নেই । শুধু বিশ্বাস করব যে, আল্লাহর হাত আছে । যদি বিশ্বাস করি আল্লাহর হাত নাই তাহলে কুরআনের ঐ আয়াত অবিশ্বাস করা হয় । আর কুরআনের আয়াত অবিশ্বাস করলে মানুষ কাফের হয়ে যায় । 


নফস আরবী শব্দ । এর অর্থ হচ্ছে দেহ । 


يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِن سُوَءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا وَيُحَذِّرُكُمُ اللّهُ نَفْسَهُ وَاللّهُ رَؤُوفُ بِالْعِبَادِ 

সেদিন প্রত্যেকেই যা কিছু ভাল কাজ সে করেছে: চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং যা কিছু মন্দ কাজ সে করেছে তাও । ওরা তখন কামনা করবে, যদি তার ওবং ওসব কর্মের মধ্যে ব্যবধান দুরের হতে ! 
আল্লাহ তোমাদিগকে আপন নফসের ভীতি প্রদর্শন করছেন । আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু । [আল ইমরান ৩০] 
আল্লাহ মানুষকে শাস্তি দিতে কারো মুখাপেক্ষী নন । তার দেহে যে শক্তি বিদ্যমান তা দিয়েই তিনি মানব জাতি ও নিখিল বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারেন । আল্লাহ মানুষকে সেই মহান শক্তির ভীতি প্রদর্শন করছেন । 


আবু যার [রা:] বলেন যে, রাসূল [সা:] বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “হে আমার বান্দাগন ! আমি আমার নফসের জন্য যুলুম হারাম করে রেখেছি ।’’ [মুসলিম আরবী মিশকাত ২০৩ পৃ:, মিশকাত বাংলা ৫ম পৃ: ১৩৩, হা: ২২১৮, এমদাদিয়া] 

যার দেহ আছে তাঁর আকার আছে । এতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ নিরাকার নন । 


রূহ শব্দের অর্থ প্রাণ । 

আল্লাহর যে প্রাণ আছে কোরআনে তার বর্ণনা রয়েছে । 
فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُواْ لَهُ سَاجِدِينَ 

আল্লাহর ফেরেশ্তদিগকে বলেন, “আদমকে সুঠাম করব, তারপর আদমের মধ্যে আমার রূহ প্রদান করব, অত:পর তোমরা তাকে সেজদা করবে। [হিজর ২৯] 

এই আয়াতে প্রমাণ হল আল্লাহর রূহ আছে । 

উপরের আলেচনা থেকে প্রমাণ হল আল্লাহর আকার আছে । আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান কথাটি মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য নীচের আয়াতগুলোর প্রতি লক্ষ্য করুন । 

الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى 

তিনি পরম দয়াময়, আরশে সমাসীন হয়েছেন । [তোয়া হা ৫] 


الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ 

যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।“ [মুমিন ৭] 

وَالْمَلَكُ عَلَى أَرْجَائِهَا وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ 

এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আট জন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের উর্ধ্বে বহন করবে। [হাক্ক্ ১৭] 

উপরের আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে আল্লাহ আরসে সমাসীন আছেন । তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন । তবে তার জ্ঞান সর্বত্র বিরাজমান । তিনি সবকিছু দেখেন । 



প্রিয় পাঠক এখানকার লেখাটি শায়খ মুফতী মুহাম্মদ আবুর রউফ সালাফীর । এখানে খুব সংক্ষেপে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে । পুরো বইটি লিখে দিতে পারলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হত ।