Thursday, March 19, 2015

বাই'আতের প্রক্রিয়া

বাই'আতের প্রক্রিয়া

(নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি বিশ্বখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেম শাইখ আতা ইবনু খলীল আল-রাশতা কর্তৃক লিখিত 
‘আজহিজাতু দাওলিাতিল খিলাফাহ - ফিল হুকমি ওয়াল ইদারাহ’ বইটির বাংলা অনুবাদ এর একাংশ হতে গৃহীত)


পূর্বের আলোচনায় আমরা খলীফা নিয়োগের ক্ষেত্রে বাই'আত-ই যে একমাত্র ইসলাম সম্মত প্রক্রিয়া সে ব্যাপারে দলীলপ্রমাণ 
উপস্থাপন করেছি। বাস্তবে বাই'আত প্রদান প্রক্রিয়াটি হাতে হাত মিলানো কিংবা লেখার মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারে।


আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে দীনার থেকে বর্ণিত আছে যে, "যখন জনসাধারণ আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানকে খলীফা নির্বাচনের বিষয়ে
 সম্মত হল তখন আমি ইবনে উমরকে এটি লিখতে দেখেছি যে, 'আমি এই মর্মে লিখছি যে, আল্লাহ্‌'র কিতাব,


রাসূলের (সাঃ) সুন্নাহ এবং আমার সাধ্যনুসারে আমি আমীর উল মু'মিনীন আবদুল মালিকের নির্দেশ শুনতে ও মানতে রাজী
 আছি।" অন্য যে উপায়েও বাই'আত দেয়া যেতে পারে।


তবে, কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্করাই বাই'আত দিতে পারবে। কারণ, অপ্রাপ্তবয়স্কদের বাই'আত গ্রহণযোগ্য নয়। আবু আকীল 
জাহ্‌রাহ ইবনে মা'বাদ তাঁর দাদা আবদুল্লাহ বিন হিশাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যিনি (ইবনে হিশাম) রাসূল (সাঃ) এর
 সময় জীবিত ছিলেন; তাঁর মা যয়নাব ইবনাতু হামিদ তাঁকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, 'হে 
আল্লাহ্‌'র রাসূল! তাঁর কাছ থেকে বাই'আত গ্রহণ করুন।' তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, 'সে তো ছোট'। অতঃপর
তিনি আবদুল্লাহ ইবনে হিশামের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং দোয়া করলেন। (সহীহ্‌ বুখারী, হাদীস নং-৭২১০) 


বাই'আতে উচ্চারিত শব্দ সমূহের ব্যাপারে কোন সীমাবদ্ধতা নেই; তবে খলীফা যে আল্লাহ্‌'র কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাহ্‌ দ্বারা 
শাসন করবেন এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি থাকা উচিত এবং যে ব্যক্তি বাই'আত দেবে সে যে সুসময়ে ও দুঃসময়ে এবং ভাল-মন্দ 
উভয় অবস্থাতেই খলীফার আনুগত্য করবে তাও উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। উপরে উল্লেখিত বিষয়বস্তু অনুসারে বাই'আতে 
উচ্চারিত শব্দসমূহের ব্যাপারে পরবর্তীতে একটি আইন পাশ করা হবে।


কোন ব্যক্তি যখন খলীফাকে বাই'আত দেবে তখন প্রদত্ত বাই'আত উক্ত ব্যক্তির উপর আমানত হয়ে যাবে এবং সে চাইলেই 
এ বাই'আত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবে না। কারণ, খলীফা নিয়োগের ক্ষেত্রে বাই'আত প্রদান পর্যন্ত অন্যসব মুসলিমদের 
মতোই এটি তার অধিকার। কিন্তু, একবার বাই'আত প্রদান করলে সেখান থেকে হাত উঠিয়ে নেবার কোন অধিকার তার 
নেই। এমনকি সে চাইলেও তাকে অনুমতি দেয়া হবে না। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে আল বুখারী বর্ণনা করেছেন 
যে, একজন বেদুইন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) কে ইসলামের ব্যাপারে বাই'আত দিল। কিন্তু তারপর সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। 
এরপর সে রাসূল (সাঃ) এর কাছে গিয়ে বলল, 


"আমাকে বাই'আত থেকে মুক্ত করে দিন।' তিনি (সাঃ) তা করতে অস্বীকৃতি জানালেন। তারপর ঐ ব্যক্তি আবার আসল 
এবং একই দাবি করল কিন্তু রাসূল (সাঃ) আবারও তাকে প্রত্যাখান করলেন। তারপর সে ব্যক্তি শহর ছেড়ে চলে গেল। 
[এ পরিপ্রেক্ষিতে] রাসূল (সাঃ) বললেন, "এই শহর হচ্ছে কামারের জ্বলন্ত চুল্লীর মতো; এটি অপবিত্রতা ও অপরিচ্ছন্নতা 
থেকে নিজেকে মুক্ত করে এবং সেইসাথে, শ্বাশত সুন্দর ও সত্যকে আলোকদ্যুতির মতো বিচ্ছুরিত করে।" (সহীহ্‌ বুখারী, 
হাদীস নং-৭২০৯) 


এছাড়া, আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমরের বরাত দিয়ে মুসলিম নাফিঈ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (ইবন উমর (রা) রাসূল (সাঃ)
 কে বলতে শুনেছেন,


'যে ব্যক্তি আনুগত্যের হাত সরিয়ে নিল, সে কিয়ামতের দিন এমনভাবে আল্লাহ্‌'র সাথে দেখা করবে যে তার পক্ষে
কোন প্রমাণ থাকবে না।'(সহীহ্‌ মুসলিম, হাদীস নং-১৮৫১) 


বস্তুতঃ খলীফার বাই'আত থেকে হাত উঠিয়ে নেবার অর্থ হল আল্লাহ্‌'র আনুগত্য থেকে হাত সরিয়ে নেয়া। তবে, 
এটি শুধুমাত্র সে অবস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যখন খলীফাকে নিযুক্তির বাই'আত দেয়া হবে কিংবা মুসলিম উম্মাহ্‌ 
খলীফাকে পূর্ণ আনুগত্যের শপথ প্রদান করবে। তবে, কেউ যদি কোন ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে খলীফা হিসাবে মনোনীত 
করে বাই'আত দেয়, কিন্তু উক্ত মনোনীত ব্যক্তি যদি মুসলিম উম্মাহ্‌ কর্তৃক নিযুক্তির বাই'আত না পায়, তবে এক্ষেত্রে 
বাই'আত দানকারী ব্যক্তি তার প্রদত্ত বাই'আত থেকে হাত সরিয়ে নিতে পারবে। কারণ, সে মুসলিম উম্মাহ্‌ কর্তৃক 
নিযুক্তির বাই'আত প্রাপ্ত হয়নি। মূলতঃ উপরোক্ত হাদীসটি (চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত) খলীফার আনুগত্য থেকে হাত 
সরিয়ে নেবার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে; এমন ব্যক্তির উপর থেকে নয় যিনি খলীফা হিসাবে চূড়ান্তভাবে 
নির্বাচিত বা নিযুক্ত হননি।

No comments:

Post a Comment