Friday, March 20, 2015

নাস্তিকদের প্রশ্নের জবাব/ নাস্তিকের যুক্তি খণ্ডন

আল্লাহ যদি সবই পারেন, তাহলে এমন ভারি কিছু কি বানাতে পারবেন, যেটা নিজেই তুলতে পারবেন না?


আমরা জানি, আল্লাহ ইচ্ছা করলে সব কিছু করতে পারেন। তার মানে তিনি ইচ্ছা করলে এমন ভারি কিছু বানাতে পারবেন, যেটা তিনি নিজেই তুলতে পারবেন না। এখন তিনি যদি সেই ভারি জিনিসটাকে তুলতে না পারেন, তার মানে তিনি সবকিছু করতে পারেন না। আর তিনি যদি সব কিছু তুলতে পারেনই, তার মানে তিনি আসলে এমন ভারি কিছু বানাতে পারেন না, যেটা তিনি নিজে তুলতে পারেন না। সুতরাং আল্লাহ বলে কিছু নেই।
এই ধরণের প্রশ্ন ফিলোসফিতে পড়ান হয় যাতে করে ফিলসফির ছাত্র-ছাত্রিদেরকে নাস্তিক বানিয়ে দেওয়া যায়। এই সব শত শত প্রশ্ন নিয়ে বছরের পর বছর চিন্তা করেও শিক্ষার্থীরা কোন উত্তর বের করতে পারে না এবং আসতে আসতে তারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, একসময় নাস্তিক হয়ে যায়। এছাড়াও আপনি নাস্তিকদের বইয়ে এই ধরণের অনেক প্রশ্ন পাবেন, যা দিয়ে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে আসলে কোন সৃষ্টিকর্তা নেই।
এইসব প্রশ্নের সমস্যা হচ্ছে, আপনি এর উত্তর ‘হ্যা’ বলতে পারবেন না, আবার ‘না’ বলতে পারবেন না। দুই দিকেই ফেঁসে যাবেন।
আপনি যদি এই প্রশ্নের উত্তর দেন – হ্যা; তার মানে আল্লাহ নিজেই এমন কিছু বানাতে পারেন, যেটা এতই ভারি যে তিনি নিজেই সেটা তুলতে পারবে না। এর মানে দাঁড়ায় আল্লাহ সর্ব শক্তিমান নন।
আপনি যদি উত্তর দেন – না; তার মানে আল্লাহ এত ভারি কিছু নিজেই বানাতে পারবেন না, যা তিনি নিজেই তুলতে পারেন। তার মানে দাঁড়ায় আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করতে পারেন না।
যারা এধরনের প্রশ্ন করে, তারা আসলে নিজেরাই চিন্তা করে দেখেনি তাদের প্রশ্নটাই কতখানি অবাস্তব। প্রথমত, ভারি মানে কি? ভারি মানে হচ্ছে যার ওজন বেশি। ওজন কি? ওজন হচ্ছে অভিকর্ষ ফলে কোন বস্তু যে টান অনুভব করে। পৃথিবী কোন বস্তুকে যে বল দিয়ে টানে, সেটাকে ওজন বলে। আমরা যখন বলি কোন কিছু অনেক ভারি, তার অর্থ হচ্ছে পৃথিবী সেটাকে অভিকর্ষের ফলে এমন বল দিয়ে টানছে, যা আমাদের সীমিত পেশি শক্তি  আর মাটির উপরে ধরে রাখতে পারছে না। আমরা যখন বলি, “এটাকে উপরে তুলো”, তখন আমরা আসলে বলি সেই জিনিসটাকে শক্তি দিয়ে পৃথিবীর থেকে তার দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দাও।
এখন উপরের প্রশ্নটা কতখানি অবাস্তব সেটা চিন্তা করে দেখুন। প্রথমত, কোন কিছু ভারি হওয়া মানে অন্য কোন কিছু তাকে অভিকর্ষ দিয়ে টানছে। তাহলে আমরা যখন বলছি, “আল্লাহ কি এত ভারিকিছু বানাতে পারবে…”, তার মানে দাঁড়ায় আমরা বলছি, আল্লাহ কি এমন কোন কিছু তৈরি করতে পারবেন, যা তার অসীম ভরের কারণে পৃথিবীকে অসীম বল দিয়ে নিজের দিকে টানবে? মহাবিশ্বে কোন কিছুর ভর অসীম হতে পারে না। বরং কোন কিছুর ভর একটা সীমা পার করলেই সেটা ব্ল্যাকহোল হয়ে যায় এবং আশে পাশের সবকিছু খেয়ে ফেলে। সুতরাং অসীম ভরে যাবার অনেক আগেই সেই বস্তুটা ব্ল্যাকহোল হয়ে যাবে। আল্লাহ যদি পৃথিবীর উপরে থাকা কোন কিছুর ভর বাড়াতে বাড়াতে একটা সীমা অতিক্রম করে ফেলেন তাহলে সেটা ব্ল্যাকহোল হয়ে পৃথিবীকেই খেয়ে ফেলবে। তখন তাকে আর “উপরে তোলার” প্রশ্ন আসবে না।
দ্বিতীয়ত, আমরা যখন বলছি, “…এত ভারি যে আল্লাহ সেটা তুলতেপারবে না?” এখানে “তোলা” মানে কি? কোন কিছু তোলা মানে হচ্ছে পৃথিবীর পৃষ্ঠের সাথে সেই জিনিসটার দূরত্ব বৃদ্ধি করা। এখন কোন কিছুর ভর যদি ক্রমাগত বাড়তে থাকে, তাহলে সেটা এক সময় মাটি ভেদ করে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে ঢুকে যাওয়া শুরু করবে। পৃথিবীর ভেতরে ঢুকে পৃথিবীর সাথে যদি মিশেই যায়, তাহলে তাকে আর তোলা যাবে কি করে? একটা জিনিস তো তখনই তোলা যায় যখন সেটা পৃথিবীর পৃষ্ঠ তলের উপরে থাকে!
এই পর্যায়ে এসে নির্বোধরা যুক্তি দেখানো শুরু করে, “তার মানে কি এই দাঁড়াল না, যে আল্লাহ এমন ভারি কিছু বানাতে পারবে না, যা সে নিজেও তুলতে পারবে না, কারণ কোন কিছু বেশি ভারি হলেই পৃথিবীর ভিতরে ঢুকে যায় এবং এক সময় ব্ল্যাকহোল হয়ে যায়?” উত্তর হচ্ছে – না, এর মানে এই দাঁড়ায় যে মহাবিশ্বের নিয়ম অনুসারে প্রশ্নটা একটা অবাস্তব প্রশ্ন। মহাবিশ্বের নিয়ম অনুসারে এরকম কোন ঘটনা মহাবিশ্বের মধ্যে ঘটতে পারবে না। কোন বস্তুর বেলায় কখনও এরকম কোন ঘটনা ঘটা সম্ভব না। তখন তারা বলবে, “মহাবিশ্বের নিয়ম মানতে হবে কে বলেছে। আল্লাহ কি মহাবিশ্বের নিয়ম ভাঙ্গতে পারে না?”
এখন আলোচ্য প্রশ্নটার ধরনটাই হচ্ছে, “আল্লাহ কি ‘ক’ করতে পারেন, যার ফলে তিনি ‘খ’ করতে পারবেন না, কারণ মহাবিশ্বের নিয়ম অনুসারে ‘ক’ হলে ‘খ’ কখনও হতে পারে না?”
এখানে প্রশ্নটাই হচ্ছে, মহাবিশ্বের নিয়মের মধ্যে থেকে কি আল্লাহ মহাবিশ্বের মধ্যে ‘ক’ করতে পারেন কি না, যার ফলে তিনি কখনও মহাবিশ্বের মধ্যে‘খ’ করতে পারবেন না। যদি মহাবিশ্বের নিয়মের মধ্যে থাকতেই হয় এবং মহাবিশ্বের মধ্যেই কোন ঘটনা ঘটাতে হয়, তাহলে মহাবিশ্বের নিয়মের অনুসারে একটা ঘটনা বাস্তব, না অবাস্তব সেটাও স্বীকার করতে হবে। নিজের সুবিধামত কথা পালটালে তো হবে না। যারা এধরনের কথা বলে তারা আসলে বলছেঃ
“আল্লাহ কি মহাবিশ্বের নিয়ম অনুসরণ করে, মহাবিশ্বের নিয়মের বাইরে কোন কিছু করতে পারে না?”
একই ধরণের আরও প্রশ্ন আপনি পাবেন। যেমনঃ
“আল্লাহ যদি সব কিছু সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে আল্লাহ কি আরেকটা আল্লাহ বানাতে পারবে?”
“আল্লাহ যদি সবকিছু ধ্বংস করতে পারে, তাহলে কি আল্লাহ নিজেকে ধ্বংস করে দিতে পারে?”
এ রকম যত প্রশ্ন পাবেন, তার সবগুলোর ধরন একটাই। যারাই এই ধরনের প্রশ্ন করে, তারা আসলে বোকার মত জিগ্যেস করছেঃ
“সৃষ্টিকর্তা কি এমন কিছু করতে পারে যা সৃষ্টিকর্তার বেলায় প্রযোজ্য নয়, শুধুই সৃষ্টির বেলায় প্রযোজ্য?”
“কাউকে সৃষ্টি না করলে তো সেটা সৃষ্ট হতে পারেনা। তাহলে কি আল্লাহকেও কারও সৃষ্টি করতে হবে না?”
প্রথমত, আল্লাহকে যে বানিয়েছে তাকে কে বানিয়েছে? যে আল্লাহকে বানিয়েছে, তাকে যে বানিয়েছে, তাকেই বা কে বানিয়েছে? এই প্রশ্নের তো কোন শেষ নেই! এটা চলতেই থাকবে।
দ্বিতীয়ত, এই প্রশ্নটা একটা ভুল প্রশ্ন। কারণ সৃষ্টিকর্তা অর্থ ‘যে সৃষ্ট নন বরং যিনি সৃষ্টি করেন।’
সুতরাং কেউ যখন জিজ্ঞেস করে, “সৃষ্টিকর্তাকে কে বানিয়েছে?”, সে আসলে জিজ্ঞেস করছেঃ
“যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি, তাকে কে সৃষ্টি করেছে?”

এধরনের অনেক নির্বোধ প্রশ্ন আপনারা ফিলোসফার এবং নাস্তিকদের কাছ থেকে পাবেন, যারা ভাষার মারপ্যাচ দিয়ে এমন সব প্রশ্ন তৈরি করে, যা পড়ে আপনার মনে হবে – “আসলেই তো! এর উত্তর কি হবে? হায় হায়! আমি কি তাহলে ভুল বিশ্বাস করি?” তাদের আসল সমস্যা হচ্ছে তারা ভাষা এবং বিজ্ঞান ঠিকমত বোঝে না এবং তাদের প্রশ্নগুলো যে ভাষাগত ভাবে ভুল এবং বৈজ্ঞানিকভাবে অবাস্তব, সেটা তারা নিজেরাই ঠিকমত চিন্তা করে দেখেনি। এরা আপনাকে ভাষাগত ভাবে ভুল বাক্য তৈরি করে, বৈজ্ঞানিক ভাবে অবৈজ্ঞানিক একটা প্রশ্ন করে, আপনার কাছে দাবি করবে একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেবার।
এদেরকে জিগ্যেস করুনঃ
“আপনি কি কোন কথা না বলে একটা কথা বলতে পারবেন? যদি তা না পারেন, তাহলে সেটা পেরে তারপর আমার কাছে আসুন।”
এধরনের নির্বোধদেরকে বেশি পাত্তা দিবেন না। পাত্তা না পেয়ে একসময় দেখবেন এদের আর কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা এদেরকে পাত্তা দিয়ে, এদেরকে ফেইসবুকে শেয়ার করে, খবরের কাগজে আর্টিকেল লিখে, টিভিতে লেকচার দিয়ে একটা বিরাট ভুল করি। এরা আমাদের পাত্তা পেয়ে আরও জোরে শোরে তাদের কাজ প্রচার করে যায়। আপনার উচিৎ আল্লাহর নির্দেশ মেনে এদের থেকে দূরে থাকা এবং সবসময় সত্য প্রচার করে যাওয়া, যাতে করে মানুষ চারিদিকে তাদের অসত্য দেখে, শুনে বিভ্রান্ত হয়ে না পড়েঃ
পরম করুণাময়ের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্র ভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলতে আসে, তারা বলে, “সালাম” (২৫:৬৩)

2 comments:

  1. Assalamu'alaikum....

    Bhai copy kore facebook te share korbo 'in shaa ALLAH' . Dnt mind ok.
    www.facebook.com/saju78

    ReplyDelete