Tuesday, January 5, 2016

সূরা বাকারা বাংলা অনুবাদ

২.১ ) আলিফ লাম মীম।
২.২ ) এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্তেদহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,
২.৩ ) যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিন্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে
২.৪ ) এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।
২.৫ ) তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম।
২.৬ ) নিশ্চিতই যারা কাফের হয়েছে তাদেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন আর নাই করুন তাতে কিছুই আসে যায় না, তারা ঈমান আনবে না।
২.৭ ) আল্লাহ্ তাদের অন্তকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
২.৮ ) আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌÍ তারা ঈমানদার নয়।
২.৯ ) তারা আল্লাহ্ এবং ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না।
২.১০ ) তাদের অন্ত:করণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ্ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তূত: তাদের জন্য নির্ধািিরত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন।
২.১১ ) আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবল¤¦ন করেছি।
২.১২ ) মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তূ তারা তা উপলব্ধি করে না।
২.১৩ ) আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্ত‘তারা তা বোঝে না।
২.১৪ ) আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তেÍ সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো (মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্রা।
২.১৫ ) বরং আল্লাহ্ই তাদের সাথে উপহাস করেন। আর তাদেরকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন যেন তারা নিজেদের অহংকার ও কুমতলবে হয়রান ও পেরেশান থাকে।
২.১৬ ) তারা সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করে। বস্তূত: তারা তাদের এ ব্যবসায় লাভবান হতে পারেনি এবং তারা হেদায়েতও লাভ করতে পারেনি।
২.১৭ ) তাদের অবস্থা সে ব্যক্তির মত, যে লোক কোথাও আগুন জ¦ালালো এবং তার চারদিককার সবকিছুকে যখন আগুন ¯পষ্ট করে তুললো, ঠিক এমনি সময় আল্লাহ্্ তার চারদিকের আলোকে উঠিয়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দিলেন। ফলে, তারা কিছুই দেখতে পায় না।
২.১৮ ) তারা বধির, মূক ও অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরে আসবে না।
২.১৯ ) আর তাদের উদাহরণ সেসব লোকের মত যারা দুর্যোগপূর্ণ ঝড়ো রাতে পথ চলে, যাতে থাকে আঁধার, গর্জন ও বিদ্যুৎচমক। মৃত্যুর ভয়ে গর্জনের সময় কানে আঙ্গুল দিয়ে রক্ষা পেতে চায়। অথচ সমস্ত কাফেরই আল্লাহ্্ কর্তৃক পরিবেন্ঠিত।
২.২০ ) বিদ্যুতালোকে যখন সামান্য আলোকিত হয়, তখন কিছুটা পথ চলে। আবার যখন অন্ধকার হয়ে যায়, তখন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। যদি আল্লাহ্্ ইচছা করেন, তাহলে তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিতে পারেন। আল্লাহ্্ যাবতীয় বিষয়ের উপর সর্বময় ক্ষমতাশীল।
২.২১ ) হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারবে।
২.২২ ) যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ ¯¦রূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহ্র সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তূত: এসব তোমরা জান।
২.২৩ ) এতদস¤পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্তেদহ থাকে যা আমি আমার বান্তদার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহ্্কে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।
২.২৪ ) আর যদি তা না পার-অবশ্য তা তোমরা কখনও পারবে না, তাহলে সে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জ¦ালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তূত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য।
২.২৫ ) আর হে নবী (সা:), যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোন ফল প্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বেও লাভ করেছিলাম। বস্তূত: তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে। এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিনী রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।
২.২৬ ) আল্লাহ্্ পাক নি:সন্তেদহে মশা বা তদুর্ধ্ব বস্তূ দ্বারা উপমা পেশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। বস্তূত: যারা মুমিন তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে, তাদের পালনকর্তা কর্তৃক উপস্থাপিত এ উপমা স¤পূর্ণ নির্ভূল ও সঠিক। আর যারা কাফির তারা বলে, এরূপ উপমা উপস্থাপনে আল্লাহ্্র মতলবই বা কি ছিল। এ দ্বারা আল্লাহ্ তা'আলা অনেককে বিপথগামী করেন, আবার অনেককে সঠিক পথও প্রদর্শন করেন। তিনি অনুরূপ উপমা দ্বারা অসৎ ব্যক্তিবর্গ ভি›¥ কাকেও বিপথগামী করেন না।
২.২৭ ) (বিপথগামী ওরাই) যারা আল্লাহ্্র সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ্্ পাক যা অবিচিছ›¥ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, তা ছি›¥ করে, আর পৃথিবীর বুকে অশান্তি সৃষ্টি করে। ওরা যথার্থই ক্ষতিগ্রস্ত।
২.২৮ ) কেমন করে তোমরা আল্লাহ্্র ব্যাপারে কুফরী অবল¤¦ন করছ? অথচ তোমরা ছিলে নি®প্রাণ। অত:পর তিনিই তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন, আবার মৃত্যু দান করবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবনদান করবেন। অত:পর তারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে।
২.২৯ ) তিনিই সে সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তূত: তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ্্ সর্ববিষয়ে অবহিত।
২.৩০ ) আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেন: আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচিছ, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমারা পবিত্র সত্তাকে স¥রণ করছি। তিনি বললেন, নি:সন্তেদহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।
২.৩১ ) আর আল্লাহ্্ তা'আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তূ-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তূ-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অত:পর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।
২.৩২ ) তারা বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদিগকে শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানস¤প›¥, হেকমতওয়ালা।
২.৩৩ ) তিনি বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের নাম। তারপর যখন তিনি বলে দিলেন সে সবের নাম, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় স¤পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর!
২.৩৪ ) এবং যখন আমি হযরত আদম (আ:)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইব্লীস ব্যতীত সবাই সিজ্দা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অ¯¦ীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।
২.৩৫ ) এবং আমি আদমকে হুকুম করলাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জা›¥াতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তূ এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে।
২.৩৬ ) অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদ¯খলিত করেছিল। পরে তারা যে সুখ-¯¦াচছন্তেদ্য ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল এবং আমি বললাম, তোমরা নেমে যাও। তোমরা পর¯পর একে অপরের শক্র হবে এবং তোমাদেরকে সেখানে কিছুকাল অবস্থান করতে হবে ও লাভ সংগ্রহ করতে হবে।
২.৩৭ ) অত:পর হযরত আদম (আ:) ¯¦ীয় পালনকর্তার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শিখে নিলেন, অত:পর আল্লাহ্ পাক তাঁর প্রতি (করুণাভরে) লক্ষ্য করলেন। নিশ্চয়ই তিনি মহা-ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।
২.৩৮ ) আমি হুকুম করলাম, তোমরা সবাই নীচে নেমে যাও। অত:পর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁÍছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না (কোন কারণে) তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্তপ্ত হবে।
২.৩৯ ) আর যে লোক তা অ¯¦ীকার করবে এবং আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপ›¥ করার প্রয়াস পাবে, তারাই হবে জাহা›¥ামবাসী; অন্তকাল সেখানে থাকবে।
২.৪০ ) হে বনী-ইসরাঈলগণ, তোমরা স¥রণ কর আমার সে অনুগ্রহ যা আমি তোমাদের প্রতি করেছি এবং তোমরা পূরণ কর আমার সাথে কৃত প্রতিজ্ঞা, তাহলে আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। আর ভয় কর আমাকেই।
২.৪১ ) আর তোমরা সে গ্রন্তে’র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমি অবতীর্ণ করেছি সত্যবক্তা হিসেবে তোমাদের কাছে। বস্তূত: তোমরা তার প্রাথমিক অ¯¦ীকারকারী হয়ো না আর আমার আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ।
২.৪২ ) তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বে সত্যকে তোমরা গোপন করো না।
২.৪৩ ) আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়।
২.৪৪ ) তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভূলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?
২.৪৫ ) ধৈর্যের সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাযের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তূ সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।
২.৪৬ ) যারা একথা খেয়াল করে যে, তাদেরকে স¤মুখীন হতে হবে ¯¦ীয় পরওয়ারদেগারের এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।
২.৪৭ ) হে বনী-ইসরাঈলগণ! তোমরা স¥রণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং (স¥রণ কর) সে বিষয়টি যে, আমি তোমাদেরকে উচচমর্যাদা দান করেছি সমগ্র বিশ্বের উপর।
২.৪৮ ) আর সে দিনের ভয় কর, যখন কেউ কারও সামান্য উপকারে আসবে না এবং তার পক্ষে কোন সুপারিশও কবুল হবে না; কারও কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও নেয়া হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না।
২.৪৯ ) আর (স¥রণ কর) সে সময়ের কথা, যখন আমি তোমাদিগকে মুক্তিদান করেছি ফেরআউনের লোকদের কবল থেকে যারা তোমাদিগকে কঠিন শাস্তি দান করত; তোমাদের পুত্রসন্তানদেরকে জবাই করত এবং তোমাদের স্ত্রীদিগকে অব্যাহতি দিত। বস্তূত: তাতে পরীক্ষা ছিল তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে, মহা পরীক্ষা।
২.৫০ ) আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখন্ডিত করেছি, অত:পর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ডুবিয়ে দিয়েছি ফেরআউনের লোকদিগকে অথচ তোমরা দেখছিলে।
২.৫১ ) আর যখন আমি মূসার সাথে ওয়াদা করেছি চল্লিশ রাত্রির অত:পর তোমরা গোবৎস বানিয়ে নিয়েছ মূসার অনুপস্থিতিতে। বস্তূত: তোমরা ছিলে যালেম।
২.৫২ ) তারপর আমি তাতেও তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা ¯¦ীকার করে নাও।
২.৫৩ ) আর (স¥রণ কর) যখন আমি মূসাকে কিতাব এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বিধানকারী নির্দেশ দান করেছি, যাতে তোমরা সরল পথ প্রাপ্ত হতে পার।
২.৫৪ ) আর যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা তোমাদেরই ক্ষতিসাধন করেছ এই গোবৎস নির্মাণ করে। কাজেই এখন তওবা কর ¯¦ীয় স্রষ্টার প্রতি এবং নিজ নিজ প্রাণ বিসর্জন দাও। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর তোমাদের স্রষ্টার নিকট। তারপর তোমাদের প্রতি লক্ষ্য করা হল। নি:সন্তেদহে তিনিই ক্ষমাকারী, অত্যন্ত মেহেরবান।
২.৫৫ ) আর যখন তোমরা বললে, হে মূসা, কসি¥নকালেও আমরা তোমাকে বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহ্কে (প্রকাশ্যে) দেখতে পাব। বস্তূত: তোমাদিগকে পাকড়াও করল বিদ্যুৎ। অথচ তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে।
২.৫৬ ) তারপর মরে যাবার পর তোমাদিগকে আমি তুলে দাঁড় করিয়েছি, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা ¯¦ীকার করে নাও।
২.৫৭ ) আর আমি তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি মেঘমালার দ্বারা এবং তোমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছি 'মান্না' ও সালওয়া'। সেসব পবিত্র বস্তূ তোমরা ভক্ষন কর, যা আমি তোমাদেরকে দান করেছি। বস্তূত: তারা আমার কোন ক্ষতি করতে পারেনি, বরং নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে।
২.৫৮ ) আর যখন আমি বললাম, তোমরা প্রবেশ কর এ নগরীতে এবং এতে যেখানে খুশী খেয়ে ¯¦াচছন্তেদ্য বিচরণ করতে থাক এবং দরজার ভিতর দিয়ে প্রবেশ করার সময় সেজদা করে ঢুক, আর বলতে থাক-্ৗÍ৮২১৬;আমাদিগকে ক্ষমা করে দাও'-তাহলে আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব এবং সৎ কর্মশীলদেরকে অতিরিক্ত দানও করব।
২.৫৯ ) অত:পর যালেমরা কথা পালেট দিয়েছে, যা কিছু তাদেরকে বলে দেয়া হয়েছিল তা থেকে। তারপর আমি অবতীর্ণ করেছি যালেমদের উপর আযাব, আসমান থেকে, নির্দেশ লংঘন করার কারণে।
২.৬০ ) আর মূসা যখন নিজ জাতির জন্য পানি চাইল, তখন আমি বললাম, ¯¦ীয় যন্ঠির দ্বারা আঘাত কর পাথরের উপরে। অত:পর তা থেকে প্রবাহিত হয়ে এল বারটি প্রস্রবণ। তাদের সব গোত্রই চিনে নিল নিজ নিজ ঘাট। আল্লাহ্র দেয়া রিযিক খাও, পান কর আর দুনিয়ার বুকে দাংগা-হাংগামা করে বেড়িও না।
২.৬১ ) আর তোমরা যখন বললে, হে মূসা, আমরা একই ধরনের খাদ্য-দ্রব্যে কখনও ধৈর্যধারণ করব না। কাজেই তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট আমাদের পক্ষে প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের জন্যে এমন বস্তূসামগ্রী দান করেন যা জমিতে উৎপন্ন হয়, তরকারী, কাকড়ী, গম, মসুরি, পেঁয়াজ প্রভৃতি। মূসা (আ:) বললেন, তোমরা কি এমন বস্তূ নিতে চাও যা নিকৃষ্ট সে বস্তূর পরিবর্তে যা উত্তম? তোমরা কোন নগরীতে উপনীত হও, তাহলেই পাবে যা তোমরা কামনা করছ। আর তাদের উপর আরোপ করা হল লাঞ্চনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহ্র রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো এ জন্য যে, তারা আল্লাহ্র বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান সীমালংঘকারী।
২.৬২ ) নি:সন্তেদহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ্র প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দু:খিতও হবে না।
২.৬৩ ) আর আমি যখন তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তুর পর্বতকে তোমাদের মাথার উপর তুলে ধরেছিলাম এই বলে যে, তোমাদিগকে যে কিতাব দেয়া হয়েছে তাকে ধর সুদৃঢ়ভাবে এবং এতে যা কিছু রয়েছে তা মনে রেখো যাতে তোমরা ভয় কর।
২.৬৪ ) তারপরেও তোমরা তা থেকে ফিরে গেছ। কাজেই আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও মেহেরবানী যদি তোমাদের উপর না থাকত, তবে অবশ্যই তোমরা ধবংস হয়ে যেতে।
২.৬৫ ) তোমরা তাদেরকে ভালরূপে জেনেছ, যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমা লঘণ করেছিল। আমি বলেছিলাম: তোমরা লাঞ্চিত বানর হয়ে যাও।
২.৬৬ ) অত:পর আমি এ ঘটনাকে তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহ্ভীরুদের জন্য উপদেশ গ্রহণের উপাদান করে দিয়েছি।
২.৬৭ ) যখন মূসা (আ:) ¯¦ীয় সম্প্রদায়কে বললেন: আল্লাহ্ তোমাদের একটি গরু জবাই করতে বলেছেন। তারা বলল, তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছ? মূসা (আ:) বললেন, মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আমি আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
২.৬৮ ) তারা বলল, তুমি তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, যেন সেটির রূপ বিশ্লেষণ করা হয়। মূসা (আ:) বললেন, তিনি বলছেন, সেটা হবে একটা গাভী, যা বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়-বার্ধক্য ও যৌÍবনের মাঝামাঝি বয়সের। এখন আদিষ্ট কাজ করে ফেল।
২.৬৯ ) তারা বলল, তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর যে, তার রঙ কিরূপ হবে? মূসা (আ:) বললেন, তিনি বলেছেন যে, গাঢ় পীতবর্ণের গাভী-যা দর্শকদের চমৎকৃত করবে।
২.৭০ ) তারা বলল, আপনি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন-তিনি বলে দিন যে, সেটা কিরূপ? কেননা, গরু আমাদের কাছে সাদৃশ্যশীল মনে হয়। ইনশাআল্লাহ্ এবার আমরা অবশ্যই পথপ্রাপ্ত হব। মূসা (আ:) বললেন, তিনি বলেন যে, এ গাভী ভূকর্ষণ ও জল সেচনের শ্রমে অভ্যস্ত নয়-হবে নি®কলঙ্ক, নিখুঁত।
২.৭১ ) তারা বলল, এবার সঠিক তথ্য এনেছ। অত:পর তারা সেটা জবাই করল, অথচ জবাই করবে বলে মনে হচিছল না।
২.৭২ ) যখন তোমরা একজনকে হত্যা করে পরে সে স¤পর্কে একে অপরকে অভিযুক্ত করেছিলে। যা তোমরা গোপন করছিলে, তা প্রকাশ করে দেয়া ছিল আল্লাহ্র অভিপ্রায়।
২.৭৩ ) অত:পর আমি বললাম: গরুর একটি খন্ড দ্বারা মৃতকে আঘাত কর। এভাবে আল্লাহ্ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শণ সমূহ প্রদর্শন করেন-যাতে তোমরা চিন্তা কর।
২.৭৪ ) অত:পর এ ঘটনার পরে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তা পাথরের মত অথবা তদপেক্ষাও কঠিন। পাথরের মধ্যে এমন ও আছে; যা থেকে ঝরণা প্রবাহিত হয়, এমনও আছে, যা বিদীর্ণ হয়, অত:পর তা থেকে পানি নির্গত হয় এবং এমনও আছে, যা আল্লাহ্র ভয়ে খসেপড়তে থাকে! আল্লাহ্ তোমাদের কাজকর্ম স¤পর্কে বে-খবর নন।
২.৭৫ ) হে মুসলমানগণ, তোমরা কি আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? তাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা আল্লাহ্র বাণী শ্রবণ করত; অত:পর বুঝে-শুনে তা পরিবর্তন করে দিত এবং তারা তা অবগত ছিল।
২.৭৬ ) যখন তারা মুসলমানদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে: আমরা মুসলমান হয়েছি। আর যখন পর¯পরের সাথে নিভৃতে অবস্থান করে, তখন বলে, পালনকর্তা তোমাদের জন্যে যা প্রকাশ করেছেন, তা কি তাদের কাছে বলে দিচছ? তাহলে যে তারা এ নিয়ে পালকর্তার সামনে তোমাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে। তোমরা কি তা উপলব্ধি কর না?
২.৭৭ ) তারা কি এতটুকুও জানে না যে, আল্লাহ্ সেসব বিষয়ও পরিজ্ঞাত যা তারা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে?
২.৭৮ ) তোমাদের কিছু লোক নিরক্ষর। তারা মিথ্যা আকাখা ছাড়া আল্লাহ্র গ্রন্তে’র কিছুই জানে না। তাদের কাছে কল্পনা ছাড়া কিছুই নেই।
২.৭৯ ) অতএব তাদের জন্যে আফসোস! যারা নিজ হাতে গ্রন্ত’ লেখে এবং বলে, এটা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অবতীর্ণ-যাতে এর বিনিময়ে সামান্য অর্থ গ্রহণ করতে পারে। অতএব তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের হাতের লেখার জন্য এবং তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের উপার্জনের জন্যে।
২.৮০ ) তারা বলে: আগুন আমাদিগকে কখনও ¯পর্শ করবে না; কিন্তূ গণাগনতি কয়েকদিন। বলে দিন: তোমরা কি আল্লাহ্র কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার পেয়েছ যে, আল্লাহ্ কখনও তার খেলাফ করবেন না-না তোমরা যা জান না, তা আল্লাহ্র সাথে জুড়ে দিচছ।
২.৮১ ) হাঁ, যে ব্যক্তি পাপ অর্জন করেছে এবং সে পাপ তাকে পরিবেষ্টিত করে নিয়েছে, তারাই দোযখের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে।
২.৮২ ) পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে।
২.৮৩ ) যখন আমি বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আতœীয়-¯¦জন, এতীম ও দীন-দরিদ্রদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, মানুষকে সৎ কথাবার্তা বলবে, নামায প্রতিন্ঠা করবে এবং যাকাত দেবে, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে, তোমরাই অগ্রাহ্যকারী।
২.৮৪ ) যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা পর¯পর খুনাখুনি করবে না এবং নিজেদেরকে দেশ থেকে বহিস্কার করবে না, তখন তোমরা তা ¯¦ীকার করেছিলে এবং তোমরা তার সাক্ষ্য দিচিছলে।
২.৮৫ ) অত:পর তোমরাই পর¯পর খুনাখুনি করছ এবং তোমাদেরই একদলকে তাদের দেশ থেকে বহিস্কার করছ। তাদের বিরুদ্ধে পাপ ও অন্যায়ের মাধ্যমে আক্রমণ করছ। আর যদি তারাই কারও বন্তদী হয়ে তোমাদের কাছে আসে, তবে বিনিময় নিয়ে তাদের মুক্ত করছ। অথচ তাদের বহিস্কার করাও তোমাদের জন্য অবৈধ। তবে কি তোমরা গ্রন্তে’র কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁÍছে দেয়া হবে। আল্লাহ্ তোমাদের কাজ-কর্ম স¤পর্কে বে-খবর নন।
২.৮৬ ) এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করেছে। অতএব এদের শাস্তি লঘু হবে না এবং এরা সাহায্যও পাবে না।
২.৮৭ ) অবশ্যই আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি। এবং তার পরে পর্যায়ক্রমে রসূল পাঠিয়েছি। আমি মরিয়ম তনয় ঈসাকে সু¯পষ্ট মোজেযা দান করেছি এবং পবিত্র রূহের মাধ্যমে তাকে শক্তিদান করেছি। অত:পর যখনই কোন রসূল এমন নির্দেশ নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছে, যা তোমাদের মনে ভাল লাগেনি, তখনই তোমরা অহংকার করেছ। শেষ পর্যন্ত তোমরা একদলকে মিথ্যাবাদী বলেছ এবং একদলকে হত্যা করেছ।
২.৮৮ ) তারা বলে, আমাদের হƒদয় অর্ধাবৃত। এবং তাদের কুফরের কারণে আল্লাহ্ অভিস¤পাত করেছেন। ফলে তারা অল্পই ঈমান আনে।
২.৮৯ ) যখন তাদের কাছে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে কিতাব এসে পৌঁÍছাল, যা সে বিষয়ের সত্যায়ন করে, যা তাদের কাছে রয়েছে এবং তারা পূর্বে করত। অবশেষে যখন তাদের কাছে পৌঁÍছল যাকে তারা চিনে রেখেছিল, তখন তারা তা অ¯¦ীকার করে বসল। অতএব, অ¯¦ীকারকারীদের উপর আল্লাহ্র অভিস¤পাত।
২.৯০ ) যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিক্রি করেছে, তা খুবই মন্তদ; যেহেতু তারা আল্লাহ্ যা নযিল করেছেন, তা অ¯¦ীকার করেছে এই হঠকারিতার দরুন যে, আল্লাহ্ ¯¦ীয় বান্তদাদের মধ্যে যার প্রতি ইচছা অনুগ্রহ নাযিল করেন। অতএব, তারা ক্রোধের উপর ক্রোধ অর্জন করেছে। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
২.৯১ ) যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ্ যা পাঠিয়েছেন তা মেনে নাও, তখন তারা বলে, আমরা মানি যা আমাদের প্রতি অবর্তীণ হয়েছে। সেটি ছাড়া সবগুলোকে তারা অ¯¦ীকার করে। অথচ এ গ্রন্ত’টি সত্য এবং সত্যায়ন করে ঐ গ্রন্তে’র যা তাদের কাছে রয়েছে। বলে দিন, তবে তোমরা ইতিপূর্বে পয়গ¤¦রদের হত্যা করতে কেন যদি তোমরা বিশ্বাসী ছিলে?
২.৯২ ) সু¯পষ্ট মু'জেযাসহ মূসা তোমাদের কাছে এসেছেন। এরপর তার অনুপস্থিতিতে তোমরা গোবৎস বানিয়েছ। বাস্তবিকই তোমরা অত্যাচারী।
২.৯৩ ) আর যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিলাম এবং তুর পর্বতকে তোমাদের উপর তুলে ধরলাম যে, শক্ত করে ধর, আমি যা তোমাদের দিয়েছি আর শোন। তারা বলল, আমরা শুনেছি আর অমান্য করেছি। কুফরের কারণে তাদের অন্তরে গোবৎসপ্রীতি পান করানো হয়েছিল। বলে দিন, তোমরা বিশ্বাসী হলে, তোমাদের সে বিশ্বাস মন্তদ বিষয়াদি শিক্ষা দেয়।
২.৯৪ ) বলে দিন, যদি আখেরাতের বাসস্থান আল্লাহ্র কাছে একমাত্র তোমাদের জন্যই বরাদ্দ হয়ে থাকে-অন্য লোকদের বাদ দিয়ে, তবে মৃত্যু কামনা কর, যদি সত্যবাদী হয়ে থাক।
২.৯৫ ) কসি¥নকালেও তারা মৃত্যু কামনা করবে না ঐসব গোনাহর কারণে, যা তাদের হাত পাঠিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ্ গোনাহ্গারদের স¤পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন।
২.৯৬ ) আপনি তাদেরকে জীবনের প্রতি সবার চাইতে, এমনকি মুশরিকদের চাইতেও অধিক লোভী দেখবেন। তাদের প্রত্যেকে কামনা করে, যেন হাজার বছর আয়ু পায়। অথচ এরূপ আয়ু প্রাপ্তি তাদেরকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আল্লাহ্ দেখেন যা কিছু তারা করে।
২.৯৭ ) আপনি বলে দিন, যে কেউ জিবরাঈলের শত্রু হয়-যেহেতু তিনি আল্লাহ্র আদেশে এ কালাম আপনার অন্তরে নাযিল করেছেন, যা সত্যায়নকারী তাদের স¤মুখস্থ কালামের এবং মুমিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা।
২.৯৮ ) যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তাঁর ফেরেশতা ও রসূলগণ এবং জিবরাঈল ও মিকাঈলের শত্রু হয়, নিশ্চিতই আল্লাহ্ সেসব কাফেরের শত্রু।
২.৯৯ ) আমি আপনার প্রতি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ অবতীর্ণ করেছি। অবাধ্যরা ব্যতীত কেউ এগুলো অ¯¦ীকার করে না।
২.১০০ ) কি আশ্চর্য, যখন তারা কোন অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়, তখন তাদের একদল তা ছুঁড়ে ফেলে, বরং অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।
২.১০১ ) যখন তাদের কাছে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে একজন রসূল আগমন করলেন-যিনি ঐ কিতাবের সত্যায়ন করেন, যা তাদের কাছে রয়েছে, তখন আহলে কেতাবদের একদল আল্লাহ্র গ্রন্ত’কে পশ্চাতে নিক্ষেপ করল-যেন তারা জানেই না।
২.১০২ ) তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফির হয়ো না। অত:পর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ¡ারা ¯¦ামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচেছদ ঘটে। তারা আল্লাহ্র আদেশ ছাড়া তদ্দ¡ারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবল¤¦ন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আতবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্তদ যদি তারা জানত।
২.১০৩ ) যদি তারা ঈমান আনত এবং খোদাভীরু হত, তবে আল্লাহ্র কাছ থেকে উত্তম প্রতিদান পেত। যদি তারা জানত।
২.১০৪ ) হে মুমিন গণ, তোমরা ্ৗÍ৮২১৬;রায়িনা' বলো না-্ৗÍ৮২১৬;উনযুরনা' বল এবং শুনতে থাক। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
২.১০৫ ) আহলে-কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কাফির, তাদের মন:পুত নয় যে, তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক। আল্লাহ্ যাকে ইচছা বিশেষ ভাবে ¯¦ীয় অনুগ্রহ দান করেন। আল্লাহ্ মহান অনুগ্রহদাতা।
২.১০৬ ) আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বি¯মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ্ সব কিছুর উপর শক্তিমান?
২.১০৭ ) তুমি কি জান না যে, আল্লাহ্র জন্যই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের আধিপত্য? আল্লাহ্ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী নেই।
২.১০৮ ) ইতিপূর্বে মূসা (আ:) যেমন জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন, (মুসলমানগন, ) তোমরাও কি তোমাদের রসূলকে তেমনি প্রশ্ন করতে চাও? যে কেউ ঈমানের পরিবর্তে কুফর গ্রহন করে, সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।
২.১০৯ ) আহলে কিতাবদের অনেকেই প্রতিহিংসাবশত: চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদেরকে কোন রকমে কাফির বানিয়ে দেয়। তাদের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর (তারা এটা চায়)। যাক তোমরা আল্লাহ্র নির্দেশ আসা পর্যন্ত তাদের ক্ষমা কর এবং উপেক্ষা কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
২.১১০ ) তোমরা নামায প্রতিন্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্যে পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল্লাহ্র কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ তা প্রত্যক্ষ করেন।
২.১১১ ) ওরা বলে, ইহুদী অথবা খ্রী¯টান ব্যতীত কেউ জান্নাতে যাবে না। এটা ওদের মনের বাসনা। বলে দিন, তোমরা সত্যবাদী হলে, প্রমাণ উপস্থিত কর।
২.১১২ ) হাঁ, যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে সমর্পন করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও বটে তার জন্য তার পালনকর্তার কাছে পুরস্কার বয়েছে। তাদের ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।
২.১১৩ ) ইহুদীরা বলে, খ্রী¯টানরা কোন ভিত্তির উপরেই নয় এবং খ্রী¯টানরা বলে, ইহুদীরা কোন ভিত্তির উপরেই নয়। অথচ ওরা সবাই কিতাব পাঠ করে! এমনিভাবে যারা মূর্খ, তারাও ওদের মতই উক্তি করে। অতএব, আল্লাহ্ কেয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা দেবেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছিল।
২.১১৪ ) যে ব্যাক্তি আল্লাহ্র মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচচারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালেম আর কে? এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত¿স্ত অবস্থায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্চনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে।
২.১১৫ ) পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ্ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।
২.১১৬ ) তারা বলে, আল্লাহ্ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি তো এসব কিছু থেকে পবিত্র, বরং নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তার আজ্ঞাধীন।
২.১১৭ ) তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উদ্ভাবক। যখন তিনি কোন কার্য স¤পাদনের সিন্ধান্ত নেন, তখন সেটিকে একথাই বলেন, ্ৗÍ৮২১৬;হয়ে যাও' তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়।
২.১১৮ ) যারা কিছু জানে না, তারা বলে, আল্লাহ্ আমাদের সঙ্গে কেন কথা বলেন না? অথবা আমাদের কাছে কোন নিদর্শন কেন আসে না? এমনি ভাবে তাদের পূর্বে যারা ছিল তারাও তাদেরই অনুরূপ কথা বলেছে। তাদের অন্তর একই রকম। নিশ্চয় আমি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেছি তাদের জন্যে যারা প্রত্যয়শীল।
২.১১৯ ) নিশ্চয় আমি আপনাকে সত্যধর্মসহ সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছি। আপনি দোযখবাসীদের স¤পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না।
২.১২০ ) ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তূষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ্ প্রদর্শন করেন, তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাখাসমূহের অনুসরণ করেন, ঐ জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁÍছেছে, তবে কেউ আল্লাহ্র কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই।
২.১২১ ) আমি যাদেরকে গ্রন্ত’ দান করেছি, তারা তা যথাযথভাবে পাঠ করে। তারাই তৎপ্রতি বিশ্বাস করে। আর যারা তা অবিশ্বাস করে, তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
২.১২২ ) হে বনী-ইসরাঈল! আমার অনুগ্রহের কথা স¥রণ কর, যা আমি তোমাদের দিয়েছি। আমি তোমাদেরকে বিশ্বাবাসীর উপর শ্রেন্ঠত্ব দান করেছি।
২.১২৩ ) তোমরা ভয় কর সেদিনকে, যে দিন এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি বিন্তদুমাত্র উপকৃত হবে না, কারও কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না, কার ও সুপারিশ ফল্প্রদ হবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত ও হবে না।
২.১২৪ ) যখন ইব্রাহীমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অত:পর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব। তিনি বললেন, আমার বংশধর থেকেও! তিনি বললেন আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌঁÍছাবে না।
২.১২৫ ) যখন আমি কা'বা গৃহকে মানুষের জন্যে স¤িমলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও এবং আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।
২.১২৬ ) যখন ইব্রাহীম বললেন, পরওয়ারদেগার! এ স্থানকে তুমি শান্তিধান কর এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা অল্লাহ্ ও কিয়ামতে বিশ্বাস করে, তাদেরকে ফলের দ্বারা রিযিক দান কর। বললেন: যারা অবিশ্বাস করে, আমি তাদেরও কিছুদিন ফায়দা ভোগ করার সুযোগ দেব, অত:পর তাদেরকে বল্প্রয়োগে দোযখের আযাবে ঠেলে দেবো; সেটা নিকৃষ্ট বাসস্থান।
২.১২৭ ) স¥রণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা'বাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিল: পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।
২.১২৮ ) পরওয়ারদেগার! আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ কর এবং আমাদের বংশধর থেকেও একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর, আমাদের হজ্বের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী। দয়ালু।
২.১২৯ ) হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গ¤¦র প্রেরণ করুণ যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন। এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয় তুমিই পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা।
২.১৩০ ) ইব্রাহীমের ধর্ম থেকে কে মুখ ফেরায়? কিন্তূ সে ব্যক্তি, যে নিজেকে বোকা প্রতিপন্ন করে। নিশ্চয়ই আমি তাকে পৃথিবীতে মনোনীত করেছি এবং সে পরকালে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
২.১৩১ ) স¥রণ কর, যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেন: অনুগত হও। সে বলল: আমি বিশ্বপালকের অনুগত হলাম।
২.১৩২ ) এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না।
২.১৩৩ ) তোমরা কি উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের মৃত্যু নিকটবর্তী হয়? যখন সে সন্তানদের বলল: আমার পর তোমরা কার এবাদত করবে? তারা বললো, আমরা তোমার পিতৃ-পুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্যের এবাদত করব। তিনি একক উপাস্য।
২.১৩৪ ) আমরা সবাই তাঁর আজ্ঞাবহ। তারা ছিল এক সম্প্রদায়-যারা গত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে, তা তাদেরই জন্যে। তারা কি করত, সে স¤পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না।
২.১৩৫ ) তারা বলে, তোমরা ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান হয়ে যাও, তবেই সুপথ পাবে। আপনি বলুন, কখনই নয়; বরং আমরা ইবর্হাীমের ধর্মে আছি যাতে বক্রতা নেই। সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
২.১৩৬ ) তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্র উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা, অন্যান্য নবীকে পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা দান করা হয়েছে, তৎসমুদয়ের উপর। আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না। আমরা তাঁরই আনুগত্যকারী।
২.১৩৭ ) অতএব তারা যদি ঈমান আনে, তোমাদের ঈমান আনার মত, তবে তারা সুপথ পাবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সুতরাং এখন তাদের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
২.১৩৮ ) আমরা আল্লাহ্র রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহ্র রং এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে?আমরা তাঁরই এবাদত করি।
২.১৩৯) আপনি বলে দিন, তোমরা কি আমাদের সাথে আল্লাহ্ স¤পর্কে তর্ক করছ? অথচ তিনিই আমাদের পালনকর্তা এবং তোমাদের ও পালনকর্তা। আমাদের জন্যে আমাদের কর্ম তোমাদের জন্যে তোমাদের কর্ম। এবং আমরা তাঁরই প্রতি একনিন্ঠ।
২.১৪০) অথবা তোমরা কি বলছ যে, নিশ্চয়ই ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব (আ:) ও তাদের সন্তানগন ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান ছিলেন? আপনি বলে দিন, তোমরা বেশী জান, না আল্লাহ্ বেশী জানেন?
২.১৪১) তার চাইতে অত্যাচারী কে, যে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে তার কাছে প্রমাণিত সাক্ষ্যকে গোপন করে? আল্লাহ্ তোমাদের কর্ম স¤পর্কে বেখবর নন। সে সম্প্রদায় অতীত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে, তা তাদের জন্যে এবং তোমরা যা করছ, তা তোমাদের জন্যে। তাদের কর্ম স¤পর্কে তোমাদের জিজ্ঞেস করা হবে না।
২.১৪২) এখন নির্বোধেরা বলবে, কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? আপনি বলুন: পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহ্রই। তিনি যাকে ইচছা সরল পথে চালান।
২.১৪৩) এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্ত’ী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য। আপনি যে কেবলার উপর ছিলেন, তাকে আমি এজন্যই কেবলা করেছিলাম, যাতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, কে রসূলের অনুসারী থাকে আর কে পিঠটান দেয়। নিশ্চিতই এটা কঠোরতর বিষয়, কিন্তূ তাদের জন্যে নয়, যাদেরকে আল্লাহ্ পথপ্রদর্শন করেছেন। আল্লাহ্ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান নষ্ট করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্, মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, করুনাময়।
২.১৪৪ ) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্তদ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ্ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম স¤পর্কে যা তারা করে।
২.১৪৫ ) যদি আপনি আহলে কিতাবদের কাছে সমুদয় নিদর্শন উপস্থাপন করেন, তবুও তারা আপনার কেবলা মেনে নেবে না এবং আপনিও তাদের কেবলা মানেন না। তারাও একে অন্যের কেবলা মানে না। যদি আপনি তাদের বাসনার অনুসরণ করেন, সে জ্ঞানলাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁÍছেছে, তবে নিশ্চয় আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
২.১৪৬ ) আমি যাদেরকে কিতাব দান করেছি, তারা তাকে চেনে, যেমন করে চেনে নিজেদের পুত্রদেরকে। আর নিশ্চয়ই তাদের একটি সম্প্রদায় জেনে শুনে সত্যকে গোপন করে।
২.১৪৭ ) বাস্তব সত্য সেটাই যা তোমার পালনকর্তা বলেন। কাজেই তুমি সন্তিদহান হয়ো না।
২.১৪৮ ) আর সবার জন্যই রয়েছে কেবলা একেক দিকে, যে দিকে সে মুখ করে (এবাদত করবে)। কাজেই সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও। যেখানেই তোমরা থাকবে, আল্লাহ্ অবশ্যই তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।
২.১৪৯ ) আর যে স্থান থেকে তুমি বের হও, নিজের মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফেরাও-নি:সন্তেদহে এটাই হলো তোমার পালনকর্তার প্ক্ষ থেকে নির্ধারিত বাস্তব সত্য। বস্তূত: তোমার পালনকর্তা তোমাদের কার্যকলাপ স¤পর্কে অনবহিত নন।
২.১৫০ ) আর তোমরা যেখান থেকেই বেরিয়ে আস এবং যেখানেই অবস্থান কর, সেদিকেই মুখ ফেরাও, যাতে করে মানুষের জন্য তোমাদের সাথে ঝগড়া করার অবকাশ না থাকে। অবশ্য যারা অবিবেচক, তাদের কথা আলাদা। কাজেই তাদের আপত্তিতে ভীত হয়ো না। আমাকেই ভয় কর। যাতে আমি তোমাদের জন্যে আমার অনুগ্রহ সমূহ পূর্ণ করে দেই এবং তাতে যেন তোমরা সরল্পথ প্রাপ্ত হও।
২.১৫১ ) যেমন, আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল, যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না।
২.১৫২ ) সুতরাং তোমরা আমাকে স¥রণ কর, আমিও তোমাদের স¥রণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।
২.১৫৩ ) হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ্ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।
২.১৫৪ ) আর যারা আল্লাহ্র রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তূ তোমরা তা বুঝ না।
২.১৫৫ ) এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।
২.১৫৬ ) যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহ্র জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।
২.১৫৭ ) তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ্র অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত।
২.১৫৮ ) নি:সন্তেদহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্ তা'আলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা'বা ঘরে হজ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। বরং কেউ যদি ¯ে¦চছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ্ তা'আলার অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন।
২.১৫৯ ) নিশ্চয় যারা গোপন করে, আমি যেসব বিস্তারিত তথ্য এবং হেদায়েতের কথা নাযিল করেছি মানুষের জন্য কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করার পরও; সে সমস্ত লোকের প্রতিই আল্লাহ্র অভিস¤পাত এবং অন্যান্য অভিস¤পাতকারীগণের ও।
২.১৬০ ) তবে যারা তওবা করে এবং বর্ণিত তথ্যাদির সংশোধন করে মানুষের কাছে তা বর্ণনা করে দেয়, সে সমস্ত লোকের তওবা আমি কবুল করি এবং আমি তওবা কবুলকারী পরম দয়ালু।
২.১৬১ ) নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহ্র ফেরেশতাগনের এবং সমগ্র মানুষের লা'নত।
২.১৬২ ) এরা চিরকাল এ লা'নতের মাঝেই থাকবে। তাদের উপর থেকে আযাব কখনও হালকা করা হবে না বরং এরা বিরাম ও পাবে ন্।া
২.১৬৩ ) আর তোমাদের উপাস্য একইমাত্র উপাস্য। তিনি ছাড়া মহা করুণাময় দয়ালু কেউ নেই।
২.১৬৪ ) নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌÍকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ্ তা' আলা আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেছেন, তদ্দ¡ারা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তূ। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে।
২.১৬৫ ) আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহ্র সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহ্র প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তূ যারা আল্লাহ্র প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হ'ত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহ্রই জন্য এবং আল্লাহ্র আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর।
২.১৬৬ ) অনুসৃতরা যখন অনুসরণকারীদের প্রতি অসন্তূষ্ট হয়ে যাবে এবং যখন আযাব প্রত্যক্ষ করবে আর বিচিছন্ন হয়ে যাবে তাদের পার¯পরিক সমস্ত স¤পর্ক।
২.১৬৭ ) এবং অনুসারীরা বলবে, কতইনা ভাল হত, যদি আমাদিগকে পৃথিবীতে ফিরে যাবার সুযোগ দেয়া হত। তাহলে আমরাও তাদের প্রতি তেমনি অসন্তূষ্ট হয়ে যেতাম, যেমন তারা অসন্তূষ্ট হয়েছে আমাদের প্রতি। এভাবেই আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে দেখাবেন তাদের কৃতকর্ম তাদেরকে অনুতপ্ত করার জন্যে। অথচ, তারা কসি¥নকালেও আগুন থেকে বের হতে পারবে না।
২.১৬৮ ) হে মানব মন্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তূ-সামগ্রী ভক্ষন কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নি:সন্তেদহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
২.১৬৯ ) সে তো এ নির্দেশই তোমাদিগকে দেবে যে, তোমরা অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করতে থাক এবং আল্লাহ্র প্রতি এমন সব বিষয়ে মিথ্যারোপ কর যা তোমরা জান না।
২.১৭০ ) আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ্ তা'আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও।
২.১৭১ ) বস্তূত: এহেন কাফেরদের উদাহরণ এমন, যেন কেউ এমন কোন জীবকে আহবান করছে যা কোন কিছুই শোনে না, হাঁক-ডাক আর চিৎকার ছাড়া বধির মুক, এবং অন্ধ। সুতরাং তারা কিছুই বোঝে না।
২.১৭২ ) হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র বস্তূ সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসাবে দান করেছি এবং শুকরিয়া আদায় কর আল্লাহ্র, যদি তোমরা তাঁরই বন্তেদগী কর।
২.১৭৩ ) তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তূ যা আল্লাহ্ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নি:সন্তেদহে আল্লাহ্ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।
২.১৭৪ ) নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ্ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ্ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তূত: তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
২.১৭৫ ) এরাই হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করেছে এবং (খরিদ করেছে) ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা দোযখের উপর কেমন ধৈর্য্যধারণকারী।
২.১৭৬ ) আর এটা এজন্যে যে, আল্লাহ্ নাযিল করেছেন সত্যপূর্ণ কিতাব। আর যারা কেতাবের মাঝে মতবিরোধ সৃষ্টি করেছে নিশ্চয়ই তারা জেদের বশবর্তী হয়ে অনেক দূরে চলে গেছে।
২.১৭৭ ) সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহ্র উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর স¤পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আতœীয়-¯¦জন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিন্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা স¤পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্যধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।
২.১৭৮ ) হ্ েঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। ¯¦াধীন ব্যক্তি ¯¦াধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অত:পর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
২.১৭৯ ) হে বুদ্ধিমানগণ! কেসাসের মধ্যে তোমাদের জন্যে জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার।
২.১৮০ ) তোমাদের কারো যখন মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, সে যদি কিছু ধন-স¤পদ ত্যাগ করে যায়, তবে তার জন্য ওসীয়ত করা বিধিবদ্ধ করা হলো, পিতা-মাতা ও নিকটাতœীয়দের জন্য ইনসাফের সাথে পরহেযগারদের জন্য এ নির্দেশ জরুরী। নিশ্চয় আল্লাহ্ তায়ালা সবকিছু শোনেন ও জানেন।
২.১৮১ ) যদি কেউ ওসীয়ত শোনার পর তাতে কোন রকম পরিবর্তন সাধন করে, তবে যারা পরিবর্তন করে তাদের উপর এর পাপ পতিত হবে।
২.১৮২ ) যদি কেউ ওসীয়তকারীর পক্ষ থেকে আশংকা করে পক্ষপাতিত্বের অথবা কোন অপরাধমূলক সিদ্ধান্তের এবং তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়, তবে তার কোন গোনাহ্ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'আলা ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
২.১৮৩ ) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।
২.১৮৪ ) গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অত:পর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিস্কীনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার।
২.১৮৫ ) রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সু®পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ্ তা'আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা ¯¦ীকার কর।
২.১৮৬ ) আর আমার বান্তদারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তূত: আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নি:সংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।
২.১৮৭ ) রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচছদ এবং তোমরা তাদের পরিচছদ। আল্লাহ্ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আতœপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অত:পর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ্ দান করেছেন, তা আহরন কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরি®কার দেখা যায়। অত:পর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না। এই হলো আল্লাহ্ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ্ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য, যাতে তারা বাঁচতে পারে।
২.১৮৮ ) তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের স¤পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের স¤পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্ত’ায় আতœসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কতৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না।
২.১৮৯ ) তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম। আর পেছনের দিক দিয়ে ঘরে প্রবেশ করার মধ্যে কোন নেকী বা কল্যাণ নেই। অবশ্য নেকী হল আল্লাহকে ভয় করার মধ্যে। আর তোমরা ঘরে প্রবেশ কর দরজা দিয়ে এবং আল্লাহ্কে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা নিজেদের বাসনায় কৃতকার্য হতে পার।
২.১৯০ ) আর লড়াই কর আল্লাহ্র ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সীমালঘনকারীদেরকে পছন্তদ করেন না।
২.১৯১ ) আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তূত: ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি।
২.১৯২ ) আর তারা যদি বিরত থাকে, তাহলে আল্লাহ্ অত্যন্ত দয়ালু।
২.১৯৩ ) আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহ্র দ্বীন প্রতিন্ঠিত হয়। অত:পর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তূ যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)।
২.১৯৪ ) স¤মানিত মাসই স¤মানিত মাসের বদলা। আর স¤মান রক্ষা করারও বদলা রয়েছে। বস্তূত: যারা তোমাদের উপর জবর দস্তি করেছে, তোমরা তাদের উপর জবরদস্তি কর, যেমন জবরদস্তি তারা করেছে তোমাদের উপর। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, যারা পরহেযগার, আল্লাহ্ তাদের সাথে রয়েছেন।
২.১৯৫ ) আর ব্যয় কর আল্লাহ্র পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের স¤মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ্ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।
২.১৯৬ ) আর তোমরা আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ও ওমরাহ পরিপূর্ণ ভাবে পালন কর। যদি তোমরা বাধা প্রাপ্ত হও, তাহলে কোরবানীর জন্য যাকিছু সহজলভ্য, তাই তোমাদের উপর ধার্য। আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মুন্ডন করবে না, যতক্ষণ না কোরবাণী যথাস্থানে পৌঁÍছে যাবে। যারা তোমাদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে কিংবা মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে রোজা করবে কিংবা খয়রাত দেবে অথবা কুরবানী করবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ্জ্ব ও ওমরাহ্ একত্রে একই সাথে পালন করতে চাও, তবে যাকিছু সহজলভ্য, তা দিয়ে কুরবানী করাই তার উপর কর্তব্য। বস্তূত: যারা কোরবানীর পশু পাবে না, তারা হজ্জের দিনগুলোর মধ্যে রোজা রাখবে তিনটি আর সাতটি রোযা রাখবে ফিরে যাবার পর। এভাবে দশটি রোযা পূর্ণ হয়ে যাবে। এ নির্দেশিিট তাদের জন্য, যাদের পরিবার পরিজন মসজিদুল হারামের আশে-পাশে বসবাস করে না। আর আল্লাহ্কে ভয় করতে থাক। সন্তেদহাতীতভাবে জেনো যে, আল্লাহ্র আযাব বড়ই কঠিন।
২.১৯৭ ) হজ্জের কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজ্জের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীও সাথে নিরাভরণ হওয়া জায়েজ নয়। না অশোভন কোন কাজ করা, না ঝাগড়া-বিবাদ করা হজ্জের সেই সময় জায়েজ নয়। আর তোমরা যাকিছু সৎকাজ কর, আল্লাহ্ তো জানেন। আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নি:সন্তেদহে সর্বোত্তম পাথেয় হচেছ আল্লাহ্র ভয়। আর আমাকে ভয় করতে থাক, হে বুদ্ধিমানগন! তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অনে¦ষণ করায় কোন পাপ নেই।
২.১৯৮ ) তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অনে¦ষন করায় কোন পাপ নেই। অত:পর যখন তওয়াফের জন্য ফিরে আসবে আরাফাত থেকে, তখন মাশ্ৗÍ৮২১৬; আরে-হারামের নিকটে আল্লাহকে স¥রণ কর। আর তাঁকে স¥রণ কর তেমনি করে, যেমন তোমাদিগকে হেদায়েত করা হয়েছে। আর নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে তোমরা ছিলে অজ্ঞ।
২.১৯৯ ) অত:পর তওয়াফের জন্যে দ্রুতগতিতে সেখান থেকে ফিরে আস, যেখান থেকে সবাই ফিরে। আর আল্লাহ্র কাছেই মাগফেরাত কামনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাকারী, করুনাময়।
২.২০০ ) আর অত:পর যখন হজ্জ্বের যাবতীয় অনুন্ঠানক্রিয়াদি সমাপ্ত করে সারবে, তখন স¥রণ করবে আল্লাহ্কে, যেমন করে তোমরা স¥রণ করতে নিজেদের বাপ-দাদাদেরকে; বরং তার চেয়েও বেশী স¥রণ করবে। তারপর অনেকে তো বলে যে পরওয়াদেগার! আমাদিগকে দুনিয়াতে দান কর। অথচ তার জন্যে পরকালে কোন অংশ নেই।
২.২০১ ) আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে-হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর।
২.২০২ ) এদেরই জন্য অংশ রয়েছে নিজেদের উপার্জিত স¤পদের। আর আল্লাহ্ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
২.২০৩ ) আর স¥রণ কর আল্লাহ্কে নির্দিষ্ট সংখ্যক কয়েকটি দিনে। অত:পর যে লোক তাড়াহুড়া করে চলে যাবে শুধু দু, দিনের মধ্যে, তার জন্যে কোন পাপ নেই। আর যে লোক থেকে যাবে তাঁর উপর কোন পাপ নেই, অবশ্য যারা ভয় করে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করতে থাক এবং নিশ্চিত জেনে রাখ, তোমরা সবাই তার সামনে সমবেত হবে।
২.২০৪ ) আর এমন কিছু লোক রযেছে যাদের পার্থিব জীবনের কথাবার্তা তোমাকে চমৎকৃত করবে। আর তারা সাক্ষ্য স্থাপন করে আল্লাহ্কে নিজের মনের কথার ব্যাপারে। প্রকৃতপক্ষে তারা কঠিন ঝগড়াটে লোক।
২.২০৫ ) যখন ফিরে যায় তখন চেষ্টা করে যাতে সেখানে অকল্যাণ সৃষ্টি করতে পারে এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণনাশ করতে পারে। আল্লাহ্ ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্তদ করেন না।
২.২০৬ ) আর যখন তাকে বলা হয় যে, আল্লাহকে ভয় কর, তখন তার পাপ তাকে অহঙ্কারে উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং তার জন্যে দোযখই যথেষ্ট। আর নি:সন্তেদহে তা হলো নিকৃষ্টতর ঠিকানা।
২.২০৭ ) আর মানুষের মাঝে এক শ্রেণীর লোক রয়েছে যারা আল্লাহ্র সন্তূষ্টিকল্পে নিজেদের জানের বাজি রাখে। আল্লাহ্ হলেন তাঁর বান্তদাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।
২.২০৮ ) হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
২.২০৯ ) অত:পর তোমাদের মাঝে পরিস্কার নির্দেশ এসে গেছে বলে জানার পরেও যদি তোমরা পদ¯খলিত হও, তাহলে নিশ্চিত জেনে রেখো, আল্লাহ্, পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।
২.২১০ ) তারা কি সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে যে, মেঘের আড়ালে তাদের সামনে আসবেন আল্লাহ্ ও ফেরেশতাগণ ? আর তাতেই সব মীমাংসা হয়ে যাবে। বস্তূত: সবকার্যকলাপই আল্লাহ্র নিকট গিয়ে পৌঁÍছবে।
২.২১১ ) বনী ইসরাঈলদিগকে জিজ্ঞেস কর, তাদেরকে আমি কত ¯পষ্ট নির্দশনাবলী দান করেছি। আর আল্লাহ্র নেয়ামত পৌÍছে যাওয়ার পর যদি কেউ সে নেয়ামতকে পরিবর্তিত করে দেয়, তবে আল্লাহ্র আযাব অতি কঠিন।
২.২১২ ) পার্থিব জীবনের উপর কাফেরদিগকে উ¤মত্ত করে দেয়া হয়েছে। আর তারা ঈমানদারদের প্রতি লক্ষ্য করে হাসাহাসি করে। পক্ষান্তরে যারা পরহেযগার তারা সেই কাফেরদের তুলনায় কেয়ামতের দিন অত্যন্ত উচচমর্যাদায় থাকবে। আর আল্লাহ্ যাকে ইচছা সীমাহীন রুযী দান করেন।
২.২১৩ ) সকল মানুষ একই জাতি সত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অত:পর আল্লাহ্ তা'আলা পয়গ¤¦র পাঠালেন সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকরী হিসাবে। আর তাঁদের সাথে অবর্তীণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। বস্তূত: কিতাবের ব্যাপারে অন্য কেউ মতভেদ করেনি; কিন্তূ পরি®কার নির্দেশ এসে যাবার পর নিজেদের পার¯পরিক জেদবশত: তারাই করেছে, যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছিল। অত:পর আল্লাহ্ ঈমানদারদেরকে হেদায়েত করেছেন সেই সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারে তারা মতভেদ লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ্ যাকে ইচছা, সরল পথ বাতলে দেন।
২.২১৪ ) তোমাদের কি এই ধারণা যে, তোমরা জান্নাতে চলে যাবে, অথচ সে লোকদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট। আর এমনি ভাবে শিহরিত হতে হয়েছে যাতে নবী ও তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে পর্যন্ত একথা বলতে হয়েছে যে, কখন আসবে আল্লাহ্র সাহায্যে! তোমরা শোনে নাও, আল্লাহ্র সাহায্যে একান্তই নিকটবর্তী।
২.২১৫ ) তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও-যে বস্তূই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে পিতা-মাতার জন্যে, আতœীয়-আপনজনের জন্যে, এতীম-অনাথদের জন্যে, অসহায়দের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে। আর তোমরা যে কোন সৎকাজ করবে, নি:সন্তেদহে তা অত্যন্ত ভালভাবেই আল্লাহর জানা রয়েছে।
২.২১৬ ) তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্তদনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্তদসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্তদনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তূত: আল্লাহ্ই জানেন, তোমরা জান না।
২.২১৭ ) স¤মানিত মাস স¤পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দাও এতে যুদ্ধ করা ভীষণ বড় পাপ। আর আল্লাহ্র পথে প্রতিবন্তদ্বকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করা, আল্লাহ্র নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহা পাপ। বস্তূত: তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি সম্ভব হয়। তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হলো দোযখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে।
২.২১৮ ) আর এতে কোন সন্তেদহের অবকাশ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে আর আল্লাহ্র পথে লড়াই (জেহাদ) করেছে, তারা আল্লাহ্র রহমতের প্রত্যাশী। আর আল্লাহ্ হচেছন ক্ষমাকারী করুনাময়।
২.২১৯ ) তারা তোমাকে মদ ও জুয়া স¤পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সু¯পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার।
২.২২০ ) দুনিয়া ও আখেরাতের বিষয়ে। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, এতীম সংক্রান্ত হুকুম। বলে দাও, তাদের কাজ-কর্ম সঠিকভাবে গুছিয়ে দেয়া উত্তম আর যদি তাদের ব্যয়ভার নিজের সাথে মিশিয়ে নাও, তাহলে মনে করবে তারা তোমাদের ভাই । বস্তূত: অমঙ্গলকামী ও মঙ্গলকামীদেরকে আল্লাহ্ জানেন। আল্লাহ্্ যদি ইচছা করতেন, তাহলে তোমাদের উপর জটিলতা আরোপ করতে পারতেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞ।
২.২২১ ) আর তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরেকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরেকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা দোযখের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ্ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
২.২২২ ) আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু) স¤পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্তদ করেন।
২. ২২৩) তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহ্কে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহ্র সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।
২.২২৪ ) আর নিজেদের শপথের জন্য আল্লাহ্র নামকে লক্ষ্যবস্তূ বানিও না মানুষের সাথে কোন আচার আচরণ থেকে পরহেযগারী থেকে এবং মানুষের মাঝে মীমাংসা করে দেয়া থেকে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ্ সবকিছুই শুনেন ও জানেন।
২.২২৫ ) তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য আল্লাহ্ তোমাদেরকে ধরবেন না, কিন্তূ সেসব কসমের ব্যাপারে ধরবেন, তোমাদের মন যার প্রতিজ্ঞা করেছে। আর আল্লাহ্্ হচেছন ক্ষমাকারী ধৈর্যশীল।
২.২২৬ ) যারা নিজেদের স্ত্রীদের নিকট গমন করবেনা বলে কসম খেয়ে বসে তাদের জন্য চার মাসের অবকাশ রয়েছে অত:পর যদি পার¯পরিক মিল-মিশ করে নেয়, তবে আল্লাহ্ ক্ষামাকারী দয়ালু।
২.২২৭ ) আর যদি বর্জন করার সংকল্প করে নেয়, তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ্্ শ্রবণকারী ও জ্ঞানী।
২.২২৮ ) আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহ্র প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ্ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের ¯¦ামীরা সংরক্ষণ করে। আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীরদের ওপর পুরুষদের শ্রেন্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ্ হচেছ পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।
২.২২৯ ) তালাকে-্ৗÍ৮২১৬;রাজঈ' হ'ল দুবার পর্যন্ত তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহƒদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে। আর নিজের দেয়া স¤পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয় তাদের কাছ থেকে। কিন্তূ যে ক্ষেত্রে ¯¦ামী ও স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহ্র নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, অত:পর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহ্র নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তূত: যারা আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঘন করবে, তারাই জালেম।
২.২৩০ ) তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন ¯¦ামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অত:পর যদি দ্বিতীয় ¯¦ামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পর¯পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহ্্র হুকুম বজায় রাখার ইচছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ্্ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।
২.২৩১ ) আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অত:পর তারা নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত করে নেয়, তখন তোমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে রেখে দাও অথবা সহানুভুতির সাথে তাদেরকে মুক্ত করে দাও। আর তোমরা তাদেরকে জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্যে আটকে রেখো না। আর যারা এমন করবে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদেরই ক্ষতি করবে। আর আল্লাহ্র নির্দেশকে হাস্যকর বিষয়ে পরিণত করো না। আল্লাহ্র সে অনুগ্রহের কথা স¥রণ কর, যা তোমাদের উপর রয়েছে এবং তাও স¥রণ কর, যে কিতাব ও জ্ঞানের কথা তোমাদের উপর নাযিল করা হয়েছে যার দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দান করা হয়। আল্লাহ্কে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ্্ সর্ববিষয়েই জ্ঞানময়।
২.২৩২ ) আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও এবং তারপর তারাও নির্ধারিত ইদ্দত পূর্ন করতে থাকে, তখন তাদেরকে পূর্ব ¯¦ামীদের সাথে পার¯পরিক স¤মতির ভিত্তিতে নিয়মানুযায়ী বিয়ে করতে বাধাদান করো না। এ উপদেশ তাকেই দেয়া হচেছ, যে আল্লাহ্ ও কেয়ামত দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে একান্ত পরিশুদ্ধতা ও অনেক পবিত্রতা। আর আল্লাহ্ জানেন, তোমরা জান না।
২.২৩৩ ) আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ন দু'বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়াবার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। আর সন্তানের অধিকারী অর্থাৎ, পিতার উপর হলো সে সমস্ত নারীর খোর-পোষের দায়িত্ব প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী। কাউকে তার সামর্থাতিরিক্ত চাপের স¤মুখীন করা হয় না। আর মাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। এবং যার সন্তান তাকেও তার সন্তানের কারণে ক্ষতির স¤মুখীন করা যাবে না। আর ওয়ারিসদের উপরও দায়িত্ব এই। তারপর যদি পিতা-মাতা ইচছা করে, তাহলে দু'বছরের ভিতরেই নিজেদের পার¯পরিক পরামর্শক্রমে দুধ ছাড়িয়ে দিতে পারে, তাতে তাদের কোন পাপ নেই, আর যদি তোমরা কোন ধাত্রীর দ্বারা নিজের সন্তানদেরকে দুধ খাওয়াতে চাও, তাহলে যদি তোমরা সাব্যস্তকৃত প্রচলিত বিনিময় দিয়ে দাও তাতেও কোন পাপ নেই। আর আল্লাহ্্কে ভয় কর এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ্্ তোমাদের যাবতীয় কাজ অত্যন্ত ভাল করেই দেখেন।
২.২৩৪ ) আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহ্্র অবগতি রয়েছে।
২.২৩৫ ) আর যদি তোমরা আকার ইঙ্গিতে সে নারীর বিয়ের পয়গাম দাও, কিংবা নিজেদের মনে গোপন রাখ, তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই, আল্লাহ্ জানেন যে, তোমরা অবশ্যই সে নারীদের কথা উল্লেখ করবে। কিন্তূ তাদের সাথে বিয়ে করার গোপন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখো না। অবশ্য শরীয়তের নির্ধারিত প্রথা অনুযায়ী কোন কথা সাব্যস্ত করে নেবে। আর নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্তি পর্যায়ে না যাওয়া অবধি বিয়ে করার কোন ইচছা করো না। আর একথা জেনে রেখো যে, তোমাদের মনে যে কথা রয়েছে, আল্লাহ্্র তা জানা আছে। কাজেই তাঁকে ভয় করতে থাক। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ্্ ক্ষমাকারী ও ধৈর্যশীল।
২.২৩৬ ) স্ত্রীদেরকে ¯পর্শ করার আগে এবং কোন মোহর সাব্যস্ত করার পূর্বেও যদি তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই। তবে তাদেরকে কিছু খরচ দেবে। আর সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং কম সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী। যে খরচ প্রচলিত রয়েছে তা সৎকর্মশীলদের উপর দায়িত্ব।
২.২৩৭ ) আর যদি মোহর সাব্যস্ত করার পর ¯পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও, তাহলে যে, মোহর সাব্যস্ত করা হয়েছে তার অর্ধেক দিয়ে দিতে হবে। অবশ্য যদি নারীরা ক্ষমা করে দেয় কিংবা বিয়ের বন্ধন যার অধিকারে সে (অর্থাৎ, ¯¦ামী) যদি ক্ষমা করে দেয় তবে তা ¯¦তন্ত¿ কথা। আর তোমরা পুরুষরা যদি ক্ষমা কর, তবে তা হবে পরহেযগারীর নিকটবর্তী। আর পার¯পরিক সহানুভূতির কথা বি¯মৃত হয়ো না। নিশ্চয় তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ্্ সেসবই অত্যন্ত ভাল করে দেখেন।
২.২৩৮ ) সমস্ত নামাযের প্রতি যতবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর আল্লাহ্র সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও।
২.২৩৯ ) অত:পর যদি তোমাদের কারো ব্যাপারে ভয় থাকে, তাহলে পদচারী অবস্থাতেই পড়ে নাও অথবা সওয়ারীর উপরে। তারপর যখন তোমরা নিরাপত্তা পাবে, তখন আল্লাহ্্কে স¥রণ কর, যেভাবে তোমাদের শেখানো হয়েছে, যা তোমরা ইতিপূর্বে জানতে না।
২.২৪০ ) আর যখন তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে তখন স্ত্রীদের ঘর থেকে বের না করে এক বছর পর্যন্ত তাদের খরচের ব্যাপারে ওসিয়ত করে যাবে। অত:পর যদি সে স্ত্রীরা নিজে থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে সে নারী যদি নিজের ব্যাপারে কোন উত্তম ব্যবস্থা করে, তবে তাতে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই। আর আল্লাহ্ হচেছন পরাক্রমশালী বিজ্ঞতা স¤পন্ন।
২.২৪১ ) আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী খরচ দেয়া পরহেযগারদের উপর কর্তব্য।
২.২৪২ ) এভাবেই আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের জন্য ¯¦ীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা তা বুঝতে পার।
২.২৪৩ ) তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন? অথচ তারা ছিল হাজার হাজার। তারপর আল্লাহ্ তাদেরকে বললেন মরে যাও। তারপর তাদেরকে জীবিত করে দিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্্্ মানুষের উপর অনুগ্রহকারী। কিন্তূ অধিকাংশ লোক শুকরিয়া প্রকাশ করে না।
২.২৪৪ ) আল্লাহ্র পথে লড়াই কর এবং জেনে রাখ, নি:সন্তেদহে আল্লাহ্ সবকিছু জানেন, সবকিছু শুনেন।
২.২৪৫ ) এমন কে আছে যে, আল্লাহ্কে করজ দেবে, উত্তম করজ; অত:পর আল্লাহ্ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিবেন। আল্লাহ্ই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তাঁরই নিকট তোমরা সবাই ফিরে যাবে।
২.২৪৬ ) মূসার পরে তুমি কি বনী ইসরাঈলের একটি দলকে দেখনি, যখন তারা বলেছে নিজেদের নবীর কাছে যে, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ নির্ধারিত করে দিন যাতে আমরা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করতে পারি। নবী বললেন, তোমাদের প্রতিও কি এমন ধারণা করা যায় যে, লড়াইর হুকুম যদি হয়, তাহলে তখন তোমরা লড়বে না? তারা বলল, আমাদের কি হয়েছে যে, আমরা আল্লাহ্র পথে লড়াই করব না। অথচ আমরা বিতাড়িত হয়েছি নিজেদের ঘর-বাড়ী ও সন্তান-সন্ততি থেকে। অত:পর যখন লড়াইয়ের নির্দেশ হলো, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তাদের সবাই ঘুরে দাঁড়ালো। আর আল্লাহ্ তা'আলা জালেমদের ভাল করেই জানেন।
২.২৪৭ ) আর তাদেরকে তাদের নবী বললেন,-নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ সাব্যস্ত করেছেন। তারা বলতে লাগল তা কেমন করে হয় যে, তার শাসন চলবে আমাদের উপর। অথচ রাষ্ট্রক্ষমতা পাওয়ার ক্ষেত্রে তার চেয়ে আমাদেরই অধিকার বেশী। আর সে স¤পদের দিক দিয়েও সচছল নয়। নবী বললেন,-নিশ্চয় আল্লাহ্্ তোমাদের উপর তাকে পছন্তদ করেছেন এবং ¯¦াস্থ্য ও জ্ঞানের দিক দিয়ে প্রাচুর্য দান করেছেন। বস্তূত: আল্লাহ্ তাকেই রাজ্য দান করেন, যাকে ইচছা। আর আল্লাহ্ হলেন অনুগ্রহ দানকারী এবং সব বিষয়ে অবগত।
২.২৪৮ ) বনী-ইসরাঈলদেরকে তাদের নবী আরো বললেন, তালুতের নেতৃত্বের চিহƒ হলো এই যে, তোমাদের কাছে একটা সিন্তদুক আসবে তোমাদের পালকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের মনের সন্তূষ্টির নিমিত্তে। আর তাতে থাকবে মূসা, হারুন এবং তাঁদের সন্তানবর্গের পরিত্যক্ত কিছু সামগ্রী। সিন্তদুকটিকে বয়ে আনবে ফেরেশতারা। তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তাহলে এতে তোমাদের জন্য নিশ্চিতই পরিপূর্ণ নিদর্শন রয়েছে।
২.২৪৯ ) অত:পর তালূত যখন সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বেরুল, তখন বলল, নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদিগকে পরীক্ষা করবেন একটি নদীর মাধ্যমে। সুতরাং যে লোক সেই নদীর পানি পান করবে সে আমার নয়। আর যে, লোক তার ¯¦াদ গ্রহণ করলো না, নিশ্চয়ই সে আমার লোক। কিন্তূ যে লোক হাতের আঁজলা ভরে সামান্য খেয়ে নেবে তার দোষঅবশ্য তেমন গুরুতর হবে না। অত:পর সবাই পান করল সে পানি, সামান্য কয়েকজন ছাড়া। পরে তালুত যখন তা পার হলো এবং তার সাথে ছিল মাত্র কয়েকজন ঈমানদার, তখন তারা বলতে লাগল, আজকের দিনে জালুত এবং তার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই, যাদের ধারণা ছিল যে, আল্লাহ্র সামনে তাদের একদিন উপস্থিত হতে হবে, তারা বার বার বলতে লাগল, সামান্য দলই বিরাট দলের মোকাবেলায় জয়ী হয়েছে আল্লাহ্্র হুকুমে। আর যারা ধৈর্যশীল আল্লাহ্্ তাদের সাথে রয়েছেন।
২.২৫০ ) আর যখন তালুত ও তার সেনাবাহিনী শত্রুর স¤মুখীন হল, তখন বলল, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের মনে ধৈর্য সৃষ্টি করে দাও এবং আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখ-আর আমাদের সাহায্য কর সে কাফের জাতির বিরুদ্ধে।
২.২৫১ ) তারপর ঈমানদাররা আল্লাহ্র হুকুমে জালুতের বাহিনীকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ্ দাউদকে দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ্ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তূ বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ্ একান্তই দয়ালু, করুণাময়।
২.২৫২ ) এগুলো হলো আল্লাহ্র নিদর্শন, যা আমরা তোমাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে থাকি। আর আপনি নিশ্চিতই আমার রসূলগণের অন্তর্ভুক্ত।
২.২৫৩ ) এই রসূলগণ-আমি তাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদা দিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ তো হলো তারা যার সাথে আল্লাহ্ কথা বলেছেন, আর কারও মর্যাদা উচচতর করেছেন এবং আমি মরিয়ম তনয় ঈসাকে প্রকৃষ্ট মু'জেযা দান করেছি এবং তাকে শক্তি দান করেছি ্ৗÍ৮২১৬;রুহূল কুদ্দুস' অর্থৎ জিবরাঈলের মাধ্যমে। আর আল্লাহ্ যদি ইচছা করতেন, তাহলে পরিস্কার নির্দেশ এসে যাবার পর পয়গ¤¦রদের পেছনে যারা ছিল তারা লড়াই করতো না। কিন্তূ তাদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়ে গেছে। অত:পর তাদের কেউ তো ঈমান এনেছে, আর কেউ হয়েছে কাফের। আর আল্লাহ্ যদি ইচছা করতেন, তাহলে তারা পর¯পর লড়াই করতো, কিন্তূ আল্লাহ্ তাই করেন, যা তিনি ইচছা করেন।
২.২৫৪ ) হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম।
২.২৫৫ ) আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্তদ্রাও ¯পর্শ করতে পারে না এবং নি™্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তূ যতটুকু তিনি ইচছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচচ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
২.২৫৬ ) দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নি:সন্তেদহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী ্ৗÍ৮২১৬;তাগুত'দেরকে মানবে না এবং আল্লাহ্তে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংবার নয়। আর আল্লাহ্ সবই শুনেন এবং জানেন।
২.২৫৭ ) যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ্ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচেছ তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।
২.২৫৮ ) তুমি কি সে লোককে দেখনি, যে পালনকর্তার ব্যাপারে বাদানুবাদ করেছিল ইব্রাহীমের সাথে এ কারণে যে, আল্লাহ্ সে ব্যাক্তিকে রাজ্য দান করেছিলেন? ইব্রাহীম যখন বললেন, আমার পালনকর্তা হলেন তিনি, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমি জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি। ইব্রাহীম বললেন, নিশ্চয়ই তিনি সুর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে এবার তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর। তখন সে কাফের হতভ¤¦ হয়ে গেল। আর আল্লাহ্ সীমালংঘণকারী সম্প্রদায়কে সরল পথ প্রদর্শন করেন না।
২.২৫৯ ) তুমি কি সে লোককে দেখনি যে এমন এক জনপদ দিয়ে যাচিছল যার বাড়ীঘরগুলো ভেঙ্গে ছাদের উপর পড়ে ছিল? বলল, কেমন করে আল্লাহ্ মরনের পর একে জীবিত করবেন? অত:পর আল্লাহ্ তাকে মৃত অবস্থায় রাখলেন একশ বছর। তারপর তাকে উঠালেন। বললেন, কত কাল এভাবে ছিলে? বলল আমি ছিলাম, একদিন কংবা একদিনের কিছু কম সময়। বললেন, তা নয়; বরং তুমি তো একশ বছর ছিলে। এবার চেয়ে দেখ নিজের খাবার ও পানীয়ের দিকে-সেগুলো পচে যায় নি এবং দেখ নিজের গাধাটির দিকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বানাতে চেয়েছি। আর হাড়গুলোর দিকে চেয়ে দেখ যে, আমি এগুলোকে কেমন করে জুড়ে দেই এবং সেগুলোর উপর মাংসের আবরণ পরিয়ে দেই। অত:পর যখন তার উপর এ অবস্থা প্রকাশিত হল, তখন বলে উঠল-আমি জানি, নি:সন্তেদহে আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।
২.২৬০ ) আর স¥রণ কর, যখন ইব্রাহীম বলল, হে আমার পালনকর্তা আমাকে দেখাও, কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত করবে। বললেন; তুমি কি বিশ্বাস কর না? বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করি, কিন্তূ দেখতে এজন্যে চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি। বললেন, তাহলে চারটি পাখী ধরে নাও। পরে সেগুলোকে নিজের পোষ মানিয়ে নাও, অত:পর সেগুলোর দেহের একেকটি অংশ বিভিন্ন পাহাড়ের উপর রেখে দাও। তারপর সেগুলোকে ডাক; তোমার নিকট দৌÍড়ে চলে আসবে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, অতি জ্ঞান স¤প›¥।
২.২৬১ ) যারা আল্লাহ্র রাস্তায় ¯¦ীয় ধন স¤পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ্ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।
২৩.২৬২ ) যারা ¯¦ীয় ধন স¤পদ আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না।
২.২৬৩ ) নম্র কথা বলে দেয়া এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা ঐ দান খয়রাত অপেক্ষা উত্তম, যার পরে কষ্ট দেয়া হয়। আল্লাহ্ তায়ালা স¤পদশালী, সহিঞ্চু।
২.২৬৪ ) হে ঈমানদারগণ!তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-স¤পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অত:পর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে স¤পূর্ণ পরি®কার করে দিল। তারা ঐ বস্তূর কোন সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ্ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।
২.২৬৫ ) যারা আল্লাহ্র রাস্তায় ¯¦ীয় ধন-স¤পদ ব্যয় করে আল্লাহ্র সন্তূষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজের মনকে সুদৃঢ় করার জন্যে তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মত, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অত:পর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত নাও হয়, তবে হাল্কা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ্ তোমাদের কাজকর্ম যথার্থই প্রত্যক্ষ করেন।
২.২৬৬ ) তোমাদের কেউ পছন্তদ করে যে, তার একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান হবে, এর তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হবে, আর এতে সর্বপ্রকার ফল-ফসল থাকবে এবং সে বার্ধক্যে পৌÍছবে, তার দুর্বল সন্তান সন্ততিও থাকবে, এমতাবস্থায় এ বাগানের একটি ঘূর্ণিবায়ু আসবে, যাতে আগুন রয়েছে, অনন্তর বাগানটি ভ®মীভূত হয়ে যাবে? এমনিভাবে আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের জন্যে নিদর্শনসমূহ বর্ননা করেন-যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা কর।
২.২৬৭ ) হে ঈমানদারগণ! তোমরা ¯¦ীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্যে ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তূ ব্যয় কর এবং তা থেকে নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে মনস্থ করো না। কেননা, তা তোমরা কখনও গ্রহণ করবে না; তবে যদি তোমরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নাও। জেনে রেখো, আল্লাহ্ অভাব মুক্ত, প্রশংসিত।
২.২৬৮ ) শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশী অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ।
২.২৬৯ ) তিনি যাকে ইচছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন এবং যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়, সে প্রভুত কল্যাণকর বস্তূ প্রাপ্ত হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানবান।
২.২৭০ ) তোমরা যে খয়রাত বা সদ্ব্যয় কর কিংবা কোন মানত কর, আল্লাহ্ নিশ্চয়ই সেসব কিছুই জানেন। অন্যায়কারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।
২.২৭১ ) যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতইনা উত্তম। আর যদি খয়রাত গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্যে আরও উত্তম। আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন। আল্লাহ্ তোমাদের কাজ কর্মের খুব খবর রাখেন।
২.২৭২ ) তাদেরকে সৎপথে আনার দায় তোমার নয়। বরং আল্লাহ্ যাকে ইচছা সৎপথে পরিচালিত করেন। যে মাল তোমরা ব্যয় কর, তা নিজ উপাকারার্থেই কর। আল্লাহ্র সন্তূষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করো না। তোমরা যে, অর্থ ব্যয় করবে, তার পুরস্কার পুরোপুরি পেয়ে যাবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না।
২.২৭৩ ) খয়রাত ঐ সকল গরীব লোকের জন্যে যারা আল্লাহ্র পথে আবদ্ধ হয়ে গেছে-জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র ঘোরাফেরা করতে সক্ষম নয়। অজ্ঞ লোকেরা যাঞ্চা না করার কারণে তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তোমরা তাদেরকে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনবে। তারা মানুষের কাছে কাকুতি-মিনতি করে ভিক্ষা চায় না। তোমরা যে অর্থ ব্যয় করবে, তা আল্লাহ্ তা'আলা অবশ্যই পরিজ্ঞাত।
২.২৭৪ ) যারা ¯¦ীয় ধন-স¤পদ ব্যয় করে, রাত্রে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের জন্যে তাদের সওয়াব রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের কোন আশংঙ্কা নেই এবং তারা চিন্তিত ও হবে না।
২.২৭৫ ) যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে: ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা'হ্ তা'আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অত:পর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহ্র উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।
২.২৭৬ ) আল্লাহ্ তা'আলা সুদকে নিশ্চিহƒ করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ্ পছন্তদ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।
২.২৭৭ ) নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামায প্রতিন্ঠিত করেছে এবং যাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুর®কার তাদের পালনকর্তার কছে রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা দু:খিত হবে না।
২.২৭৮ ) হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।
২.২৭৯ ) অত:পর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তূত হয়ে যাও। কিন্তূ যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।
২.২৮০ ) যদি খাতক অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তাকে সচছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও, তবে তা খুবই উত্তম যদি তোমরা উপলব্ধি কর।
২.২৮১ ) ঐ দিনকে ভয় কর, যে দিন তোমরা আল্লাহ্র কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। অত:পর প্রত্যেকেই তার কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোন রূপ অবিচার করা হবে না।
২.২৮২ ) হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ঋনের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দেবে; লেখক লিখতে অ¯¦ীকার করবে না। আল্লাহ্ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া। এবং ঋন গ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দেয় এবং সে যেন ¯¦ীয় পালনকর্তা আল্লাহ্কে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্তদুমাত্রও বেশ কম না করে। অত:পর ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ হয় কিংবা দূর্বল হয় অথবা নিজে লেখার বিষয়বস্তূ বলে দিতে অক্ষম হয়, তবে তার অভিভাবক ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখাবে। দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্যে থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা। ঐ সাক্ষীদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্তদ কর যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স¥রণ করিয়ে দেয়। যখন ডাকা হয়, তখন সাক্ষীদের অ¯¦ীকার করা উচিত নয়। তোমরা এটা লিখতে অলসতা করোনা, তা ছোট হোক কিংবা বড়, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এ লিপিবদ্ধ করণ আল্লাহ্র কাছে সুবিচারকে অধিক কায়েম রাখে, সাক্ষ্যকে অধিক সুসংহত রাখে এবং তোমাদের সন্তেদহে পতিত না হওয়ার পক্ষে অধিক উপযুক্ত। কিন্তূ যদি কারবার নগদ হয়, পর¯পর হাতে হাতে আদান-প্রদান কর, তবে তা না লিখলে তোমাদের প্রতি কোন অভিযোগ নেই। তোমরা ক্র
২.২৮৩ ) আর তোমরা যদি প্রবাসে থাক এবং কোন লেখক না পাও তবে বন্ধকী বন্তূ হস্তগত রাখা উচিত। যদি একে অন্যকে বিশ্বাস করে, তবে যাকে বিশ্বাস করা হয়, তার উচিত অন্যের প্রাপ্য পরিশোধ করা এবং ¯¦ীয় পালনকর্তা আল্লাহ্কে ভয় কর! তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে কেউ তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে। তোমরা যা করা, আল্লাহ্ সে স¤পর্কে খুব জ্ঞাত।
২.২৮৪ ) যা কিছু আকাশসমূহে রয়েছে এবং যা কিছু যমীনে আছে, সব আল্লাহ্রই। যদি তোমরা মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর, আল্লাহ্ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। অত:পর যাকে ইচছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচছা তিনি শাস্তি দেবেন। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।
২.২৮৫ ) রসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় স¤পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহ্র প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্ত’সমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গ¤¦রগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গ¤¦রদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
২.২৮৬ ) আল্লাহ্ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেননা, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দ¦ায়িত্ব অর্পন করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পন করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদের ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভূ। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর।

No comments:

Post a Comment