Friday, March 27, 2015

হাদিসের গল্পঃ ঈমানদার যুবক ও আছহাবুল উখদূদের কাহিনী

বহুকাল পূর্বে একজন রাজা ছিলেন। সেই রাজার ছিল একজন যাদকুর। ঐ যাদুকর বৃদ্ধ হ’লে একদিন সে রাজাকে বলল,‘আমি তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি। সুতরাং আমার নিকট একটি ছেলে পাঠান, যাকে আমি যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিব’। বাদশাহ তার নিকট একটি বালককে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি তাকে যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিতে লাগলেন। বালকটি যাদুকরের নিকট যে পথ দিয়ে যাতায়াত করত, সে পথে ছিল এক সন্ন্যাসীর আস্তানা। বালকটি তার নিকট বসল এবং তার কথা শুনে মুগ্ধ  হ’ল। বালকটি যাদুকরের নিকট যাওয়ার সময় ঐ সন্ন্যাসীর নিকট বসে তাঁর কথা শুনত। ফলে যাদুকরের নিকট পৌছাতে বালকটির দেরী হ’ত বলে যাদুকর তাকে প্রহার করত। বালকটি সন্ন্যাসীর নিকট এ কথা জানালে তিনি বালককে শিখিয়ে দেন যে,তুমি যদি যাদুকর কে ভয় কর তাহ’লে বলবে, বাড়ীর লোকজন আমাকে পাঠাতে বিলম্ব  করেছে  এবং  বাড়ীর  লোকজনকে  ভয়  পেলে  বলবে, যাদুকরই আমাকে ছুটি দিতে বিলম্ব করেছে।
 বালকটি এভাবে যাতায়াত করতে থাকে। একদিন পথে সে দেখল,একটি বৃহদাকার প্রাণী মানুষের চলাচলের পথ রোধ করে বসে আছে। বালকটি ভাবল, আজ পরীক্ষা করে দেখব যে, যাদুকর শ্রেষ্ঠ, না সন্ন্যাসী শ্রেষ্ঠ? অতঃপর সে একটি প্রস্তর খন্ড নিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ্‌! যাদুকরের কার্যকলাপ অপেক্ষা সন্ন্যাসীর কার্যকলাপ যদি তোমার নিকট অধিকতর প্রিয় হয়, তবে এই প্রাণীটিকে এই প্রস্তরাঘাতে মেরে ফেল। যেন লোকজন যাতায়াত করতে পারে’। এই বলে প্রাণীটিকে লক্ষ্য করে সে প্রস্তরখন্ডটি ছুঁড়ে মারল। প্রাণীটি ঐ প্রস্তাঘাতে মারা গেল এবং লোক চলাচল শুরু হল।
 এরপর বালকটি সন্ন্যাসীর নিকট গিয়ে তাকে ঘটনাটি জানালে তিনি তাকে বললেন, বৎস! তুমি এখনই আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেছ। তোমার প্রকৃত স্বরূপ আমি বুঝতে পারছি। শীঘ্রই তোমাকে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। যদি তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হও তাহলে যেন আমার কথা প্রকাশ করে দিও না। বালকটির দোআয় জন্মান্ধ ব্যক্তি চক্ষুষ্মান হতে লাগল, কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি নিরাময় হতে লাগল এবং লোকজন অন্যান্য রোগ হতেও আরোগ্য লাভ করতে লাগল।
 এদিকে রাজার একজন সহচর অন্ধ হয়েছিল। সে বহু উপঢৌকন সহ বালকটির নিকট গিয়ে বলল, তুমি যদি আমাকে চক্ষুষ্মান করে দাও, তাহলে এ সবই তোমার।  বালকটি বলল, আমিতো কাউকে আরোগ্য করতে পারি না । বরং  রোগ ভাল করেন আল্লাহ্‌। অতএব আপনি যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেন, তাহলে আমি আপনার রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহর  নিকটে  দোআ  করতে  পারি।  তাতে  তিনি  হয়ত  আপনাকে আরোগ্য দান করতে পারেন। ফলে লোকটি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল। আল্লাহ তাকে আরোগ্য দান করলেন।
পূর্বের ন্যায় তিনি রাজার নিকটে গিয়ে বসলে রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কে তোমাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিল? সে বলল, ‘আমার রব’। রাজা বললেন, আমি ছাড়া তোমার রব আছে কি? সে বলল, ‘আমার ও আপনার উভয়ের রব আল্লাহ’। এতে রাজা তাকে ধরে তার উপর নির্যাতন চালাতে থাকে। অবশেষে সে বালকটির নাম প্রকাশ করে দিল। অতঃপর বালকটিকে রাজদরবারে আনা হল। রাজা তাকে বললেন, বৎস!আমি জানতে পারলাম যে, তুমি তোমার যাদুর গুণে জনমান্ধ ও কুষ্ঠোব্যাধিগ্রস্ত লোকদের রোগ নিরাময় করছ এবং অন্যান্য কঠিন রোগও নিরাময় করে চলেছ। বালকটি বলল, আমি কাউকে রোগ মুক্ত করি না। রোগ মুক্ত করেন আল্লাহ। তখন রাজা তাকে পাকড়াও করে তার উপর উৎপীড়ন চালাতে থাকেন। এক পর্যায়ে সে সন্ন্যাসীর কথা প্রকাশ করে দিল। তখন সন্ন্যাসীকে ধরে আনা হ’ল এবং তাঁকে বলা হল, তুমি  তোমার ধর্ম পরিত্যাগ কর। কিন্তু সে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করল। তখন রাজার আদেশক্রমে করাত নিয়ে আসা হলে তিনি তা তার মাথার মাঝখানে বসালেন এবং তাঁর মাথা ও শরীর চিরে দ্বিখন্ডিত করে ফেললেন। তারপর রাজার সহচরকে আনা হল এবং তাকেও তার ধর্ম ত্যাগ  করতে বলা হল। কিন্তু সেও অস্বীকৃতি জানালে তাকেও করাত দিয়ে চিরে দ্বিখন্ডিত করা হল।
 তারপর বালকটিকে হাযির করে তার ধর্ম পরিত্যাগ করতে বলা হল। বালকটিও নিজ ধর্ম পরিত্যাগ করতে অস্বীকার করল। তখন রাজা তাকে তার লোকজনের নিকট দিয়ে বললেন, তোমরা একে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও এবং তাকে সঙ্গে করে পাহাড়ে আরোহণ করতে থাক। যখন তোমরা পাহাড়ের উচ্চশৃঙ্গে পৌঁছাবে, তখন তাকে তার ধর্ম পরিত্যাগ করতে বলবে। সে যদি অস্বীকার করে, তাহলে তোমরা তাকে সেখান থেকে নীচে ছুড়ে ফেলে দিবে। তারা বালকটিকে নিয়ে পাহাড়ের উপরে উঠলে বালকটি দো‘আ করল, ‘হে আল্লাহ্‌! তোমার যেভাবে  ইচ্ছা হয়, সেভাবে তুমি আমাকে এদের কাছ থেকে রক্ষা কর’। তৎক্ষণাৎ পাহাড়টি কম্পিত হয়ে উঠল এবং তারা নীচে পড়ে মারা গেল। আর বালকটি (সুস্থ দেহে) রাজার নিকট এসে উপস্থিত হল। রাজা তখন তাকে বললেন, ‘তোমার সঙ্গীদের কি  হল’? তখন সে বলল, আল্লাহই  আমাকে  তাদের  হাত  থেকে বাঁচিয়েছেন।
 তারপর রাজা তাকে তার একদল লোকের নিকট সোপর্দ করে আদেশ দিলেন, ‘একে একটি বড় নৌকায় উঠিয়ে  নদীর মাঝখানে নিয়ে যাও। যদি সে নিজ ধর্ম পরিত্যাগ করে, তো ভাল। নচেৎ তাকে নদীতে নিক্ষেপ কর।’ তারা বালকটিকে নিয়ে মাঝ নদীতে পৌঁছালে বালকটি পূর্বের ন্যায় দোআ করল, ‘হে আল্লাহ্‌! তোমার যেভাবে ইচছা হয়, সেভাবে তুমি আমাকে এদের হাত থেকে রক্ষা কর’। এতে নৌকা ভীষণভাবে কাত হয়ে পড়ল। ফলে রাজার লোকজন নদীতে ডুবে মারা গেল। আর বালকটি (সুস্ত দেহে) রাজার নিকটে আসলে রাজা তাকে বললেন, তোমার সঙ্গীদের কি অবস্থা? সে বলল, আল্লাহ্‌ই আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। এরপর সে রাজাকে বলল, ‘আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেন আমাকে কোনভাবেই হত্যা করতে পারবেন না। যতক্ষণ না আমি যা বলব, আপনি তা করবেন। রাজা বললেন, ‘সেটা কি’? বালকটি বলল, ‘আপনি একটি বিসতীর্ণ মাঠে সকল লোককে হাযির করুন এবং সেই মাঠে খেজুরের একটি গুঁড়ি পুঁতে তার উপরিভাগে আমাকে বেঁধে রাখুন। তারপর আমার তূনীর হতে একটি তীর  নিয়ে  ধনুকে  সংযোজিত  করুন। তারপর (বালকটির রব আল্লাহর নামে) বলে আমার দিকে তীরটি নিক্ষেপ করুন। আপনি  যদি  এ  পন্থা অবলম্বন  করেন, তবেই  আমাকে  হত্যা  করতে পারবেন।
 বালকের কথামত এক বিসতীর্ণ মাঠে রাজা সকল লোককে সমবেত করলেন এবং বালকটিকে একটি খেজুর গাছের গুঁড়ির উপরে বাঁধলেন। তারপর রাজা  বালকটির  তূনীর  হতে  একটি  তীর  নিয়ে  ধনুকের  মধ্যভাগে সংযোজিত করলেন। তারপর বলে বালকটির দিকে তীর নিক্ষেপ করলেন। তীরটি বালকের চোখ ও কানের মধ্যভাগে বিদ্ধ হল। বালকটি এক হাতে তীরবিদ্ধ স্থানটি চেপে ধরল। অতঃপর সে মারা গেল।
 এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত জনগণ বলে উঠল, ‘আমরা বালকটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম।  আমরা বালকটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম। তারপর রাজার লোকজন তাঁর নিকট গিয়ে বলল, ‘আপনি যা আশঙ্কা করছিলেন তাই শেষ পর্যন্ত ঘটে গেল। সব লোক বালকটির রবের প্রতি ঈমান আনল’। তখন রাজা রাস্তাগুলির চৌমাথায় প্রকান্ড গর্ত খনন করার নির্দেশ দিলেন। তার কথা মতো গর্ত খনন করে তাতে আগুন প্রজ্জ্বলিত করা হ’ল। তারপর রাজা হুকুম দিলেন, ‘যে ব্যক্তি বালকের ধর্ম পরিত্যাগ করবে না, তাকে ঐ আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মার। অথবা তাকে বলবে, তুমি এই আগুনে ঝাঁপ দাও। রাজার লোকেরা তার হুকমু পালন  করতে  লাগল। ইতিমধ্যে  একজন  রমণীকে  তার  শিশুসন্তাসহ উপস্থিত করা হল। রমণীটি আগুনে ঝাঁপ দিতে ইতস্তত করতে থাকলে শিশুটি বলে উঠল, ‘মা ছবর অবলম্বন (করতঃ আগুনে প্রবেশ) করুন।কেননা আপনি হক পথে আছেন’।
পবিত্র কুরআনের সূরা বুরূজে এ ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে,
‘ধবংস হয়েছিল গর্তওয়ালারা- ইন্ধনপূর্ণ যে গর্তে ছিল অগ্নি, যখন তারা তার পাশে উপবিষ্ট ছিল এবং তারা মুমিনদের সাথে যা করছিল তা প্রত্যক্ষ করছিল। তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধু একারনে যে, তারা বিশ্বাস করতো পরাক্রমশালী ও প্রশংসার্হ আল্লাহে’ (বুরূজ ৪-৮)।
[সহীহ মুসলিম হা/৩০০৫ ‘যুহদ ও রিক্বাক্ব’ অধ্যায়, অনুচেছদ-১৭, শুহাইব বিন সিনান আর-রূমী (রাঃ) হতে বর্ণিত, আহমাদ হা/২৩৯৭৬]।

শিক্ষা :

১.  প্রত্যেকটি আদম সন্তান স্বভাবধর্ম ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে।
২. মুমিন বান্দা সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করবে ও কায়মনোবাক্যে তাঁর নিকট দো‘আ করবে।
৩. রোগমুক্তির মালিক একমাত্র আল্লাহ্‌; কোন পীর-ফকীর বা সাধু-সন্ন্যাসী নয়।
৪. আল্লাহর পথের নির্ভীক সৈনিকেরা বাতিলের সামনে কখনো মাথা নত করে না।
৫. মুমিন দুনিয়াবী জীবনে পদে পদে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তার ঈমানের মযবূতী পরখ করেন।

৬. হক্বের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।

ইসলাম পরিচিতি --আবুল বাশার


ইসলাম পরিচিতি
আবুল বাশার
শিক্ষক

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ,
       জগতসমূহের প্রতিপালক বিচার দিবসের একচ্ছত্র অধিপতি সকল করুনার আধার অতি পবিত্র সুউচ্চ মহান আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা এবং স্তুতি নির্দিষ্ট, আমরা তাঁর দরবারেই আশ্রয় পার্থনা করি এবং তাঁর কাছেই সাহায্য কামনা করি তাঁর সমীপেই ক্ষমা ভিক্ষা করি আমাদের প্রবৃত্তির সকল দোষ-ত্রুটি থেকে তিনিই পারেন আমাদের মুক্ত করতে আর তিনিই সক্ষম আমাদের অন্তরে ঈমান জ্ঞান ঢেলে দিতে তিনি যাকে চান সৎপথ প্রদর্শণ করেন আর যাকে চান পথভ্রষ্ট করেন তিনি যাকে পথ দেখন তার জন্য পথভ্রষ্টকারী কেউ নেই, আবার তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্যও কোন পথ প্রদর্শক নেই হে আল্লাহ! যে রাস্তায় তোমার অনন্ত পুরষ্কার, রহমত, দয়া, মাগফিরাত বর্ষিত হয়েছে, যে পথ তোমার রাসূলদের, সিদ্দিকদের, শহীদদের এবং সৎকর্মশীলদের সে পথে তুমি আমাদের পরিচালিত কর যে পথ কেবলই ধোকা প্রতারণার, যেখানে কেবলই লাঞ্ছনা আর গঞ্জনা সেই তোমার অভিশপ্ত নাফরমানদের পথ থেকে তুমি আমাদেরকে দূরে রাখ কবুল কর আল্লাহ, কবুল কর তোমার দাসদের এই আকুল আবেদন হে আল্লাহ! যে রাস্তায় তোমার অনন্ত পুরষ্কার, রহমত, দয়া, মাগফিরাত বর্ষিত হয়েছে, যে পথ তোমার রাসূলদের, সিদ্দিকদের, শহীদদের এবং সৎকর্মশীলদের সে পথে তুমি আমাদের পরিচালিত কর যে পথ কেবলই ধোকা প্রতারণার, যেখানে কেবলই লাঞ্ছনা আর গঞ্জনা সেই তোমার অভিশপ্ত নাফরমানদের পথ থেকে তুমি আমাদেরকে দূরে রাখ কবুল কর আল্লাহ, কবুল কর তোমার দাসদের এই আকুল আবেদন
       আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আমার সকল ইবাদত, দাসত্ব, প্রশংসা-স্তুতি, পূজা, অর্চনা পাওয়ার কেউ নেই তিনি ব্যতীত আর কারো আইন-বিধান, নিয়ম-কানুন-নীতি আমার জন্য প্রযোজ্য নয়, তিনি এক অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক বা অংশীদার নেই, মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রেরিত পুরুষ এবং একমাত্র মানুষ যাঁর অনুসরণ আমার জন্য শিরোধার্য
       আমি আরও ঘোষণা করছি আমার সালাত, আমার যাবতীয় কাজকর্ম, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-সাধনা, আমার জীবন, আমার মৃত্যু জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট, আর সর্বাগ্রে আমিই তাঁর দরবারে আত্মসমর্পিত আমি তাঁর দাস, তিনি আমার মালিক
       প্রিয় ভাই বোনেরা আপনারা আমাকে বলুনতো কোন জীবন ব্যবস্থাকেপূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা বলা হয়?”
       উত্তর হচ্ছে ইসলাম।
       ইসলাম হচ্ছে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত একটি মানুষ কীভাবে চলবে, কীভাবে জীবনযাপন করবে, সন্তান লালন পালন সহ, খাওয়া দাওয়া, উঠা বসা, চাকরী-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমাজ-সংসার, দেশ-রাষ্ট্র ইত্যাদি পরিচালনা করবে তার সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা ইসলাম দিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ
  পৃথিবীতে অনেক জীবন ব্যবস্থা আছে, কিন্তু সেগুলো কোনটি পূর্ণাঙ্গ নয় যেমন:বু
দ্ধইজম
ক্রিসটেইনিটি
হিন্দুইজম
জুডাইজম
মর্মনিজম
শিখইজম
ডেমোক্রেসি
কমিউনিজম
স্যোসালিজম
ক্যাপিটালিজম
ন্যাশনালিজম
লিবারেলিজম
মার্কসিজম
লেনিনিজম
ফ্যাসিজম


যতগুলো জীবন ব্যবস্থার নাম বললাম তার সবই পরিবর্তীত এবং মানব রচিত ফলে এর সবই ব্যর্থ 
আজকে আমি যে বিষয়টি নিয়ে এখানে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ সেটি হচ্ছে:
আমাদের জীবন ব্যবস্থা ইসলাম কী? এবং এর পরিচয় কী?
       আসুন এবার বিস্তারিত আলোচনা করা যাক
       মহান আল্লাহ মানব জাতীকে সৃষ্টি করে এই পৃথিবীতে  উদ্দেশ্যহীন ভাবে এমনি এমনি ছেড়ে দেননি তিঁনি আমাদেরকে একটি উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্টি করেছেন উদ্দেশ্যটি হচ্ছে আমরা তাঁরই ইবাদত করব, অন্য কারো নয় আর সেই দাসত্ব হতে হবে আল্লাহর মনোনীত পন্থায়, অন্য কোন পন্থায় করলে তা কবুল করা হবেনা 
          আসুন আমরা একটি উদাহরণ দেখি: ধরুন এক ব্যক্তি কোন এক কোম্পানিতে গেল কাজ করার জন্য, সে কি সেই কোম্পানীতে নিজের ইচ্ছে মত যা খুশি তাই করতে পারবে? বা সেই কাজ করলেও কি কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করবে? উত্তর হচ্ছে, অবশ্যই না
       ঠিক এমনিভাবে মানব জাতিকে আল্লাহ ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন একথা যেমনি ভাবে সত্য অনুরুপ ভাবে ইহাও সত্য যে তিনি তাঁর ইবাদত করারও একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিদিয়েছেন আর ইবাদত করার এই পদ্ধতির নামই হচ্ছেইসলাম 
ইসলাম একটি আরবি শব্দ ইসলাম শব্দের আভিধানিক অর্থ হল- অনুগত হওয়া, নিজেকে সঁপে দেয়া, আত্বসমর্পন করা ইসলাম মানে আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ আত্বসমর্পণ,নিজেকে সঁপে দেয়া এবং পরিপূর্ণ তাওহীদের (একত্ববাদের) স্বীকৃতি দেয়া, সকল প্রকার শিরক অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকা
       ইসলামিক পরিভাষায় ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা দ্বীনের (জীবনব্যবস্থার) নাম, যা মুহাম্মদ (সা:) এর মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে ইসলাম অর্থ ইসতিলাম, আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া, আত্বসমর্পন করা, আত্বসমর্পনের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করা, এবং রসুল (সা:) এর প্রতি ঈমান আনা তার অনুসরন করা এবং শিরক থেকে পবিত্র হওয়া এবং শিরকের লোকদের থেকে মুক্ত হওয়া
       এতক্ষণের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, ইসলাম হচ্ছে একটিদ্বীন
       এই দ্বীন শব্দটি কুরআনে ৩টি অর্থে এসেছে যেমন:
       . কর্মফল দিবসকে দ্বীন বলা হয়েছে
       সূরা ফাতিহার ৩নং আয়াতে এসেছে: মালিকি ইয়াও মিদ্দিন
       অর্থ্যাৎ কর্মফল দিবসের মালিক (:)
       একই সূরার ৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন:
       কেহ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহন করিতে চাহিলে তাহা কখনও কবুল করা হইবে না এবং সে হইবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত
       . আনুগত্যকেও দ্বীন বলা হয় যেমন: সূরা যুমারের নং আয়াতে এসেছে:
       আলা লিল্লা-হিদ্দি-নুল -লিছ
       অর্থ্যাৎজানিয়া রাখ অবিমিশ্রিত আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য সুতরাং দ্বীন এখানে আনুগত্য হিসেবে এসেছে 
       . দ্বীনের তৃতীয় অর্থ হচ্ছে জীবন বিধান বা জীবন ব্যবস্থা
       যেমন: সূরা আল ইমরানের ১৯ নং আয়াতে এসেছেনিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহনযোগ্য দ্বীন হচ্ছে ইসলাম ৮৩ নং আয়াতে এসেছেতাহারা কি চাহে আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন?-
       সূরা সাফ্ফ ৬১ নং সুরার নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “ তিনিই তাঁহার রাসূলকে প্রেরণ করিয়াছেন হিদায়াত সত্য দ্বীনসহ সকল দ্বীনের উপর উহাকে বিজয়ী করার জন্য, যদিও মুশরিকগণ উহা অপসন্দ করে
       উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, সমস্ত দ্বীনের মধ্যে থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা শুধু ইসলামকেই হক দ্বীন হেসেবে গ্রহণ করবেন
       যে দ্বীনকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সমস্ত বাতিল দ্বীনের উপর জয়ী করবেন সেই দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “অতি সত্তরই এমন এক সময় আসবে যখন ইসলাম শুধু নামে থাকবে, বাকী আর কিছুই থাকবে না, আলকুরআন থাকবে কিন্ত তার উপর আমল থাকবে না, মসজিদ ভরা মানুষ থাকবে কিন্তু তাতে হেদায়েত থাকবে না, মসজিদের ইমাম হবে নিকৃষ্ট (মেশকাত, বাবুল ইতেসাব কিতাব ওয়াস সুন্নাহ)
       আর বর্তমান অবস্থা দেখুন, ইসলামের অর্থ করা হয়েছেশান্তি’ ! কেন এই বিকৃতি? কারণ মানুষ যদি সত্য জানে তখন প্রশ্ন করবে কার কাছে আত্মসমর্পণ করব? কীভাবে আত্ম সমর্পণ করব? আর তখন মানুষ জেনে যাবে, সত্যটা আসলে কী? এজন্যে সুকৌশলে মানুষদের দুরে রাখা হচ্ছে
       অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে বলেছেন, তুমি আত্মসমর্পণ কর সূরা বাকারা আয়াত নং ১৩১ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন: “তাহার প্রতিপালক যখন তাহাকে বলিয়াছিলেন, ‘আত্মসমর্পণ কর,’ সে বলিয়াছিল, ‘জগতসমূহের প্রতিপালকের উপর আত্মসমর্পন করিলামসুবাহানআল্লাহ!
       আল্লাহ সুব. তাকে বললেন আত্মসমর্পন কর, আর একথা শোনার সাথে সাথে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম সুবাহানাল্লাহ!
       এবং সূরা বাকারার ১৩২ নং আয়াতে এসেছে:
       এবং ইব্রাহীম ইয়াকুব এই সম্বন্ধে তাহাদের পুত্রগণকে  নির্দেশ দিয়া বলিয়াছিল, ‘হে পুত্রগণ আল্লাহই তোমাদের জন্য এই দ্বীনকে মনোনীত করিয়াছেন সুতরাং আত্মসমর্পণকারী না হইয়া তোমরা কখনো মৃত্যু বরণ করিওনা 
       উপরোক্ত দুটো আয়াত থেকে আমরা কী বুঝলাম? আমরা এটাই বুঝলাম যে, আমাদের জীবনের সকলকিছুই আল্লাহর কাছে সঁপে দিতে হবে আর আল্লাহর নিকট নিজের জীবন সঁপে দেয়ার নামই হচ্ছে ইসলাম
       এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, পৃথিবীর সব কিছুই আল্লাহর কাছে ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক তারা আত্মসমর্পণ  করেছে সূরা আল ইমরানের ৮৩ নং আয়াতে এসেছেতাহারা কি চাহে আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন?-যখন আকাশে পৃথিবীতে যাহা কিছু রহিয়াছে সমস্তই স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় তাঁহার নিকট আত্মসমর্পণ করিয়াছে! অর্থ্যাৎ চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা, নক্ষত্র, মেঘমালা, বাতাস, আগুন, পানি, মাটি ইত্যাদি সবই আল্লাহর ইচ্ছার নিকট আত্মসমর্পিত সুবাহানআল্লাহ!
       এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে কথা বলতে চাই, তা হলো: আপনি ইসলাম মানবেন,
       কিন্তু কতটুকু মানবেন?
      আপনি বলতে পারেন, বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তো আর পুরোপুরি মানা যাবে না
       তাহলে কতটুকু মানবেন?
       ৫০%
       ৯৯.৯৯%
       দুঃখিত, আপনাকে ইসলাম মানতে হবে ১০০% আপনি কিছু মানবেন আর কিছু মানবেননা তা হবেনা সুরা বাকারার ২০৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “হে মুমিনগণ তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করোনা নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু
       যারা কিছু মানে আর কিছু মানে না আল্লাহ তাদেরকে হক্কানি কাফের বলেছেন যেমন: সুরা নিসার ১৫১-১৫২ নং আয়াতযারা আল্লাহ তার রসূলের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী তদুপরি আল্লাহ রসূলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি কিন্তু কতককে প্রত্যাখ্যান করি এবং এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়। ইহারাই প্রকৃত কাফির , এবং কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রাখিয়াছি
       অর্থ্যাৎ আপনি ইসলামের কিছু অংশ মানবেন আর কিছু অংশ মানবেননা সেটা হবেনা আপনাকে ইসলাম পরিপূর্ণ ভাবেই ইসলাম মানতে হবে
       এখন একজন ব্যক্তি নামাজ পড়ে কিন্তু পহেলা বৈশাখ পালন করে, বিশ্ব ভালবাসা দিবস সহ অন্যান্য আরো অনু্ষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করে
     এরকম যদি হয় তাহলে আপনি ভুল করছেন এর দ্বারা আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া      তাআলা বলেছেন, “ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহনযোগ্য হবেনা এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের   অন্তর্ভূক্ত”(:৮৫)
       একবার উমর রা. তাওরাতের কিছু অংশ পাঠ করছিলেন এটা দেখে রাসুল সা. প্রচন্ড রাগ করেছিলেন এবং বলেছিলেন সয়ং যার উপর তাওরাত নাযিল হয়ে ছিল সে মুসা . যদি এখন আসত তবে তাকে আমার উম্মত হতে হত
ইসলাম হচ্ছে তাই যা আল্লাহর পক্ষ হতে নবী . মাধ্যমে এসেছে তাই ইসলাম, সেটাই আমাদের মান্য করতে হবে আর আমরা যদি মানুষের দ্বারা পরিবর্তীত ইসলাম মানি, তাহলে আমরা ইবাদত করে কষ্ট করব ঠিকই কিন্তু আমাদের কোন সওয়াব অর্জন হবে না আল্লাহ সুব. সুরা মুহাম্মদ ৪৭:৩৩ নং আয়াতে বলেছেন: “হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর, আর তোমাদের কর্ম বিনষ্ট করো না  

       আর আমরা যদি চাই যে , আমাদের কর্ম বিনষ্ট না হোক তবে, আমাদেরকে আল্লাহ প্রদত্ত ইসলাম পরিপূর্ণভাবে মানতে হবে
       কারণ, ইসলাম পরিপূর্ণ, যার মধ্যে কোন নতুন কিছু প্রবেশ করানো যাবে না ঠিক তেমনিভাবে নতুন কিছু প্রবেশ করানোও যাবে না
       কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের এই দ্বীনকে পূর্ণ করে দিয়েছেন যেমন আল্লাহ সুব.. সূরা মায়েদার নং আয়াতে বলেছেন:
       আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ন করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন মনোনীত করলাম
       রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে এমন কোন আমল করল যার অনুমতি ইসলামে নেই তা বর্জন করা হবে (বুখারি, মুসলিম)
আরেকটি হাদিসে এসেছে: 'ইসলাম শুরু হয়েছে অপরিচিত হিসেবে এবং আবার একসময় এটি অপরিচিত হয়ে যাবে, সুসংবাদ তাদের জন্য যারা অপরিচিত-এর অনুসারী।'(মুসলিম
       আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত ৭২টি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত সাহাবা--কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাত প্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? আল্লাহর  রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং আমার সাহাবাগণ যে মত পথের উপর যারা কায়েম থাকবে,(তারাই নাযাত প্রাপ্ত দল) (তিরমিযী)
       তাই আমাদেরও জানা উচিৎ আমরা কি করছি এবং কোন ইসলাম মানছি
       আজকের মত এখানেই শেষ করছি
       আসসালামু আলাইকুম