ইসলামের দাওয়াত - পর্ব ৭
(নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি প্রখ্যাত আলেম শাইখ আহমাদ মাহমুদ কর্তৃক লিখিত ‘Dawah to Islam’ বইটির বাংলা অনুবাদের একটি অংশ হতে গৃহীত)
তরীকাহ (পদ্ধতি) ও উসলূব (ধরন)
এখানে একটি প্রশ্নও সামনে চলে আসে, রাসূল (সা) তাঁর দাওয়াতী কাজ পরিচালনার জন্য মক্কায় যেসব কথা বলেছিলেন এবং যেসব কাজ করেছিলেন তার সবই কি ছিল আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তরফ থেকে ওহী - যেগুলোর আনুগত্য করা আমাদের জন্য ফরয? নাকি এখানে এমন কিছু কথা এবং কাজও রয়েছে যেগুলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার তরফ থেকে ওহী হিসেবে আসেনি বলে সেগুলোর আনুগত্য করা আমাদের জন্য ফরয নয়?
এই প্রেক্ষাপট থেকেই এখন আমরা তরীকাহ (পদ্ধতি), উসলূব (ধরন) ও ওয়াসিলা (উপকরণ) নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করতে যাচ্ছি।
এখানে অন্য একটি প্রশ্নও সামনে চলে আসে: কোনো শরঈ তরীকাহ নিয়ে পরীক্ষা (experiment) করার পরে এর যথার্থতার ব্যাপারে মতামত দেওয়া কি যুক্তিসঙ্গত? বিষয়টি কি এমন যে পরীক্ষার পরে যদি দেখা যায় যে এর মাধ্যমে কাক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে তাহলে তা সঠিক, অন্যথায় ভুল।
এবার প্রথম বিষয়ের আলোচনায় আসি:
প্রথম প্রশ্নের জবাব হচ্ছে: রাসূল (সা) যা কিছু বলেছেন বা করেছেন তার সব কিছুকেই অনুসরণ করতে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) মুসলিমদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেন:
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى ~ إِنْ هُوَ إِلا وَحْيٌ يُوحَى
"তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কিছু বলেননা। এটি ওহী যা প্রত্যাদেশ হয়।" [৫৩:৩-৪]
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
"রাসূল তোমাদেরকে যা কিছু (মা) দেন তা গ্রহণ কর এবং যা কিছু (মা) নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক" [৫৯:৭]
এখানে 'মা' শব্দটি সাধারণ অর্থে (সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ রাসূল (সা) আমাদের জন্য কোন কিছু নিয়ে এসেছেন কিন্তু তা আমাদের পালন করা লাগবে না এমন কিছুই নেই; যতক্ষণ না শরী'য়াহ কোন ব্যতিক্রম নির্দেশ করে।
নির্দিষ্ট রকমের কিছু কথা এবং কাজের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে যেসব ক্ষেত্রে রাসূল (সা) কে অনুসরণ না করলেও চলে বলে প্রমাণ রয়েছে। যেমন:
রাসূল (সা) এর একটি হাদীস:
أَنْتُمْ أَعْلَمُ بِأُمُورِ دُنْياكُمْ
"দুনিয়ার ব্যাপারে তোমরা আমার চাইতে অধিক জ্ঞানী"
বিভিন্ন পার্থিব বিষয় যেমন কৃষি, শিল্প, উদ্ভাবন, চিকিৎসা বা প্রকৌশলবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে ওহী আসেনি। অতএব এ সমস্ত বিষয়ে তিনি আমাদের মতই একজন মানুষ এবং এক্ষেত্রে তাঁকে ভিন্ন চোখে দেখার কোন অবকাশ নেই। খেজুর গাছের পরাগায়ন সম্পর্কিত তাঁর ঘটনাটির মধ্য দিয়েই বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়।
কিছু কাজ কেবলমাত্র তাঁর জন্যই নির্দিষ্ট বলে প্রমাণিত যেগুলো অন্য কেউ পালন করতে পারবে না। যেমন তাহাজ্জুদের সালাত আদায় রাসূল (সা) এর উপর ফরয হওয়া, রাতের বেলায়ও তাঁর জন্য সিয়াম (রোজা - সাওমে উইসাল) চালিয়ে যাবার অনুমতি থাকা অথবা একসাথে চারের অধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি থাকা। এ বিষয়গুলো অন্যান্য বিষয় থেকে আলাদা যেগুলো কেবলমাত্র তাঁর জন্যই নির্দিষ্ট। অতএব এ সমস্ত বিষয়ে তাঁর অনুসরণ করা জায়েয না।
যেসব কাজ রাসূল (সা) স্বাভাবিক মানবীয় আচরণ হিসেবে সম্পাদন করতেন যেমন: উঠা-বসা, হাঁটা-চলা, পানাহার করা প্রভৃতি বিষয় তাঁর এবং উম্মাহর জন্য মুবাহ (অনুমোদিত)-এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।
বিভিন্ন শরঈ হুকুম বাস্তবায়নের জন্য রাসূল (সা) উপযুক্ত ধরন (উসলূব) এবং উপকরণ (ওয়াসীলা) ব্যবহার করতেন। শরঈ হুকুম হচ্ছে আল্লাহর হুকুম যা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু এই শরঈ হুকুম কিভাবে অর্থাৎ কোন ধরন এবং উপকরণের সাহায্যে বাস্তবায়ন করতে হবে তা একজন মানুষ হিসেবে রাসূল (সা) এর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়; যাতে সে ধরন (style) এবং উপকরণ (means) বাস্তবসম্মত হয় এবং কোন হারামের দিকে পরিচালিত না করে।
উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা যখন বলেন:
فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ
"অতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের পরোয়া করবেন না।" [১৫:৯৪] তখন তা একটি শরঈ হুকুম যা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু কিভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে সে বিষয়টিকে শরী'য়াহ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করেনি। আল্লাহর সুবহানাহু ওয়া তা'আলার হুকুমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রাসূল (সা) প্রকাশ্যে ঘোষণার কাজটি সম্পাদন করেছিলেন, কারণ এই হুকুমের বিরুদ্ধে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু যে উপায়ে তিনি (সা) প্রকাশ্যে ঘোষণার কাজটি সম্পাদন করেছিলেন সেটা তাঁর জন্য বাধ্যতামূলক ছিলনা। অতএব ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাসূল (সা) কে অনুসরণকারী দলের জন্যও এই কাজটি বাধ্যতামূলক নয়। রাসূল (সা) সাফা পাহাড়ের উপরে উঠেছিলেন, লোকজনকে খাবারের দাওয়াত দিয়েছিলেন, মুসলিমদেরকে সাথে নিয়ে দুটো সারিতে করে কাবা প্রদক্ষিণ করেছিলেন-এগুলো ছিল মূলত শরঈ হুকুম বাস্তবায়নের সাথে সম্পর্কিত কিছু ধরন অর্থাৎ এগুলো ছিল প্রকৃত (আসল) হুকুম 'প্রকাশ্যে ঘোষণা দানের'র সাথে সম্পর্কিত কিছু সহায়ক কাজ। নীতিগতভাবে এ জাতীয় ধরনসমূহ অনুমোদিত। বিষয়টিকে শরী'য়াহ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত না করে দলের হাতে ছেড়ে দিয়েছে যাতে তারা সবচেয়ে উপযুক্ত ধরনসমূহকে বেছে নিতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা যখন বলেন:
وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ
"আর প্রস্তুত করো তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যা কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যের মধ্য থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে যাতে আল্লাহ এবং তোমাদের শত্রুদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করতে পার...।" [৮:৬০] তখন প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য তাঁর এই নির্দেশ হচ্ছে একটি শরঈ হুকুম যার আনুগত্য করতে হবে অর্থাৎ বিষয়টি হচ্ছে ফরয এবং এর বিরুদ্ধে যাওয়া হারাম। এই আয়াতে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার ইল্লাহ (শরঈ কারণ) হচ্ছে শত্রুদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলা। কিন্তু উপকরণের (ঘোড়া) বিষয়টি এখানে বাধ্যতামূলক নয়। যেকোনো উপকরণ যা এই উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে সেটাই এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। জিহাদের জন্য উপযুক্ত উপকরণ যুগের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে এসেছে। এজন্য শরঈ হুকুম বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপকরণ বেছে নিতে হবে। জিহাদের জন্য বা আল্লাহর শত্রু এবং মুনাফিকদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলার জন্য বর্তমান সময়ে প্রয়োজন হচ্ছে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের (শরীয়ার নির্ধারিত সীমার মধ্যে)। অতএব শরঈ হুকুম হচ্ছে আল্লাহর হুকুম অর্থাৎ নির্দিষ্ট বিষয়টিতে আল্লাহর সরাসরি মন্তব্য রয়েছে বলে এটিই হচেছ প্রকৃত (আসল) হুকুম। আর ধরন (উসলূব) হচ্ছে প্রকৃত (আসল) হুকুমকে বাস্তবায়নের সাথে সম্পর্কিত আংশিক (partial) হুকুম। এ বিষয়টি হচ্ছে মুবাহ এবং উপযুক্ত ধরনকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উপকরণ (ওয়াসিলা) হচ্ছে সেই বস্তু যার সাহায্যে শরঈ হুকুম বাস্তবায়ন করা হয়। নীতিগতভাবে বিষয়টি মুবাহ (অনুমোদিত) এবং উপযুক্ত উপকরণ বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
অতএব উপরোক্ত ব্যতিক্রমসমূহ এবং এ জাতীয় অন্যান্য বিষয় ছাড়া মতাদর্শ বা শরঈ হুকুম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত অন্য যেকোনো বিষয় যা রাসূল (সা) এর সাথে সম্পর্কিত সেটা মক্কায় নাযিল হোক অথবা মদীনায়, সেটা আক্বীদার সাথে সম্পর্কিত হোক অথবা ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত সবকিছুকেই ওহী হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং এগুলোকে তা'আসসী (অনুসরণীয়) বিষয় হিসেবে মেনে নিতে হবে।
যদি কেউ রাসূল (সা) এর মক্কী জীবনের দাওয়াতকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে তাহলে দেখতে পাবে তিনি শরঈ হুকুম হিসেবে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করেছিলেন যেগুলোকে বর্তমানে বাদ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই বরং এগুলোকে অবশ্যই আদায় করতে হবে। অনুরুপভাবে তিনি (সা) এমন অনেক কাজ করেছেন যেগুলোকে ধরনের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য করা যায়। পাশাপাশি তিনি (সা) শরঈ হুকুম বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন উপযুক্ত উপকরণও ব্যবহার করেছেন। অতএব কোন বিষয়গুলো পদ্ধতি (তরীকাহ) এবং কোন বিষয়গুলো ধরন (উসলূব) বা উপকরণ (ওয়াসিলা)- এ দু'ধরণের বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য বোঝা প্রয়োজন, যাতে দল বুঝতে পারে কোন বিষয়টি তাকে আবশ্যই পালন করতে হবে এবং কোন বিষয়টি তার সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পুরো পদ্ধতিকে (তরীকাহ) ধরন হিসেবে গণ্য করার কোন সুযোগ নেই যার ফলে মনে হবে পরিস্থিতির আলোকে দল যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কারণ এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির ফলে পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত শরঈ হুকুমকে তাচ্ছিল্য করা হবে এবং শরঈ হুকুমকে মনগড়া কার্যক্রম দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হবে। বিষয়টিকে আরো ভালভাবে পরিষ্কার করার জন্য নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন: "অতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয়" [১৫:৯৪] প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়ার জন্য এটি আল্লাহর তরফ থেকে রাসূল (সা) এর প্রতি একটি নির্দেশ। এই নির্দেশটি দুটো শরঈ হুকুমকে উপস্থাপন করছে। প্রথমটি হচ্ছে এই আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রকাশ্য দাওয়াতের অনুপস্থিতি এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে এই আয়াত নাযিল হওয়ার সাথে সাথে প্রকাশ্য দাওয়াতের সূচনা। প্রকাশ্যে দাওয়াতের ঘোষণা দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়টিকে রাসূল (সা) এর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়নি। বরং প্রকাশ্যে দাওয়াতের ঘোষণা দেওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম মান্য করা ছিল রাসূল (সা) এর জন্য বাধ্যতামূলক। এটিই হচ্ছে শরঈ হুকুম, যাকে শরীয়াহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। এই কাজটি করার সিদ্ধান্ত রাসূল (সা) তাঁর নিজস্ব ইচ্ছার কারণে গ্রহণ করেননি, অতএব এই কাজের অনুসরণ করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার এই কথা "যা আপনাকে আদেশ করা হয়" এর মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে বিষয়টি আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّوا أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُوا الصَّلاةَ
"তুমি কি সেসব লোককে দেখনি, যাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তোমরা নিজেদের হাতকে সংযত রাখ (যুদ্ধ করা থেকে) এবং সালাত কায়েম কর..." [৪:৭৭]
আবার কাফিরদের দুর্ব্যবহারের জবাবে অস্ত্রের মাধ্যমে তাদের মোকাবেলা করার অনুমতি প্রার্থনা করলে আবদুর রহমান বিন আল-আওফ (রা) কে রাসূল (সা) বলেন:
أِنِّي أُمِرْتُ بِالْعَفْو، فَلا تُقَاتِلُوا الْقَوْم
"প্রকৃতপক্ষে আমি ক্ষমার জন্য আদিষ্ট অতএব তোমরা লোকজনের সাথে যুদ্ধ করোনা।" [ইবনে আবি হাতিম, আন-নাসাঈ এবং আল-হাকিম থেকে বর্ণিত] পরবর্তীতে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের সময় আল্লাহর তরফ থেকে ওহী হয়;
أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ
"যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফিররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে (মুমিনদেরকে) সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম।" [২২:৩৯]
উপরোক্ত দলীলগুলো থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে প্রথমে যুদ্ধের অনুমতি ছিলনা, কিন্তু পরবর্তীতে তা দেওয়া হয়; যেহেতু এই অনুমতি আল্লাহর তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে, সেহেতু এটি একটি শরঈ হুকুম যার আনুগত্য করা আবশ্যক। স্বেচ্ছায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে রাসূল (সা) সশস্ত্র পন্থা অবলম্বন করা থেকে বিরত ছিলেন-বিষয়টি এরকম কিছু ছিলনা বরং বিষয়টি ছিল ওহীর মাধ্যমে নির্ধারিত যার আনুগত্য করা ছিল অবশ্য কর্তব্য। রাসূল (সা) যেভাবে একাজ করা থেকে বিরত ছিলেন ঠিক তেমনিভাবে তাঁর অনুসরণে নিজেদেরকে বিরত রাখাটা আমাদের জন্যও বাধ্যতামূলক।
অনুরূপভাবে রাসূল (সা) যখন বিভিন্ন গোত্রের নিকট নুসরাহ (খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পার্থিব সাহায্য) খুঁজতে যেতেন তখন তিনি (সা) বলতেন: "হে অমুক এবং অমুক গোত্র, প্রকৃতপক্ষে আমি আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত একজন রাসূল। তিনি তোমাদেরকে আদেশ করছেন যাতে তোমরা তাঁর ইবাদত কর এবং এ ব্যাপারে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না কর, তোমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য যেসব মূর্তির পূজা কর সেগুলোকে পরিত্যাগ কর, আমার উপর তোমরা ঈমান আন এবং আমাকে তোমরা রক্ষা কর (অন্য এক বর্ণনায় 'সমর্থন কর') যাতে আল্লাহ আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তা আমি তোমাদের নিকট পৌঁছে দিতে পারি।" [সীরাতে ইবনে হিশাম]
এই হাদীসের মাধ্যমে রাসূল (সা) পরিষ্কার করে দিচেছন যে বিষয়টি ছিল আল্লাহর তরফ থেকে একটি হুকুম; অর্থাৎ এক্ষেত্রে রাসূল (সা) ওহীর অনুসরণ করছিলেন মাত্র। গোত্রগুলোর কাছ থেকে অসংখ্যবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরও এবং অত্যন্ত রূঢ় ও কর্কশ ব্যবহার পাওয়া সত্ত্বেও নুসরাহ খোঁজার ক্ষেত্রে রাসূল (সা) এর অটল থাকাটাই প্রমাণ করে যে এ বিষয়টি ছিল আল্লাহর তরফ থেকে একটি হুকুম।
এগুলো হচ্ছে পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত শরঈ হুকুমের কিছু উদাহরণ। যেসব উপকরণ এবং ধরনের সাহায্যে শরঈ হুকুম বাস্তবায়ন করা হয় সেগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে অনুসরণ করার ব্যাপারে নীতিগতভাবে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। বরং এক্ষেত্রে শরঈ হুকুম বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত ধরন এবং উপকরণ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমরা স্বাধীন।
অনুরূপভাবে দাওয়াতী কাজের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য রাসূল (সা) মুমিনদেরকে নিয়ে দারুল আরকামে অথবা তাঁদের কারো বাসায় অথবা উপত্যকায় গিয়ে বসতেন এবং তাঁদেরকে ইসলামের শিক্ষা খুব ভালভাবে বুঝাতেন। একটি শরঈ হুকুম হিসেবে আমাদেরকেও অবশ্যই এই দায়িত্বটি পালন করতে হবে এবং এজন্য উপযুক্ত ধরন প্রয়োগ করতে হবে। এ কাজের জন্য উপযুক্ত ধরন হিসেবে একদল লোক অথবা কোন পরিবারকে বেছে নিতে হবে যাতে তাদেরকে ইসলামের সুষ্ঠু শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা যায়। তাদের জন্য সাপ্তাহিক একটি সময় নির্ধারিত করতে হবে এবং সেই নির্দিষ্ট সময়ে পরিবার অথবা দলটির নির্দিষ্ট লোকজনকে একত্রে জড়ো হতে হবে। দাওয়াতী কাজে নিযুক্ত তরুণদের মনে যাতে ইসলামের শিক্ষা সুষ্ঠুভাবে গেঁথে দেওয়া যায় সেজন্য উপযুক্ত ধরন বেছে নিতে হবে। এ সমস্ত বিষয়গুলো নির্ধারণের দায়িত্ব আমাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শরঈ হুকুমের বাস্তবতার আলোকে আমরা এ বিষয়গুলো নির্ধারণ করব যাতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
রাসূল (সা) নিজেকে এবং তাঁর দাওয়াতকে মক্কার বাজারে প্রকাশ্যে উপস্থাপন করতেন। এ কাজটি করার সময় আমাদেরকে উপযুক্ত ধরন বেছে নিতে হবে; যেমন যথার্থ বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে অথবা বিভিন্ন সামাজিক সমাবেশ, উৎসব বা আনন্দ-বেদনার সময় জনগণের কাছে নিজেদের ধ্যান-ধারণাগুলোকে ছড়িয়ে দিতে হবে। বই, ম্যাগাজিন, লিফলেট, ক্যাসেট অথবা সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা যায়-এসমস্ত ধরন বা উপকরণের প্রত্যেকটাই জায়েয।
অনুরূপভাবে রাসূল (সা) যখন নুসরাহ খোঁজার জন্য তায়েফে গিয়েছিলেন তখন তিনি পায়ে হেঁটে গিয়েছিলেন, নাকি ঘোড়ার পিঠে চড়েছিলেন নাকি অন্য কোন উপায় অবলম্বন করেছিলেন সেগুলোর অনুসরণ করাটা আমাদের জন্য আবশ্যক কিছুনা। এ জাতীয় উপকরণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে শরীয়াহ কোন স্পষ্ট নির্দেশনা না দিয়ে বরং আমাদের সিদ্ধান্তের উপর তা ছেড়ে দিয়েছে।
আমাদের জানা আবশ্যক যে রাসূল (সা) এর তরীকাহ ছিল মূলত ওহী দ্বারা নির্ধারিত অনেকগুলো শরঈ হুকমের সমষ্টি যা থেকে চুল পরিমাণ বিচ্যুত হওয়াও তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলনা। শরঈ হুকুমের প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো পরিবর্তিত হয় সেগুলো হল ধরন বা উপকরণ। এ বিষয়গুলোকে নির্ধারণ করা যেমন রাসূল (সা) এর সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, বর্তমানে ঠিক তেমনিভাবে এ বিষয়গুলোকে নির্ধারণ করাটা আমাদের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে দারুল ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা একটি শরঈ হুকুম। এমন অনেক লোক আছে যারা ভাবে যে দারুল ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারটি ধরনের অর্ন্তভুক্ত এবং এজন্য তারা যে কোন ধরনের কাজ করার ব্যাপারে স্বাধীন। উদাহরণস্বরূপ দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে তারা গরীবদেরকে সাহায্য করে, মানুষের আখলাক ঠিক করার কথা বলে, হাসপাতাল বা স্কুল তৈরি করে, ভাল কাজ করার কথা বলে, কেউ শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দেয় আবার কেউ বিদ্যমান শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণের দাবী তোলে। এ সমস্ত কাজের প্রত্যেকটাই হচ্ছে খিলাফত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আল্লাহর সরাসরি নির্দেশনার মাধ্যমে পরিচালিত রাসূল (সা) এর কর্মকাণ্ডের অনুসরণ থেকে সুস্পষ্ট বিচ্যুতি। আল্লাহর হুকুমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রাসূল (সা) যেভাবে প্রকাশ্যে ঘোষণা দানের কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন ঠিক তেমনিভাবে প্রকাশ্যে ঘোষণাদানের কাজ করাটা আমাদের জন্যও ফরয; যদি তা না করি তাহলে আমরা পথভ্রষ্টদের অর্ন্তভূক্ত হব। রাসূল (সা) যেভাবে অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত ছিলেন এবং মুসলিমদেরকে অস্ত্র বহনের অনুমতি দেননি ঠিক তেমনিভাবে আমাদেরকেও তা মেনে চলতে হবে। পরিস্থিতি যদি ভিন্নও হয় তবু আমাদেরকে ঠিক তেমনিভাবে নুসরাহ খুঁজতে হবে যেমনভাবে রাসূল (সা) তা খুঁজেছিলেন। সাধারণভাবে বলা যায় পদ্ধতির ধাপসমূহ যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর রাসূলকে নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন সেগুলো আমাদের জন্যও অপরিবর্তিত থাকবে। সেগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক কাজ করা অথবা সেগুলোর অনুসরণ না করা হবে শরঈ হুকুমের লঙ্ঘন।
তরীকাহ্র ব্যাপারে নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো সুযোগ আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। উদ্দেশ্য কী হবে এবং সেই উদ্দেশ্যে পৌঁছার জন্য তরীকাহ কী হবে - দুটো বিষয়ই শরীয়াহ নির্ধারিত করে দিয়েছে ; অতএব এসব বিষয়ে আনুগত্য করা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো বিকল্প নেই।
পদ্ধতির ধাপসমূহ নিধারণ করার ইখতিয়ার কেবলমাত্র শরঈ দলীলসমূহেরই (কুরআন ও সুন্নাহ) রয়েছে। এ ধাপসমূহ নির্ধারণ করার জন্য আমরা নিজেদের মন, পরিস্থিতি অথবা জনস্বার্থকে বিবেচনা করার অধিকার রাখিনা।
মানুষের খেয়াল-খুশী বা ইচ্ছা-অনিচ্ছা থেকে নয়, বরং শরঈ দলীলসমূহের অর্থ বুঝতে হয় তার ভাষাগত নির্দেশনা থেকে। আমাদের ইচ্ছাগুলোকে শরঈ হুকুমের অনুসরণে সাজাতে হবে; কারণ বাধ্যতামূলকভাবে সেগুলো অনুসরণের মধ্য দিয়েই কেবল আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব।
রাসূল (সা) এর তরীকাহকে বোঝা, এ তরীকাহ নিয়ে তিনি (সা) যেভাবে অগ্রসর হয়েছিলেন, সেই পদ্ধতির পুরো আনুগত্য করা এবং তাঁর কাজের ধাপসমূহকে এবং প্রত্যেকটি ধাপে কৃত কাজগুলোকে সঠিকভাবে আদায় করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক।
দল গঠনের পর্যায়ে রাসূল (সা) বিভিন্ন কাজ সম্পাদন (ব্যক্তিগতভাবে লোকজনের সাথে দেখা করা,তাঁর উপর যারা ঈমান আনতেন তাঁদেরকে গোপনে একত্রে জড়ো করে তাঁদের চিন্তা-চেতনা গঠনের দিকে মনোযোগ দেওয়া) করেছিলেন। এ সমস্ত কাজের ভিত্তিকে (আসল) অনুসরণ করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক; কারণ শরঈ হুকুম হিসেবে তা আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে। পাশাপাশি এ সমস্ত কাজ বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত ধরন এবং উপকরণ আমাদেরকে বেছে নিতে হবে।
একইভাবে জনমত গঠনের পর্যায়ে রাসূল (সা) বিভিন্ন কাজ সম্পাদন (প্রকাশ্যে দাওয়াতের ঘোষণাদান, কুফরী চিন্তা এবং প্রথার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক শতশত আয়াত নাযিল হওয়া, নাম সহকারে অথবা পরোক্ষ বর্ণনার মাধ্যমে কুরাইশ নেতাদেরকে আক্রমণ (মৌখিকভাবে) করা এবং বিভিন্ন গোত্রের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করা) করেছিলেন। এক্ষেত্রেও শরঈ হুকুম হিসেবে এসব কাজের ভিত্তিকে (আসল) অনুসরণ করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমাদেরকে প্রথম পর্যায় অর্থাৎ দল গঠনের পর্যায়ের কর্মকাণ্ডের সাথে আরো নতুন কিছু কর্মকাণ্ড যোগ করতে হবে যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক সংগ্রামের সূচনা করা, ইসলামের ভিত্তিতে উম্মাহর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জোরালো অবস্থান গ্রহণ, ঔপনিবেশিক বা সাম্রাজ্যবাদী কাফির শক্তিসমূহ এবং তাদের আস্থাভাজন দালাল শাসকদের ষড়যন্ত্রগুওলাকে উম্মাহর সামনে তুলে ধরা প্রভৃতি; কারণ রাসূল (সা) ঠিক এরূপই করেছিলেন। এ সমস্ত কর্মকাণ্ড সম্পাদনের জন্য তখন আমরা প্রয়োজনীয় ধরন ও উপকরণ বেছে নিব।
একইভাবে জনমত গঠনের পর্যায়ে রাসূল (সা) বিভিন্ন কাজ সম্পাদন (প্রকাশ্যে দাওয়াতের ঘোষণাদান, কুফরী চিন্তা এবং প্রথার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক শতশত আয়াত নাযিল হওয়া, নাম সহকারে অথবা পরোক্ষ বর্ণনার মাধ্যমে কুরাইশ নেতাদেরকে আক্রমণ (মৌখিকভাবে) করা এবং বিভিন্ন গোত্রের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করা) করেছিলেন। এক্ষেত্রেও শরঈ হুকুম হিসেবে এসব কাজের ভিত্তিকে (আসল) অনুসরণ করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমাদেরকে প্রথম পর্যায় অর্থাৎ দল গঠনের পর্যায়ের কর্মকাণ্ডের সাথে আরো নতুন কিছু কর্মকাণ্ড যোগ করতে হবে; যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক সংগ্রামের সূচনা করা, ইসলামের ভিত্তিতে উম্মাহর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জোরালো অবস্থান গ্রহণ, ঔপনিবেশিক বা সাম্রাজ্যবাদী কাফির শক্তিসমূহ এবং তাদের আস্থাভাজন দালাল শাসকদের ষড়যন্ত্রগুওলাকে উম্মাহর সামনে তুলে ধরা প্রভৃতি; কারণ রাসূল (সা) ঠিক এরূপই করেছিলেন। এ সমস্ত কর্মকাণ্ড সম্পাদনের জন্য তখন আমরা প্রয়োজনীয় ধরন ও উপকরণ বেছে নিব।
প্রকৃতপক্ষে, খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে রাসূল (সা) এর মক্কী জীবনের (শরঈ তরীকাহর) অনুসরণ করতে হবে। রাসূল (সা) যখন তাঁর এই তরীকাহর সূচনা করেছিলেন এবং এই তরীকাহর আলোকে কর্মকাণ্ড শুরু করেছিলেন তখন তিনি অনেক অপমান, দুর্বলতা, সন্ত্রাস এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবুও তিনি দৃঢ় সংকল্পের সাথে অবিরাম কাজ করে গিয়েছিলেন। রাসূল (সা) এর নিকট আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার এর হুকুম আসত এবং তা বাস্তবায়নের জন্য তিনি কঠোর সংগ্রাম করতেন। সেই ব্যক্তি নবীর (সা) সঠিক পথের অনুসরণ থেকে অনেক দূরে সরে যায় যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার এর এই আয়াত সে শুনে - "অতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয়" [১৫:৯৪]; যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর রাসূল (সা) কে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তিনি শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার এর আদেশ অনুযায়ী প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন এবং সেই ব্যক্তি দেখে যে রাসূল (সা) তাঁর নিজের ইচ্ছানুসারে নয় বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার আদেশ অনুযায়ী প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন; তারপরও সে বলে: "এই তরীকাহর অনুসরণ করাটা বাধ্যতামূলক কিছুনা।" যদি এই তরীকাহর অনুসরণ করাটা বাধ্যতামূলক কিছু না-ই হতো তবে রাসূল (সা) কেন সেই অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন যেখানে তিনি (সা) কাফিরদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং তাদের উপাস্য দেব-দেবীদের, তাদের নেতৃবৃন্দের, তাদের প্রথার এবং তাদের চিন্তাসমূহের বিরোধিতা প্রকাশ্যে করেছিলেন যার প্রত্যেকটা বিষয়ই কুরআনের নির্দেশনার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়েছে। অথচ তিনি চাইলে তোষামোদের মাধ্যমে শাসকদের সন্তুষ্ট করতে পারতেন অথবা বিদ্যমান প্রথায় নিজেকে সমর্পণ করতে পারতেন যার ফলে তাদের কাছ থেকে তিনি মর্যাদা লাভ করতে পারতেন। যদি তিনি (সা) তা করতেন তাহলে প্রকৃতপক্ষে তিনি (সা) তাঁর রবের হুকুমের অবাধ্য হতেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কুরআন নাযিল হতো এবং রাসূল (সা) নিজেকে তার মধ্যে সমর্পণ করতেন। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেন;
উপরোক্ত দলীলগুলো থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে প্রথমে যুদ্ধের অনুমতি ছিলনা, কিন্তু পরবর্তীতে তা দেওয়া হয়; যেহেতু এই অনুমতি আল্লাহর তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে, সেহেতু এটি একটি শরঈ হুকুম যার আনুগত্য করা আবশ্যক। স্বেচ্ছায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে রাসূল (সা) সশস্ত্র পন্থা অবলম্বন করা থেকে বিরত ছিলেন-বিষয়টি এরকম কিছু ছিলনা বরং বিষয়টি ছিল ওহীর মাধ্যমে নির্ধারিত যার আনুগত্য করা ছিল অবশ্য কর্তব্য। রাসূল (সা) যেভাবে একাজ করা থেকে বিরত ছিলেন ঠিক তেমনিভাবে তাঁর অনুসরণে নিজেদেরকে বিরত রাখাটা আমাদের জন্যও বাধ্যতামূলক।
অনুরূপভাবে রাসূল (সা) যখন বিভিন্ন গোত্রের নিকট নুসরাহ (খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পার্থিব সাহায্য) খুঁজতে যেতেন তখন তিনি (সা) বলতেন: "হে অমুক এবং অমুক গোত্র, প্রকৃতপক্ষে আমি আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত একজন রাসূল। তিনি তোমাদেরকে আদেশ করছেন যাতে তোমরা তাঁর ইবাদত কর এবং এ ব্যাপারে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না কর, তোমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য যেসব মূর্তির পূজা কর সেগুলোকে পরিত্যাগ কর, আমার উপর তোমরা ঈমান আন এবং আমাকে তোমরা রক্ষা কর (অন্য এক বর্ণনায় 'সমর্থন কর') যাতে আল্লাহ আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তা আমি তোমাদের নিকট পৌঁছে দিতে পারি।" [সীরাতে ইবনে হিশাম]
এই হাদীসের মাধ্যমে রাসূল (সা) পরিষ্কার করে দিচেছন যে বিষয়টি ছিল আল্লাহর তরফ থেকে একটি হুকুম; অর্থাৎ এক্ষেত্রে রাসূল (সা) ওহীর অনুসরণ করছিলেন মাত্র। গোত্রগুলোর কাছ থেকে অসংখ্যবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরও এবং অত্যন্ত রূঢ় ও কর্কশ ব্যবহার পাওয়া সত্ত্বেও নুসরাহ খোঁজার ক্ষেত্রে রাসূল (সা) এর অটল থাকাটাই প্রমাণ করে যে এ বিষয়টি ছিল আল্লাহর তরফ থেকে একটি হুকুম।
এগুলো হচ্ছে পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত শরঈ হুকুমের কিছু উদাহরণ। যেসব উপকরণ এবং ধরনের সাহায্যে শরঈ হুকুম বাস্তবায়ন করা হয় সেগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে অনুসরণ করার ব্যাপারে নীতিগতভাবে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। বরং এক্ষেত্রে শরঈ হুকুম বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত ধরন এবং উপকরণ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমরা স্বাধীন।
অনুরূপভাবে দাওয়াতী কাজের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য রাসূল (সা) মুমিনদেরকে নিয়ে দারুল আরকামে অথবা তাঁদের কারো বাসায় অথবা উপত্যকায় গিয়ে বসতেন এবং তাঁদেরকে ইসলামের শিক্ষা খুব ভালভাবে বুঝাতেন। একটি শরঈ হুকুম হিসেবে আমাদেরকেও অবশ্যই এই দায়িত্বটি পালন করতে হবে এবং এজন্য উপযুক্ত ধরন প্রয়োগ করতে হবে। এ কাজের জন্য উপযুক্ত ধরন হিসেবে একদল লোক অথবা কোন পরিবারকে বেছে নিতে হবে যাতে তাদেরকে ইসলামের সুষ্ঠু শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা যায়। তাদের জন্য সাপ্তাহিক একটি সময় নির্ধারিত করতে হবে এবং সেই নির্দিষ্ট সময়ে পরিবার অথবা দলটির নির্দিষ্ট লোকজনকে একত্রে জড়ো হতে হবে। দাওয়াতী কাজে নিযুক্ত তরুণদের মনে যাতে ইসলামের শিক্ষা সুষ্ঠুভাবে গেঁথে দেওয়া যায় সেজন্য উপযুক্ত ধরন বেছে নিতে হবে। এ সমস্ত বিষয়গুলো নির্ধারণের দায়িত্ব আমাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শরঈ হুকুমের বাস্তবতার আলোকে আমরা এ বিষয়গুলো নির্ধারণ করব যাতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
রাসূল (সা) নিজেকে এবং তাঁর দাওয়াতকে মক্কার বাজারে প্রকাশ্যে উপস্থাপন করতেন। এ কাজটি করার সময় আমাদেরকে উপযুক্ত ধরন বেছে নিতে হবে; যেমন যথার্থ বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে অথবা বিভিন্ন সামাজিক সমাবেশ, উৎসব বা আনন্দ-বেদনার সময় জনগণের কাছে নিজেদের ধ্যান-ধারণাগুলোকে ছড়িয়ে দিতে হবে। বই, ম্যাগাজিন, লিফলেট, ক্যাসেট অথবা সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা যায়-এসমস্ত ধরন বা উপকরণের প্রত্যেকটাই জায়েয।
অনুরূপভাবে রাসূল (সা) যখন নুসরাহ খোঁজার জন্য তায়েফে গিয়েছিলেন তখন তিনি পায়ে হেঁটে গিয়েছিলেন, নাকি ঘোড়ার পিঠে চড়েছিলেন নাকি অন্য কোন উপায় অবলম্বন করেছিলেন সেগুলোর অনুসরণ করাটা আমাদের জন্য আবশ্যক কিছুনা। এ জাতীয় উপকরণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে শরীয়াহ কোন স্পষ্ট নির্দেশনা না দিয়ে বরং আমাদের সিদ্ধান্তের উপর তা ছেড়ে দিয়েছে।
আমাদের জানা আবশ্যক যে রাসূল (সা) এর তরীকাহ ছিল মূলত ওহী দ্বারা নির্ধারিত অনেকগুলো শরঈ হুকমের সমষ্টি যা থেকে চুল পরিমাণ বিচ্যুত হওয়াও তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলনা। শরঈ হুকুমের প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো পরিবর্তিত হয় সেগুলো হল ধরন বা উপকরণ। এ বিষয়গুলোকে নির্ধারণ করা যেমন রাসূল (সা) এর সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, বর্তমানে ঠিক তেমনিভাবে এ বিষয়গুলোকে নির্ধারণ করাটা আমাদের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে দারুল ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা একটি শরঈ হুকুম। এমন অনেক লোক আছে যারা ভাবে যে দারুল ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারটি ধরনের অর্ন্তভুক্ত এবং এজন্য তারা যে কোন ধরনের কাজ করার ব্যাপারে স্বাধীন। উদাহরণস্বরূপ দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে তারা গরীবদেরকে সাহায্য করে, মানুষের আখলাক ঠিক করার কথা বলে, হাসপাতাল বা স্কুল তৈরি করে, ভাল কাজ করার কথা বলে, কেউ শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দেয় আবার কেউ বিদ্যমান শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণের দাবী তোলে। এ সমস্ত কাজের প্রত্যেকটাই হচ্ছে খিলাফত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আল্লাহর সরাসরি নির্দেশনার মাধ্যমে পরিচালিত রাসূল (সা) এর কর্মকাণ্ডের অনুসরণ থেকে সুস্পষ্ট বিচ্যুতি। আল্লাহর হুকুমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রাসূল (সা) যেভাবে প্রকাশ্যে ঘোষণা দানের কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন ঠিক তেমনিভাবে প্রকাশ্যে ঘোষণাদানের কাজ করাটা আমাদের জন্যও ফরয; যদি তা না করি তাহলে আমরা পথভ্রষ্টদের অর্ন্তভূক্ত হব। রাসূল (সা) যেভাবে অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত ছিলেন এবং মুসলিমদেরকে অস্ত্র বহনের অনুমতি দেননি ঠিক তেমনিভাবে আমাদেরকেও তা মেনে চলতে হবে। পরিস্থিতি যদি ভিন্নও হয় তবু আমাদেরকে ঠিক তেমনিভাবে নুসরাহ খুঁজতে হবে যেমনভাবে রাসূল (সা) তা খুঁজেছিলেন। সাধারণভাবে বলা যায় পদ্ধতির ধাপসমূহ যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর রাসূলকে নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন সেগুলো আমাদের জন্যও অপরিবর্তিত থাকবে। সেগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক কাজ করা অথবা সেগুলোর অনুসরণ না করা হবে শরঈ হুকুমের লঙ্ঘন।
তরীকাহ্র ব্যাপারে নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো সুযোগ আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। উদ্দেশ্য কী হবে এবং সেই উদ্দেশ্যে পৌঁছার জন্য তরীকাহ কী হবে - দুটো বিষয়ই শরীয়াহ নির্ধারিত করে দিয়েছে ; অতএব এসব বিষয়ে আনুগত্য করা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো বিকল্প নেই।
পদ্ধতির ধাপসমূহ নিধারণ করার ইখতিয়ার কেবলমাত্র শরঈ দলীলসমূহেরই (কুরআন ও সুন্নাহ) রয়েছে। এ ধাপসমূহ নির্ধারণ করার জন্য আমরা নিজেদের মন, পরিস্থিতি অথবা জনস্বার্থকে বিবেচনা করার অধিকার রাখিনা।
মানুষের খেয়াল-খুশী বা ইচ্ছা-অনিচ্ছা থেকে নয়, বরং শরঈ দলীলসমূহের অর্থ বুঝতে হয় তার ভাষাগত নির্দেশনা থেকে। আমাদের ইচ্ছাগুলোকে শরঈ হুকুমের অনুসরণে সাজাতে হবে; কারণ বাধ্যতামূলকভাবে সেগুলো অনুসরণের মধ্য দিয়েই কেবল আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব।
রাসূল (সা) এর তরীকাহকে বোঝা, এ তরীকাহ নিয়ে তিনি (সা) যেভাবে অগ্রসর হয়েছিলেন, সেই পদ্ধতির পুরো আনুগত্য করা এবং তাঁর কাজের ধাপসমূহকে এবং প্রত্যেকটি ধাপে কৃত কাজগুলোকে সঠিকভাবে আদায় করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক।
দল গঠনের পর্যায়ে রাসূল (সা) বিভিন্ন কাজ সম্পাদন (ব্যক্তিগতভাবে লোকজনের সাথে দেখা করা,তাঁর উপর যারা ঈমান আনতেন তাঁদেরকে গোপনে একত্রে জড়ো করে তাঁদের চিন্তা-চেতনা গঠনের দিকে মনোযোগ দেওয়া) করেছিলেন। এ সমস্ত কাজের ভিত্তিকে (আসল) অনুসরণ করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক; কারণ শরঈ হুকুম হিসেবে তা আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে। পাশাপাশি এ সমস্ত কাজ বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত ধরন এবং উপকরণ আমাদেরকে বেছে নিতে হবে।
একইভাবে জনমত গঠনের পর্যায়ে রাসূল (সা) বিভিন্ন কাজ সম্পাদন (প্রকাশ্যে দাওয়াতের ঘোষণাদান, কুফরী চিন্তা এবং প্রথার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক শতশত আয়াত নাযিল হওয়া, নাম সহকারে অথবা পরোক্ষ বর্ণনার মাধ্যমে কুরাইশ নেতাদেরকে আক্রমণ (মৌখিকভাবে) করা এবং বিভিন্ন গোত্রের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করা) করেছিলেন। এক্ষেত্রেও শরঈ হুকুম হিসেবে এসব কাজের ভিত্তিকে (আসল) অনুসরণ করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমাদেরকে প্রথম পর্যায় অর্থাৎ দল গঠনের পর্যায়ের কর্মকাণ্ডের সাথে আরো নতুন কিছু কর্মকাণ্ড যোগ করতে হবে যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক সংগ্রামের সূচনা করা, ইসলামের ভিত্তিতে উম্মাহর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জোরালো অবস্থান গ্রহণ, ঔপনিবেশিক বা সাম্রাজ্যবাদী কাফির শক্তিসমূহ এবং তাদের আস্থাভাজন দালাল শাসকদের ষড়যন্ত্রগুওলাকে উম্মাহর সামনে তুলে ধরা প্রভৃতি; কারণ রাসূল (সা) ঠিক এরূপই করেছিলেন। এ সমস্ত কর্মকাণ্ড সম্পাদনের জন্য তখন আমরা প্রয়োজনীয় ধরন ও উপকরণ বেছে নিব।
একইভাবে জনমত গঠনের পর্যায়ে রাসূল (সা) বিভিন্ন কাজ সম্পাদন (প্রকাশ্যে দাওয়াতের ঘোষণাদান, কুফরী চিন্তা এবং প্রথার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক শতশত আয়াত নাযিল হওয়া, নাম সহকারে অথবা পরোক্ষ বর্ণনার মাধ্যমে কুরাইশ নেতাদেরকে আক্রমণ (মৌখিকভাবে) করা এবং বিভিন্ন গোত্রের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করা) করেছিলেন। এক্ষেত্রেও শরঈ হুকুম হিসেবে এসব কাজের ভিত্তিকে (আসল) অনুসরণ করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমাদেরকে প্রথম পর্যায় অর্থাৎ দল গঠনের পর্যায়ের কর্মকাণ্ডের সাথে আরো নতুন কিছু কর্মকাণ্ড যোগ করতে হবে; যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক সংগ্রামের সূচনা করা, ইসলামের ভিত্তিতে উম্মাহর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জোরালো অবস্থান গ্রহণ, ঔপনিবেশিক বা সাম্রাজ্যবাদী কাফির শক্তিসমূহ এবং তাদের আস্থাভাজন দালাল শাসকদের ষড়যন্ত্রগুওলাকে উম্মাহর সামনে তুলে ধরা প্রভৃতি; কারণ রাসূল (সা) ঠিক এরূপই করেছিলেন। এ সমস্ত কর্মকাণ্ড সম্পাদনের জন্য তখন আমরা প্রয়োজনীয় ধরন ও উপকরণ বেছে নিব।
প্রকৃতপক্ষে, খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে রাসূল (সা) এর মক্কী জীবনের (শরঈ তরীকাহর) অনুসরণ করতে হবে। রাসূল (সা) যখন তাঁর এই তরীকাহর সূচনা করেছিলেন এবং এই তরীকাহর আলোকে কর্মকাণ্ড শুরু করেছিলেন তখন তিনি অনেক অপমান, দুর্বলতা, সন্ত্রাস এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবুও তিনি দৃঢ় সংকল্পের সাথে অবিরাম কাজ করে গিয়েছিলেন। রাসূল (সা) এর নিকট আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার এর হুকুম আসত এবং তা বাস্তবায়নের জন্য তিনি কঠোর সংগ্রাম করতেন। সেই ব্যক্তি নবীর (সা) সঠিক পথের অনুসরণ থেকে অনেক দূরে সরে যায় যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার এর এই আয়াত সে শুনে - "অতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয়" [১৫:৯৪]; যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর রাসূল (সা) কে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তিনি শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার এর আদেশ অনুযায়ী প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন এবং সেই ব্যক্তি দেখে যে রাসূল (সা) তাঁর নিজের ইচ্ছানুসারে নয় বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার আদেশ অনুযায়ী প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন; তারপরও সে বলে: "এই তরীকাহর অনুসরণ করাটা বাধ্যতামূলক কিছুনা।" যদি এই তরীকাহর অনুসরণ করাটা বাধ্যতামূলক কিছু না-ই হতো তবে রাসূল (সা) কেন সেই অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন যেখানে তিনি (সা) কাফিরদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং তাদের উপাস্য দেব-দেবীদের, তাদের নেতৃবৃন্দের, তাদের প্রথার এবং তাদের চিন্তাসমূহের বিরোধিতা প্রকাশ্যে করেছিলেন যার প্রত্যেকটা বিষয়ই কুরআনের নির্দেশনার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়েছে। অথচ তিনি চাইলে তোষামোদের মাধ্যমে শাসকদের সন্তুষ্ট করতে পারতেন অথবা বিদ্যমান প্রথায় নিজেকে সমর্পণ করতে পারতেন যার ফলে তাদের কাছ থেকে তিনি মর্যাদা লাভ করতে পারতেন। যদি তিনি (সা) তা করতেন তাহলে প্রকৃতপক্ষে তিনি (সা) তাঁর রবের হুকুমের অবাধ্য হতেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কুরআন নাযিল হতো এবং রাসূল (সা) নিজেকে তার মধ্যে সমর্পণ করতেন। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেন;
قُمْ فَأَنْذِرْ
"উঠুন এবং সতর্ক করুন!" [৭৪:২]
তিনি (সা) নেতৃবৃন্দকে আক্রমণ (মৌখিকভাবে) করলেন যা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
তিনি (সা) নেতৃবৃন্দকে আক্রমণ (মৌখিকভাবে) করলেন যা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ
"আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে!" [১১১:১]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে রাসূল (সা) এর পক্ষাবলম্বন করলেন:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে রাসূল (সা) এর পক্ষাবলম্বন করলেন:
مَا أَنْتَ بِنِعْمَةِ رَبِّكَ بِمَجْنُونٍ
"আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহে আপনি পাগল নন।" [৬৮:২]
কুরআনে কাফিরদের মানসিক অবস্থার কথা বর্ণনা করা হয়েছে:
কুরআনে কাফিরদের মানসিক অবস্থার কথা বর্ণনা করা হয়েছে:
وَدُّوا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ
"তারা চায় যদি আপনি নমনীয় হন তবে তারাও নমনীয় হবে।" [৬৮:৯]
তিনি সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন এবং উম্মুল-কুরা অর্থাৎ মক্কা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের লোকজনকে সতর্ক করেন। পাশাপাশি তিনি সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর রাসূল (সা) কে এবং যাঁরা তাঁর (সা) সাথে ছিলেন তাঁদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন দাওয়াতের কাজে অস্ত্র বহন না করতে। আমাদেরকে বুঝতে হবে যে তখন কুরআন নাযিল হচ্ছিল এবং রাসূল (সা) সে অনুযায়ী আমল করছিলেন মাত্র। যে বলে এই তরীকাহর অনুসরণ করাটা বাধ্যতামূলক কিছু না তার জন্য কি এর চেয়ে বেশি প্রমাণের প্রয়োজন আছে?
কেউ যদি বলে এই তরীকাহর অনুসরণ করাটা বাধ্যতামূলক কিছু না বরং ঐচ্ছিক তাহলে তার মানে দাঁড়াবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নাযিলকৃত আয়াতের মাধ্যমে যা কিছু হুকুম করছিলেন রাসূল (সা) সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকভাবে সেসব আয়াতের অবাধ্য হয়েছিলেন। কারণ সেক্ষেত্রে যা কিছু নাযিল হচ্ছিল তিনি তাঁর অনুগত ছিলেন না। অতএব তখন বিষয়টি আমাদের জন্যও ঐচ্ছিক বলে বিবেচিত হবে - যে আমরা কি রাসূল (সা) এর তরীকাহ অনুসরণ করব নাকি অন্য কোন তরীকাহ? প্রকৃতপক্ষে এটি হচ্ছে এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা রাসূল (সা) এর কর্মকাণ্ড এবং তাঁর সমাজ পরিবর্তনের পদ্ধতির সঠিক বুঝ থেকে অনেক দূরে।
বর্তমান যুগে তরীকাহ ও উসলূবের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণে কিছু মুসলিমের ব্যর্থতা
বর্তমানে বিদ্যমান পরিস্থিতি রাসূল (সা) এর সময়কার চেয়ে ভিন্ন- এরূপ একটি ধারণা থেকে কিছু মুসলিমের মনে এ ব্যাপারে সন্দেহ দানা বেধে উঠেছে যে রাসূল (সা)-এর পদ্ধতির হুবহু অনুসরণ কি বর্তমানে প্রযোজ্য? কারণ রাসূল (সা)-এর সময়ে সামাজিক বিভক্তি ছিল আদি প্রকৃতির (গোত্র ও বংশ), কিন্তু বর্তমানে এই বিভক্তি অনেক জটিল ও আন্তঃসম্পর্কিত। একটি গোত্রকে তখন রাষ্ট্রের সমপর্যায়ে বিবেচনা করা হতো এবং এর লোকসংখ্যা ছিল কয়েক হাজার, কিন্তু আজকে একেকটি রাষ্ট্রের লোকসংখ্যা কোটির উপরে। তখন কাফিরদেরকে ঈমানের দাওয়াত দেয়া হতো কিন্তু বর্তমানে ইসলামী জীবনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মূলত মুসলিমদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয়। তখনকার পরাশক্তিগুলো যেমন রোম ও পারস্য মক্কায় রাসূল (সা)-এর দাওয়াতে হস্তক্ষেপ করেনি কিন্তু বর্তমানে পরাশক্তিগুলোর রাজনীতির সঙ্গে অন্যান্য রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ শৃঙ্খলিত অবস্থায় আছে, প্রকৃতপক্ষে তারা বর্তমানে পুতুল হিসেবে আচরণ করছে। বর্তমানে পরাশক্তিগুলোই ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
সুতরাং যারা সন্দেহ পোষণ করে তারা বলে : "রাসূল (সা)-এর তরীকাহ'কে আমরা কীভাবে গ্রহণ করতে পারি যেখানে অনেক বিষয় পরিবর্তিত হয়ে গেছে? এরকম কঠোরতা ও অনমনীয়তা বর্তমানে প্রযোজ্য নয় এবং এর আনুগত্য করতে আমরা বাধ্য নই। বরং যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল দাওয়াতের বৃহত্তর উদ্দেশ্যকে অনুভব করা যা হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামের বাস্তবায়ন এবং আল্লাহর উবুদিয়্যাহ (দাসত্ব)-কে অনুভব করা।"
এ সম্পর্কিত সঠিক আলোচনার ব্যাখ্যায় আমরা বলি, কোনো প্রাসঙ্গিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে শরঈ হুকুম নাযিল হতো যার জন্যই শরঈ হুকুমটি প্রযোজ্য। যখন বাস্তবতা পরিবর্তিত হয় তখন এ সম্পর্কিত শরঈ হুকুমও পরিবর্তিত হয়ে যায়। যদি বাস্তবতা পরিবর্তিত না হয়, তাহলে শরঈ হুকুম পূর্বের অবস্থায়ই বিদ্যমান থাকে। বাস্তবতাকে বুঝতে হলে এর বাহ্যিক রূপ নয় বরং মৌলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
কিছু সাধারণ চিন্তায় (common thoughts) বিশ্বাসী লোকজনের সমষ্টি হচ্ছে সমাজ, যা থেকে এই চিন্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়ের প্রতি গ্রহণ ও অনুমোদনের আবেগ সৃষ্টি হয় এবং এর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়ের প্রতি অসন্তুষ্টি ও ক্রোধের আবেগ সৃষ্টি হয়। এগুলোর উপর ভিত্তি করে তখন একটি ব্যবস্থা গড়ে উঠে, যা এসব চিন্তাকে বাস্তবায়ন করে এবং এদের লঙ্ঘনকে প্রতিরোধ করে। ফলে লোকজন সেখানে এমন একটি জীবন অতিবাহিত করে যার প্রতি তারা সন্তুষ্ট এবং যারা ব্যাপারে তারা দৃঢ় বিশ্বাসী।
সমাজের বাস্তবতা বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। এটি আদিম অথবা জটিল প্রকৃতির হতে পারে, কিন্তু প্রত্যেক সমাজের লোকই কিছু সাধারণ চিন্তা ও আবেগের মাধ্যমে সংগঠিত হয়, যারা এসব চিন্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থা দ্বারা শাসিত হয়- চাই এসব লোক গোত্রের আকারে থাকুক অথবা আধুনিক রাষ্ট্রের আকারে থাকুক এবং লোকসংখ্যা হাজার হাজার থাকুক অথবা কোটি কোটি থাকুক। এসব পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এটি একটি সমাজ, কারণ সমাজ গঠনের মৌলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ এতে বিদ্যমান এবং এগুলো পরিবর্তিত হয়নি।
রাসূল (সা) একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন এবং এটি সম্ভব হয়েছিল ইসলামী চিন্তা, আবেগ ও ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে। তিনি (সা) সেই শরঈ তরীকাহ'র অনুসরণ করেছিলেন যা ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নির্ধারিত। তাঁর (সা) সমস্ত কর্মকাণ্ড এ লক্ষ্যেই পরিচালিত হয়েছিল। মদীনায় তিনি (সা) মুমিনদেরকে একটি সাধারণ ছাঁচে গড়ে তুলেছিলেন যারা সংখ্যার দিক থেকে মদীনার অধিবাসীদের সিংহভাগ হয়ে উঠেছিলেন। তিনি (সা) তাদের মনে ইসলামের মৌলিক চিন্তাগুলোকে প্রোথিত করে দিলেন যা থেকে জন্ম হয় বিভিন্ন আবেগের একটি সুষম মিশ্রণ। যখন তিনি তাদের নিকট হিজরত করলেন এবং ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করলেন তখনই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হল। শুরুতে এর রূপ ছিল সাদামাটা ধরনের এবং পরবর্তীতে তা এমন একটি সমাজে রূপান্তরিত হল যার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রয়োজন দেখা দিল।
এবার তাদের এই দাবীর ব্যাপারে আসা যাক যে, তৎকালীন পরাশক্তিগুলো তাঁর (সা) সময়ে কোনো হস্তক্ষেপ করত না। কিন্তু বর্তমানে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারা হস্তক্ষেপ করে ও প্রতিরোধ করে। এর জবাবে আমরা বলতে চাই, এতে তরীকাহ পরিবর্তিত হয়না বরং তরীকাহ'র বাস্তবায়ন তুলনামূলকভাবে কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে এক্ষেত্রে বিদ্যমান নতুন বাস্তবতার আলোকে যথার্থরূপে অধিকতর প্রশিক্ষণদান ও দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজন। ফলে দলটিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে যাতে পরাশক্তিগুলোর নীতিসমূহ জানা যায় এবং সেসব পরিকল্পনা বোঝা যায় যেগুলো আমাদের বিরুদ্ধে দালাল ও পুতুল শাসকদেরকে দিয়ে তারা বাস্তবায়ন করছে, যাতে সেগুলো আমরা প্রতিহত করতে পারি।
এবার তাদের এই দাবীর ব্যাপারে আসা যাক যে, তারা বলে মক্কায় রাসূল (সা) প্রধানত ঈমান সম্পর্কিত বিষয়াদিতেই ব্যস্ত ছিলেন এবং অল্পকিছু আহকাম নিয়ে কাজ করেছিলেন। এর জবাবে আমরা বলতে চাই অল্পসংখ্যক হলেও বিদ্যমান সমস্ত আহকাম নিয়েই তিনি কাজ করেছিলেন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে আমাদেরকে বিদ্যমান সমস্ত শরঈ আহকাম নিয়েই ভাবতে হবে। উপরন্তু,আমাদেরকে এ বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে যে মক্কায় কাজ ছিল মূলত লোকজনকে ইসলাম গ্রহণের জন্য আহ্বান করা। কিন্তু বর্তমানে দাওয়াত হচ্ছে মুসলিমদের মধ্যে যারা ইসলামী আক্বীদাহ'কে ধারণ করে এবং তাদের জন্য সমস্ত শরঈ আহকাম নাযিল হয়ে গেছে। এখন আল্লাহর সামনে তারা শুধু ঈমান নয় বরং পুরো ইসলামের ব্যাপারেই দায়িত্বশীল। সুতরাং মক্কায় যে লোক মারা গিয়েছিল সে শুধুমাত্র ততটুকুর জন্যই দায়িত্বশীল ছিল, তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইসলামের যতটুকু নাযিল হয়েছিল। কিন্তু এখন যদি কেউ মারা যায় তাহলে আল্লাহ তাকে পুরো ইসলামের জন্যই জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এজন্যই বর্তমানে দাওয়াত হতে হবে পরিপূর্ণ এবং ইসলামী জীবনব্যবস্থার পুনর্জাগরণের জন্য আমাদেরকে আহ্বান করতে হবে কারণ আমরা নতুন কোনো আহ্বানের সূচনা করছিনা অথবা নতুন কোনো দ্বীনের দিকেও ডাকছিনা।
অনুরূপভাবে যদি কেউ বর্তমানে মুসলিমদের বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করে তাহলে দেখতে পাবে যে আজকে সমস্যা এটা নয় যে লোকজনের ইসলামী আক্বীদাহ নেই বরং সম্যষা হচ্ছে জীবনের চিন্তাসমূহ এবং শাসনব্যবস্থার সঙ্গে ইসলামী আক্বীদাহ'র সম্পর্কহীনতা। ফলে আক্বীদাহ তার মাহাত্ম্য হারিয়েছে। আর এসবের মূল কারণ হল মুসলিমদের উপরে পাশ্চত্য চিন্তাসমূহের প্রভাব, সেসব চিন্তা যেগুলোকে পাশ্চাত্যের কুফরী রাষ্ট্রগুলো সংরক্ষণ করে, টিকিয়ে রাখার জন্য এবং আরো প্রসারিত করার জন্য কাজ করে এবং এ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তারা তাদের প্রতি অনুগত শাসকদেরকে ক্ষমতায় বসায়, পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করে এবং মিডিয়া ব্যবহার করে।
সুতরাং, ইসলামকে সঠিকভাবে, পূর্ণাঙ্গরূপে ও স্বয়ংস্পূর্ণ আকারে উপস্থাপন করাটা আমাদের জন্য অপরিহার্য যাতে আমাদের আক্বীদাহ ও ঈমানের তাৎপর্য একটি মৌলিক চিন্তা হিসেবে সামনে আসে যা থেকে আহকাম বের হবে এবং যার উপরে ভিত্তি করে জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারিত হবে; ফলে তখন আমরা এই আক্বীদাহ'র মাধ্যমে জীবনের চিন্তাগুলোকে উপস্থাপন করতে পারব। এই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে সেই সত্যকে প্রচারণার মাধ্যমে যে আল্লাহই হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা ও মুদাব্বির (সমস্তকিছুর পালনকর্তা), বিচার-ফয়সালা করার অধিকার একমাত্র তাঁর এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত বিষয়ই তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। যখন কোনো মুসলিমের নিকট ঈমান ও আহকামগুলোকে অপরিহার্যরূপে উপস্থাপন করা হবে তখন সত্যের শক্তি ও মাহাত্ম্য, ইসলামকে বোঝা ও এর দিকে আহ্বানের ক্ষেত্রে দলটির শক্তি এবং পরিবর্তন সূচিত করার জন্য দলটির যোগ্যতা তার কাছে স্পষ্ট হবে।
এজন্যই বর্তমানে মুসলিমদেরকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে যাতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী জীবনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এই দাওয়াতের ভিত্তি হবে ইসলামী আক্বীদাহ'র রাজনৈতিক দিক এবং এই ভিত্তির দ্বারাই আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ অনুযায়ী সমস্ত কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।
অতএব যা পরিবর্তিত হয়েছে তা হচ্ছে সমাজের বাহ্যিক রূপ। কিন্তু অস্তিত্বের দিক দিয়ে মৌলিকভাবে বিবেচনা করতে গেলে এটি কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়া আগের মতই রয়ে গেছে। সুতরাং, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত কর্মকাণ্ডের হুকুম পরিবর্তিত হয়নি এবং একইভাবে এই লক্ষ্য অর্জনের পদ্ধতিও পরিবর্তিত হয়নি।
শর’ঈ হুকুমসমূহ কী নিরীক্ষামূলক?
দ্বিতীয় প্রশ্নের ক্ষেত্রে:
কিছু লোক আছে যারা ইসলামি রাষ্ট্র বাস্তবায়নের কাজকে নিরীক্ষামূলক হিসেবে নিয়েছে এবং এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিরীক্ষামূলক পরিকল্পনা থেকে উদ্ভুত দাওয়াতের মাধ্যমে এগুবে বলে মনে করে। কিন্তু প্রশ্ন হল এ বিষয়ে এভাবে চূড়ান্ত কিছু বলা কী সমীচীন?
পদ্ধতিকে নিরীক্ষামূলক বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা অপাংক্তেয়। এর অর্থ 'শর'ঈ পদ্ধতি' এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ইসলামে যে কোন কাজের পদ্ধতি শর’ঈ হুকুম দ্বারা স্বীকৃত যা এর দলিলের বিশুদ্ধতার উপর নির্ভর করে। দলটি শরীয়াহ গ্রহণে যেমনি বাধ্য তেমনি এইসব দলিল গ্রহণের ক্ষেত্রেও রয়েছে বাধ্যবাধকতা এবং প্রমাণিত কোন শর’ঈ হুকুম থেকে চ্যুত হওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ তাদের নেই। সুতরাং এটা লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নিরীক্ষামূলক (যদি পরীক্ষামূলকভাবে কার্যসম্পাদনের পর সাফল্য পাওয়া যায় তবে সেটাই পদ্ধতি এবং অন্যথায় অন্য কোন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে) কোন বিষয় নয়।
শরীয় যে কোন হুকুমের ধারক হল শর’ঈ পদ্ধতি-যা ইতোমধ্যে আলোচিত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল লক্ষ্য অর্জন করা। আর তা হল ইসলামি জীবনধারা পূণপ্রবর্তন। এই হুকুম দলিলের শক্তিমত্তার উপর নির্ভর করে। এগুলো গ্রহণ ও আস্থাভাজন থাকবার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার উপাসনা করে থাকে। ঐ ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত এটাকে পরিবর্তন করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য শক্তিশালী দলিল আছে বলে সুনিশ্চিত হওয়া যায়।
একজনকে অবশ্যই শরীয়াগত পদ্ধতিতে রাসূলুল্লাহ (সা) কে অনুসরণ করতে হবে। বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা অনুযায়ী কাজ করা এবং শর’ঈ পদ্ধতিতে কাজ করা কখনওই এক বিষয় নয়। ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা থেকে নেয়া সমাধানে লোকজন যে কোন কাজকে সাফল্য বা ব্যর্থতা অথবা লক্ষ্য অর্জন হওয়া বা না হওয়ার ভিত্তিতে উপলদ্ধি করে থাকে।
গ্রহণের ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা এমন যে, কোনটিই তাদের জন্য চূড়ান্ত সমাধান নয়। এর জন্য প্রয়োজন অবিরত পরিবর্তন ও বিবর্তন। যে কোন পদক্ষেপই তারা গ্রহণ করুক না কেন সেটা নিরীক্ষামূলক। অবশ্য পশ্চিমা সব আইনই নিরীক্ষামূলক। তাদের জন্য একটি পদক্ষেপ সঠিক বা ভুল তা যাচাইয়ের একমাত্র পদ্ধতি হল তা বাস্তবায়নের পর লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য বা বিফলতার উপর। এ বাস্তবতা ইসলামের সাথে এ প্রকৃতির কারণেই সম্পূর্ণরূপে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। ইসলামের পদ্ধতি আল্লাহ প্রদত্ত -যিনি আল আলীম (সবজান্তা) এবং আল খাবীর (সর্বসচেতন)। যতক্ষণ পর্যন্ত শরীয়া দলিলের উপর নির্ভর করে ততক্ষণ পর্যন্ত এটি নির্ভূল ও পূর্ণাঙ্গ। এর নির্ভূলতা উৎসারিত হয় শর’ঈ দলিলের নির্ভূলতা এবং ইসতিদলাল (সংশ্লেষণ) থেকে। কোনক্রমেই ফলাফলের উপর এটি নির্ভরশীল নয়। অতএব দলিলের প্রতি আনুগত্য হচ্ছে ভিওি, যে ভিত্তি থেকে কাজের মূল্যায়ন হয়। কাজের পদ্ধতির ক্ষেত্রে ফলাফল বলতে বুঝায় ক্ষমতা গ্রহণ ও ইসলাম প্রতিষ্ঠা। আর এ বিষয়টি সর্ম্পকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
'তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ্ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না।' (সূরা নূর:৫৫)
'হে বিশ্বাসীগণ। যদি তোমরা আল্লাহ্কে সাহায্য কর, আল্লাহ্ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।' (সূরা মুহাম্মদ:৭)
যদি ফলাফল না পাওয়া যায়, তাহলে একজন কোনক্রমেই এ পদ্ধতিকে অবজ্ঞা করতে পারবে না বা এটিকে অন্য কোন কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না বা এটাকে ব্যর্থ ঘোষণা করতে পারবে না। বরং পদ্ধতির হুকুমটি আরও অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা করে দেখা উচিত। কোন শর’ঈ হুকুমকে পরিত্যাগ করা যাবে না যদি না দলটি বুঝতে পারে তারা হুকুমটি বুঝতে ভুল করেছিল। যদি দলটি ভুল না পায় তাহলে ঐ বিশেষ হুকুমের ব্যাপারে তাদের নিজস্ব মতামতের উপর দৃঢ় থাকতে হবে এবং ততক্ষণ পর্যন্ত সবর করতে হবে যতক্ষণ না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বিজয় দান করেন। অথবা বিষয়টি এমন হতে পারে যা ‘বিজয়ের বিলম্ব’ সুত্রের কারনে প্রলম্বিত হচ্ছে, যা থেকে নবীরা পর্যন্ত রেহাই পাননি। এ সর্ম্পকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
'এমনকি যখন পয়গম্বরগণ নৈরাশ্যে পতিত হয়ে যেতেন, এমনকি এরূপ ধারণা করতে শুরু করতেন যে, তাদের অনুমান বুঝি মিথ্যায় পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌছে।' (সূরা ইউসুফ:১১০)
অবশ্যই এ কাজটি ব্যাপক ক্লান্তিকর ও কষ্টকর ও ব্যাপক প্রচেষ্টা সাপেক্ষ। দলটি যে শাসকদের মুখোমুখি হচ্ছে তার চেয়ে দলটির ক্ষমতা অনেক কম। কাজের সাফল্য কখনওই সময়সাপেক্ষ নয় যে, একটি নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর সাফল্য না আসলে আমরা ধরে নেই যে এটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। বরং এটি চিন্তার পরিশুদ্ধতা, চিন্তাধারণকারীদের দৃঢ়তা এবং জনগনের গ্রহণের সার্বজনীনতার সাথে সর্ম্পকযুক্ত। যখন এই পূর্বশর্তগুলো পূরণ হবে তখন একজন ধরে নিতে পারে যে দলটি রাসূলুল্লাহ (সা) এর মত নুসরাহ অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিজয়ী হবে। এ ব্যাপারে মূল্যায়ন হল যে, বিজয় কেবলমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার পক্ষ থেকে আসে। দলটি মূল্যায়ন করবে হুকুম ও দলিলের শক্তিমত্তার সম্ভাব্যতার ব্যাপারে।
যদি বিজয়ের শর্তসমূহ পূরণ করা যায়, তাহলে এটা আসবে। অন্যথায় এটা প্রলম্বিত হবে। বিজয় আসবার ক্ষেত্রে বিলম্ব বিফলতার নামান্তর নয়। হতে পারে যে, প্রস্তুতি ও তৎপরতার মাত্রা সন্তোষজনক নয় এবং তা বাড়াতে হবে। দল বা দলের শাবাবদের জন্য এ প্রলম্বন একটি পরীক্ষা হতে পারে যে, কেউ কি এ কারণে ভগ্নমনোরথ হয়ে পরিত্যাগ করে প্রতিশ্রুতি থেকে দূরে সরে এসেছে নাকি দৃঢ় থেকেছে? যে কোন পরিস্থিতিতে পূর্ণমূল্যায়ন করতে হবে। যদি পদ্ধতি পরিবর্তন করবার মত কোন যুক্তিসংগত কারণ দলটি খুজে না পায়, তাহলে কেবলমাত্র বিলম্বজনিত কারণে পদ্ধতি পরিবর্তন করা যাবে না। দলটিকে এর ধরন ও উপকরণকে বারংবার পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আর অনুমোদিত এবং সর্বাপেক্ষা কার্যকরী ধরন ও উপকরণকে গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং বিজয়ের বিলম্ব মানে বিফলতা নয়। তাছাড়া এমন কোন শর’ঈ বিধান নেই যে, একটি নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে উদ্দেশ্য হাসিল করতে হবে।
অবশ্যই পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট হুকুম ও চিন্তার সঠিকতার বিষয়টিতে মনোযোগ নিবদ্ধ করতে হবে। এ চিন্তা দিয়েই শাবাব ও উম্মাহ প্রস্তত হবে। যদি দলটি এই চিন্তা ও হুকুমসমূহকে বিশুদ্ধ মনে করে সঠিক ধরন ও উপকরণকে গ্রহণ করে ধৈর্য্যের উপর দৃঢ় থাকে, তাহলে বিলম্বের জন্য চিন্তা ও হুকুম পরিবর্তন অনুমোদিত নয়।
পরিবর্তনের বিষয়টি ব্যক্তি নয় উম্মাহর সাথে সর্ম্পকযুক্ত। একজন ব্যক্তিকে পরিবর্তনের চেয়ে সমাজ পরিবর্তনের কৌশল অনেক জটিল। সুতরাং এর গতি শ্লথ এবং সহজে অনুধাবন করা যায় না। তবে সে অনুধাবন করতে পারে যার রয়েছে দূরদৃষ্টিমূলক চিন্তা এবং সঠিক পৃষ্টপোষকতা। এর অর্থ এই নয় যে, যখন কোন ব্যক্তি লক্ষ্যটাকে মাথায় নিয়ে কাজ করবে তখন তার মনোবৃত্তি এই হবে যে, সে সাফল্য অর্জন করতে পারবে না অথবা সাফল্য অর্জিত হবে ভবিষ্যত প্রজন্মের হাতে। বরং তাদেরকে এই মনোবৃত্তি পোষণ করতে হবে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ও তার সাহাবী (রা) এর মত তাদের হাতেই ইনশাআল্লাহ খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তারা এর সাক্ষী হবে। একজন ব্যক্তির জীবন সংক্ষিপ্ত বা দীর্ঘ হতে পারে। সুতরাং বিজয়ের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন কেবলমাত্র একজন ব্যক্তির জন্য নয় বরং পুরো দলের জন্য। তারা সেই বিশ্বাসীদের দল যাদের পৃথিবীতে ইসতিখলাফ বা সাফল্যের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ কাজের সময় একজন ব্যক্তিবিশেষের মৃত্যু হতে পারে, দলের আমীর মারা যেতে পারেন, কেউ কেউ এ পথ থেকে ছিটকে যেতে পারেন; কিন্তু প্রতিশ্রুতি ততক্ষণ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত দলটি আল্লাহর নির্দেশ পালনে তৎপর থাকবে। বিজয় বিলম্বিত হোক বা না হোক, এ দলের কাছে বিজয়ের বিষয় আসবে। এ বিষয়ের জ্ঞানের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ছাড়া আর কেউ দায়িত্বশীল নয়। কিন্তু দলটি কেবলমাত্র সঠিক পদ্ধতি গ্রহণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল।
সুতরাং কারো বলা ঠিক হবে না শর’ঈ হুকুম এমন একটি নিরীক্ষামূলক বিষয় যে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি অনুভূত না হলে আমরা একে ব্যর্থতা বলে গণ্য করব এবং অন্য একটি নিরীক্ষামূলক পদ্ধতি দ্বারা এটিকে প্রতিস্থাপন করব। যতক্ষণ পর্যন্ত শর’ঈ দলিল দ্বারা পদ্ধতিটি সুপ্রমাণিত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ এ ধরনের কথা বলবার এখতিয়ার রাখেন না। তবে ধরন ও উপকরণের ক্ষেত্রে নিরীক্ষা চালানো সঠিক।
Please note that this is a draft translation. It is likely to go through further edits. So, we would suggest not to spread this widely or publish this anywhere online for the time being.
Link for English translation of the book 'Dawah to Islam'
No comments:
Post a Comment